শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ || ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ভ্যানে গাছ বিক্রি করা তাজগীর মেডিকেলে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়

ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুমিল্লা

১৬:৪০, ১০ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১৬:৪৩, ১০ এপ্রিল ২০২২

৫৩১

ভ্যানে গাছ বিক্রি করা তাজগীর মেডিকেলে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়

দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে এ নশ্বর পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া দুখিনী মা তাসলিমা বেগম।ছেলে তাজগীর এক দিন বড় ডাক্তার হবে। সেজন্য সব সময়ই বলতেন,বাবা তুই ভালো করে পড়, তোকে মেডিকেলে পড়তে হবে।
 প্রয়োজনে ভিক্ষা করে তোর পড়াশুনা চালামু। মায়ের সেই স্বপ্ন তাজগীর এবার সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

তাজগীরের মেডিকেল কলেজ ভর্তি হওয়ার খবরে সবচেয়ে বেশি যিনি খুশি হতেন তার মা ।অথচ আজ তার মা দুনিয়াতে নেই। ২০১৭ সালে তাজগীর যখন নবম শ্রেণীতে পড়ে, তখন মেরুদন্ডের সমস্যায় মারা যান মা। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান দিন মজুর বাবাও। প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূলে আনতে চেষ্টা করেছেন প্রাণপণ। কখনো খেয়েছেন কখনোবা খেতে পারেননি। কিন্তু দমে যাননি। ফলে সরকারী মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের প্রথম সাফল্যটি পান তাজগীর। সাফল্যে যেখানে আন্দোলিত হবেন তাজগীর সেখানে নতুন দুশ্চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে। টাকা ছাড়া কিভাবে ভর্তি হবেন, পড়াশুনার খরচ চালাবে কে! কঠিন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তাজগীরের প্রশ্ন, ভাই আমি এখন কি করব?

রোববার (১০ এপ্রিল)  দুপুরে এই প্রতিবেদকের কথা হয় তার সাথে।

তাজগীর হোসেন। পিতা শাহাদাত হোসেন ও মাতা তাসলিমা বেগম। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ২নং উজিরপুর ইউনিয়নের চকলক্ষীপুর এলাকার কৈয়া গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি হলেও সে বড় হয়েছেন নানার বাড়িতে। লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের খুনতা গ্রামে তার নানার বাড়ি। পিতা মাতার চার ছেলের মধ্যে তাজগীর সবার বড়। বাবা শাহাদাত হোসেন বিয়ের পর থেকেই লাকসামে থাকেন, কাজ করেন দিনমজুর হিসেবে। চার পুত্র সন্তান হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে যান স্ত্রী তাসলিমা বেগম। মেরুদন্ডের হার ক্ষয়ে যায়। ২০১৭ সালে স্ত্রী মারা গেলে ছোট দুই ছেলে নিয়ে তাজগীরের বাবা শাহাদাত হোসেন চলে যান নিজ বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

মা নেই, বাবা থেকেও নেই। মেধাবী তাজগীর কি পড়াশুনা চালিয়ে যাবে না ছোট ভাইদের দায়িত্ব নিবে-এই চিন্তা যখন তাকে ধরে বসল তখনই তাজগীরের মনে এল প্রয়াত প্রিয় মা জননীর কথা। বাবা, তাজগীর তোকে ডাক্তার হইতে হইব। উঠে দাঁড়ায় তাজগীর। পণ করে যেভাবেই হোক ডাক্তার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবই করব ইনশাআল্লাহ । সামনে এগোতে থাকে অদম্য তাজগীর।
গরীবের ছেলে অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা তাজগীর লড়াই করে । লাকসাম উপজেলার বরইগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫, এরপর জ্যোতিপাল মহাথের বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড, একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে ৪.৯৪ এবং পরবর্তীতে লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। তার লেখা পড়া চালিয়ে যেতে মামারাসহ স্থানীয় লোকজন ও  শিক্ষকরাও সহায়তা করেছেন। মামাদের পরিবারও দরিদ্র।

মায়ের কথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অদম্য সাহসী যোদ্ধা তাজগীর। বলেন, সরকারী মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার মধ্যে দিয়ে মায়ের স্বপ্নের প্রাথমিক ধাপ শেষ করেছি মাত্র। মা মারা যাওয়ার আগে প্রায়ই বলতেন,  তোকে ভিক্ষা করে হলেও পড়াবো। তার পরেও তোকে ডাক্তার হতে হবে। আমার মা বেঁচে থাকলে আজ তিনি অনেক খুশি হতেন। আমি এ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছি। টিউশনি ও রাস্তায় রাস্তায় গাছের চারা বিক্রি করেছি। আমরা দুইভাই নানার বাড়িতে থাকি। অর্থাভাবে ছোট ভাইয়ের লেখা পড়া বন্ধ। অপর দুই ভাইকে নিয়ে আমার বাবা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের কইরা গ্রামে বাস করছে। বাবার আর্থিক অবস্থাও ভালো না। মামাদের আর্র্থিক অবস্থাও খারাপ। মামারা  ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চালায়।

এ পর্যায়ে ভিজে আসে তাজগীরের গলা। ভারাক্রান্ত মনে বলেন, ভাই, মেডিকেলে চান্স পেয়েছি খুশি লাগছে। এখন আমার ভর্তির, বই কেনার আর পড়াশুনা করার টাকা দিবে কে?  রাস্তায় রাস্তায় গাছের চাড়া বিক্রি করে তো মেডিকেলে পড়তে পারব না। তাজগীর লাকসামের এমপি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করেছেন তার পড়াশুনার খরচ চালিয়ে নিতে সহযোগিতা করার জন্য।

তাজগীরের দীপ্তকন্ঠে প্রত্যয়দীপ্ত উচ্চারণ, প্লিজ আমাকে ডাক্তার হতে সাহায্য করুন, আমি মানবিক ডাক্তার হবো, সমাজ তথা দেশের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করব। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত