মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম

১৯:২৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৯:৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

৫৩২

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন (জেএম) সেনগুপ্তের ঐতিহ্যবাহি বাড়িটি অবশেষে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বাড়িটি থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির সামনে টানানো হয়েছে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড। 

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি) বদিউল আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি দল নগরীর রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে যায়। জেলা প্রশাসনের টিম মূল গেটে লাগানো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে অবৈধভাবে বাস করা কয়েকজন নারী-পুরুষকে তারা বের করে দেন। বাড়ির গেট ও দেওয়ালে লাগানো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সব সাইনবোর্ড ও ব্যানার খুলে ফেলে দেওয়া হয়। গেটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা সম্বলিত একটি এবং এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনার একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভেতরে লাগানো হয় জাদুঘর সংক্রান্ত জেলা প্রশাসনের সাইনবোর্ড।


 
এছাড়া আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বাড়ির সীমানা দেওয়ালে ‘বিপ্লবী জাদুঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। জেলা প্রশাসনের টিমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (মেট্রো) সুমনী আক্তার, বাকলিয়া সার্কেলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসনের টিম ঘটনাস্থলে আসার আগেই একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন ও মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তের ডাকে সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছিলেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং পুলিশ-আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তাদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। 

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) বদিউল আলম বলেন, যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি অনেককিছুর সাথে জড়িত, চট্টগ্রামের ইতিহাসের সাথে জড়িত।  দুষ্কৃতকারীরা ঐতিহাসিক এই স্থাপনার ভেতর অবৈধ অনুপ্রবেশ করে ভাংচুর করেছে। পরে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, এই স্মৃতি স্থাপনাটি রক্ষা করার জন্য। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটি রুলও জারি করেছেন। সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষ করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। চট্টগ্রামবাসীরও দাবি স্থাপনাটি রক্ষা করা। জাদুঘর স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাদুঘর করার বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে। ২০১৮ সালের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভায় এ বাড়িটির স্মৃতি সংরক্ষণ করে জাদুঘর করার সিদ্ধান্তও আছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়েরও একটি চিঠি এসেছে, এটি সংরক্ষণের জন্য। পরিকল্পনা আছে জাদুঘর করার। এখানে স্থায়ীভাবে পাহারা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

এর আগে, বিকেল তিনটা থেকে বাড়িটির সামনে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফী, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, নারীনেত্রী নুরজাহান খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রনজিৎ চৌধুরী ও জীনবোধি ভিক্ষু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাশেদ হাসান, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা তাপস হোড় ও শ্যামল কুমার পালিত, আওয়ামী লীগ নেতা নঈমউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম মহানগর যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুবেল পাল।

গত ৪ জানুয়ারি সোমবার নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ব্রিটিশিবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি দখলে নিয়ে ভাঙার উদ্যোগ নেয় একটি পক্ষ। এসময় সেখানে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একজন নাজিরের উপস্থিতিতে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ভবনটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু করা হয়। এ ঘটনা জানতে পেরে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয়রা বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে সংরক্ষণের দাবিতে অবস্থান নেন। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাড়িটি সিলগালা করা হয়। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকরা এবং বিভিন্ন সংগঠন ঐতিহ্যবাহী ভবনটি রক্ষায় বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ঐতিহাসিক ভবনটি রক্ষা করে সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ওইদিনই (বুধবার) হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ একটি রিটের প্রেক্ষিতে ভবনটির দখল ও অবস্থানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। একইদিন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই ভবন ভাঙ্গার ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজের আদালতে আবেদন করে। আদালত ভবনটি ভাঙার ওপর একমাসের নিষেধাজ্ঞা দেন।

সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ছেলে যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই নিঃসন্তান অবস্থায় ব্রিটিশ ভারতের রাচিতে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান, তার কোনো ওয়ারিশ কর্তৃক এই বাড়ি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জ এলাকার বাড়িটিতে ছিলেন। ওই বছর তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। এর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত