মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

৭০৭ কেন্দ্রের ৫৯১টিই ঝুকিঁপূর্ণ

নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের ভোট, নিরাপত্তা জোরদার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম

০২:২৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ০২:৩৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

৮০৪

৭০৭ কেন্দ্রের ৫৯১টিই ঝুকিঁপূর্ণ

নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের ভোট, নিরাপত্তা জোরদার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রায় ছয় বছর পর বুধবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন ঘিরে নগরজুড়ে আছে উৎসবের আমেজ। এর মাঝেও নির্বাচন-পূর্ব অপ্রীতিকর নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শঙ্কা কাজ করছে বিভিন্ন প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও। ভোটের দিন যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে ঢাকা থাকছে বন্দরনগরী।

প্রায় ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চসিক নির্বাচন ঘিরে ৮ জানুয়ারি থেকে চলছিল জমজমাট প্রচারণা। নানা রঙে, নানা ঢঙে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো নগরী। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন নগরজুড়ে। তিন সপ্তাহ ধরে কর্মী-সমর্থকদের বহর নিয়ে প্রতিদিন গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। 

কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ছুটে গেছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। পোস্টার-লিফলেটে ছেয়ে গেছে নগরীর সবখানে। মাইকে বিভিন্ন গানের প্যারোডি বাজিয়ে চলেছে ভোটের প্রচারণা। দুই দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে অংশ নিয়েছেন প্রচারণায়। শেষ মুহূর্তে ভোট ক্যাম্পেইনে নতুন মাত্রা যোগ করেন নৌকার পক্ষে ঢাকা থেকে আসা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকারা। শেষ দিনে প্রার্থীরা শোডাউন করেছেন বিভিন্ন এলাকায়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও সম্পূর্ণ দলীয়ভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে পুরো নির্বাচন। বর্তমান সরকার আমলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট আসবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। 

অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সম্পাদিত বিভিন্ন উন্নয়নকাজের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রবিমুখ ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী বিএনপি নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী  বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাবেন। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্র পরিদর্শনে বের হবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারি মো. ইলিয়াস।

অন্যদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন চকবাজার বিএড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ওই কেন্দ্রে কিছু সময় কাটানোর পর বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারি মো. মারুফ।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের আধিপত্য ও পরস্পরবিরোধী উত্তেজনা বিবেচনায় অন্তত ১৫ টি ওয়ার্ড ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হতে পারে বলে মনে করছে  প্রশাসন। এছাড়া নির্বাচনী এলাকার ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থান এবং বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অর্ধেকেরও বেশি ভোট কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি কেন্দ্র রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের তুলনায় এবার মোট ভোটারের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যাও বেড়েছে। ভোটার বেড়েছে এক লাখ ২৫ হাজার দুইশ’ ৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ও নারী ভোটার বেড়েছে যথাক্রমে ৫৪ হাজার নয়শ’ ৮০ জন এবং ৭০ হাজার দুইশ’ ৭৭ জন। 

একইভাবে গত নির্বাচনে সর্বমোট ৭০৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে নগর পুলিশ ৫৯১টি কেন্দ্র বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এবারের চসিক নির্বাচনে ভোটারদের জন্য ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে ৭৩৫টি। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র অস্থায়ী। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ভোটকক্ষ বা বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার আটশ’ ৮৬টি। এর মধ্যে স্থায়ী ভোটকক্ষ চার হাজার ১২২টি ও অস্থায়ী ৭৬৪টি।

বিগত ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ১৬টি ভোটকেন্দ্র বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। আবার ২০১৫ সালে মহানগর পুলিশের বাইরে জেলা পুলিশের আওতাধীন হাটহাজারী থানা এলাকায় ১২ টি ভোটকেন্দ্র থাকলেও এবার রয়েছে মাত্র একটি। অপরদিকে নগর পুলিশের ১৬ থানার মধ্যে কেবলমাত্র কর্ণফুলী থানা এখনও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন নয়। তাই এবারের সিটি নির্বাচনে নির্ধারিত ৭৩৪ টি ভোটকেন্দ্রের অবস্থান নগর পুলিশের আওতাধীন ১৫ থানা এলাকার মধ্যেই রয়েছে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,প্রথা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোট কেন্দ্রের ক্যাটাগরী ভিত্তিক তালিকা করা হলেও আমরা আসলে কোনও ভোট কেন্দ্রকেই গুরুত্বহীন কিংবা হালকাভাবে দেখছি না। সবকটি কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচনে আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা নির্বাচনের দিন কোথাও কোনও ধরনের সংঘর্ষ বা অনাকাংখিত ঘটনা দেখতে চাই না।

নগর পুলিশেল একটি সূত্র জানিয়েছে,নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ও সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থী হওয়া অনেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যেই বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত দু’জন নিহত হয়। এর মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে সদ্য সাবেক কাউন্সিলররা দলের সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। সে সব ওয়ার্ডে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে তুলনা মূলকভাবে বাড়তি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ কারণে ওই ওয়ার্ডগুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, 'ভোট কেন্দ্রকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নির্বাচনী-নিরাপত্তায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ছাড়াও র্যা ব,বিজিবি, সশস্ত্র আনসার ও কোস্টগার্ড সদস্যদেরও মোতায়েন করা হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক দুটি করে টহল টিম এবং প্রতিটি থানায় একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। নির্বাচনে যে কোনও মূল্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও প্রত্যাশা।'

কমিশনের সর্বশেষ হালনাগাদ ও স্থানান্তর শেষে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবার সিটি নির্বাচনে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৯২ হাজার ৩৩ এবং নারী ভোটার রয়েছেন নয় লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন।


 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত