মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

দালাল চক্রের হাতে জিম্মি চমেকের রোগিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম

১৬:০৫, ১ জানুয়ারি ২০২১

১১৬৬

দালাল চক্রের হাতে জিম্মি চমেকের রোগিরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে (চমেক) আসা রোগিরা দালাল চক্রের হাতে দিন দিন জিম্মি হয়ে পড়ছেন। টেস্ট ও ওষুধের জন্য যেতে হয় দালাল চক্রের পছন্দের ল্যাব ও ফার্মেসিতে। তাদের কথা না শুনলে নানা ধরণের হয়রানির মুখে পড়তে হয় রোগি এবং তাদের সঙ্গের স্বজনদের। মেডিকেল পুলিশ বলছে, বিভিন্ন সময় এসব চক্রের বেশ কিছু সহযোগিকে আটক করা হলেও কমছে না তাদের দৌরাত্ম্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে প্রায় ১০টির বেশি সক্রিয় দালাল চক্র আছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে রবিউল ইসলাম রাজু ওরফে ‌টোকাই রাজু'র সিন্ডিকেট। তার হয়ে কাজ করে সোহাগ, সুজন, অরুণ, সাজ্জাদ, সবুজসহ ৮ থেকে ১০ জন যুবক। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের কথিত বড় ভাইদের সহায়তহায় রাজত্ব করছে বলে জানা যায়। এছাড়া দালাল চক্রের সাথে যুক্ত হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির বেশকিছু কর্মচারী। ওয়ার্ডবয়, আয়া, নার্স ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে জরুরি বিভাগসহ ব্লাড ব্যাংক, বহির্বিভাগ, ফার্মেসি ও ওয়ার্ড ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী এই চক্র। 

এসব দালাল চক্রের বিভিন্ন সদস্যদের বিরুদ্ধে চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানায় একাধিক ফোজদারি অভিযোগও আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে তাদের দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি। 

সম্প্রতি রিমা আক্তার (ছদ্মনাম) নামের এক নারী কম খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে বাবাকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে আসেন। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতেই শুরু হয় কাড়াকাড়ি। একজন তার হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে কম খরচে ওষুধ ও টেস্ট করিয়ে দেবে বলে নিয়ে যায় পার্কিংয়ের দিকে। তার অসুস্থ বাবাকে বসিয়ে রাখা হয় মেইন গেইটের পাশে।

রিমাকে বলা হয় চমেক হাসপাতাল ল্যাব বন্ধ। তাই বাইরের ল্যাবে টেস্ট করাতে হবে। কম খরচে ওষুধও ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে দালাল চক্রের এক সদস্য। রিমার কাছে কিছু টাকা অগ্রিম চায় সে ব্যক্তি। কিন্তু রিমা তার কাছে টাকা নেই ও টাকা দিতে অসমর্থ জানালে দালাল চক্রের ওই সদস্য তার কাছে অনৈতিক আবদারও করে। শেষে কোনো প্রস্তাবে সায় না পেয়ে রিমাকে নাজেহাল করে সেই দালাল।

জানা যায়, চমেক হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ জন রোগি চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেওয়া হয় ওষুধ ও প্রয়োজনীয় টেস্ট। চিকিৎসা নিতে আসা অন্তত ৫০ জন রোগিকে দেওয়া হয় বিভিন্ন শারীরিক টেস্ট। এ সুযোগে ওঁৎ পেতে থাকে দালাল চক্রের সদস্যরা। দালালরা বিভিন্ন ছাড়ের লোভ দেখিয়ে ও কম খরচে পরীক্ষা করিয়ে দেবে বলে রোগি ও তার স্বজনদের তাদের নির্ধারিত ল্যাবগুলোতে নিয়ে যায়। রোগিরাও কম খরচের আশায় তাদের ফাঁদে পা দেন। যদিও কম খরচ আসলে মেলে না। শুধু তাই না, এসব দালালরা রক্ত কিনতেও বাধ্য করে তাদের নির্দিষ্ট ব্লাড ব্যাংক থেকে। 

এ চক্র বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিং অফিসারদের কাছ থেকেও মাসোহারা আদায় করে বলে অভিযোগ আছে। এম্বুলেন্স ভাড়ার নিয়ন্ত্রণও তাদের সিন্ডিকেটের হাতে। ট্রলি আর হুইল চেয়ার ব্যবহারের জন্যও দিতে হয় টাকা। যদিও এই সেবা সম্পূর্ণ ফ্রি। রোগিদের মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরিসহ রোগির স্বজনদের অজ্ঞান করে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে এসব চক্রের বিরুদ্ধে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুঁইয়া বলেন, মেডিকেল কলেজ ও আশেপাশের ক্লিনিক কেন্দ্রিক যে দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে তাদের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বেশ কয়েক জনকে আটকও করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হূমায়ুন কবির বলেন, এ ধরনের দালাল চক্রের হাতে রোগিরা হয়রানির শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। আসলে এটি একটি সমস্যা। তবে আমরা সোচ্চার রয়েছি। রোগিদের হয়রানি করে এমন বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। বর্তমানে যারা সক্রিয় আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, দালালের দৌরাত্ম্য কমাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে ড্রেসকোড অনুযায়ী পোশাক পরিধান ও দৃশ্যমান পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত