জামালগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত মা-ছেলের পর আরো এক সন্তানের মৃত্য
জামালগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত মা-ছেলের পর আরো এক সন্তানের মৃত্য
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে বিদ্যুতের ঝুলন্ত তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ঝুমা রানী সরকার (৩৫) ও তার ছেলে দ্বীপ সরকার (৩) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ঝুমা রানীর আরেক মেয়েও পুজা সরকার (৭) গুরুতর আহত হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুজকে সেখান থেকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল পুজা সরকার (৭)। এক পরিবারের মা সহ দুই সন্তানের নিহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে ।
গত রোববার (১০ মার্চ) বেলা ১১ টায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ঝড়ের কবলে ঝুলন্ত তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ঝুমা রানী সরকার ও তার দুই সন্তান।
এ ঘটনায় পল্লীবিদ্যুৎ তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে দুই নাতি ও নিজের সন্তান ঝুমা রানী কে হারিয়ে পাগলপারা হয়ে গেছে নিহত ঝুমার মা মুকুল রানীর মা মুকুল রানী তালুকদার।
এই প্রতিবেদককে কাছে পেয়ে বিলাপ করে মুকুল রানী চিৎকার করে কাঁদতে আরো বলেন,
ও ভাই তোমরা আমার ঝুমারে আইন্যা দেও। আমার ঝুমা গোসলে গেছিল আমার দুই নাতি রে লইয়া (দুই বাচ্চা) অহনো আয়না খেনে। ঝুমা কইরে ও মা, আমার দুই নাতি দ্বীপ আর পূজা রে লইয়া তাড়াতাড়ি আয়। আজকে আমার নাতী পুজা স্কুলে যাইতে আছিল, অহন কে স্কুলে যাইবো গো। ও ঠাকুর ও ভগবান তুমি আমার মেয়ে ঝুমারে আর দুই নাতীরে কই লইয়া গেলায়। এভাবেই বুক চাপড়িয়ে মাতম করে কাঁদছে নিহত ঝুমা রানী’র মা মুকুল রানী তালুকদার।
পালঙ্কে শুয়ে মাটিতে পড়ে বিলাপ করে ও আমার দিদি কই গেলায়, আমার দ্বীপ কই, পূজা কই, দিদি গো, ও দিদি বলে বিলাপ করছে নিহত ঝুমা রানীর ছোট বোন রুমা রানী। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নী শোকে। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে পুরো পরিবারের মানুষ এখন অসুস্থ হওয়ার পথে। প্রতিবেশী ও স্বজনরা এসেও তাদের মুখে আহার তুলে দিতে পারছে না।
একই পরিবারে মা ছেলের মৃত্যুর ঘটনা আরেক মেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকায় পুরো পরিবারটি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। তাদেরকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা কারো নেই। তাদের এমন আহাজারি আর বিলাপের কারণে প্রতিবেশী ও স্বজনদের চোখেও টলমল করছে পানি। নিয়তির সব নিষ্ঠুর খেলায় হেরে যায় সবাই ।
নিহত ঝুমা রানী সরকার, পুজা ও দ্বীপ এনজিও কর্মী দিরাই উপজেলার দেবজ্যোতি সরকারের স্ত্রী ও কন্যা, পুত্র। পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত ঝুমা রানীর স্বামীর বাড়ি দিরাইয়ে উপজেলার কালিয়ানীতে। স্বামী দেবজ্যোতি সরকার শাল্লা উপজেলায় ব্র্যাকে চাকরি করেন। নিহত ঝুমা রানী জামালগঞ্জের ব্র্যাকের আল্টাপুওর মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা। দুই সন্তান নিয়ে জামালগঞ্জের নতুনপাড়ায় ঝুমা রানীর পিতা গৌরাঙ্গ সরকারের বাসায় থাকতেন তিনি।
ঘটনার দিন বিদ্যুৎ না থাকায় ঝুমা রানী তার দুই সন্তান ছেলে দ্বীপ ও মেয়ে পুজা কে নিয়ে পাশের বাড়ির রাস্তার পাশে টিউবওয়েলে গোসল করতে যান। টিউবয়েলের ঠিক উপরে বাসার দেয়ালে ছিল ওই বাসার বিদ্যুতের মিটার। মিটার থেকে বিদ্যুত লাইন টিউবয়েলের উপর দিয়ে মেইন লাইনের খুঁটিতে সংযোগ ছিল। লাইনটি ঝড়ের কবলে খানিকটাই ঝুলে পড়েছিল। বিদ্যুৎ চলে আসলে মাথার উপরে থাকা বৈদ্যুতিক তার তাদের উপর পড়ে যায়।
এক পর্যায়ে ঝুমা রানি তার কোলে থাকা ছোট ছেলে দ্বীপকে নিয়ে বিদ্যুতের তারে শর্ক লেগে রাস্তায় লুটে পড়েন। অপর সন্তান পূজা ছিটকে পড়ে বিদ্যুতের তারের নিচে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। এই ঘটনা ঝুমার বাবা গৌরাঙ্গ সরকার তালুকদার দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলেও রাস্তায় বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎ সংযোগের ভয়ে মাটিতে পড়ে থাকা ঝুমা রানী ও তার সন্তানদের কেউ ধরতে সাহস পায়নি। এ সময় ঝুমা রানীর শরীরে হালকা ধোঁয়া ও আগুন জ্বলছিল।
স্থানীয়রা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মোবাইল নাম্বারে কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রতিবেশী সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারকে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন। পরে উপজেলা প্রশাসন ও জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে বিষয়টি অবগত করেন।
ততক্ষণে জুমা রানী কোলে থাকা সন্তানকে আঁকড়ে ধরে ধুঁকে ধুঁকে জ্বলছিলেন এবং এক পর্যায়ে এভাবেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আহত মেয়েটিকে (পুজা) প্রতিবেশী ও তার স্বজনেরা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গুরুতর আহত পূজা সরকার কে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা প্রদানের পর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
নিহত ঝুমা রানীর মেয়ে পূজা (৭) সরকার ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ৭ তলায় ২০৭ নম্বর কেবিনের-৪ নম্বর বেডে ৭ দিন চিকিৎসার পর গত ১৫ মার্চ রাত এক টায় মৃত্যুবরণ করে। এ নিয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, জামালগঞ্জের মর্মান্তিক এ ঘটনা তদন্ত করতে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের উপ-মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) মকবুল হোসেন কে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- ঋণখেলাপীর মিথ্যা মামলায় ডিএমডিকে হয়রানি, এবি ব্যাংকের প্রতিবাদ
- পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুম ক্লিনিক্যালি ডেড, লাইফসাপোর্ট খোলার সিদ্ধান্ত
- সরকার ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি, এখনই ২০০০ কোটি টাকার মার্কেট এক্সপ্লোর করা সম্ভব
- জাতিসংঘ ৭৭-তম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, কি থাকছে?
- আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠানে এসে ২৫ বছর পর বাবা-মাকে খুঁজে পেলেন মেয়ে
- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মদিন আজ
- ঢাকায় বসবে ২৫৮কি.মি. পাতাল রেল, কোথা থেকে কোথায়?
- করোনা পরীক্ষায় প্রতারণাকে নির্মম বাণিজ্য বললেন ওবায়দুল কাদের
- মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত, ডেডলাইন জয়ে ছুটছে কর্তৃপক্ষ
- বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
`বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়`