নিউইয়র্কের স্ট্যাটান আয়ল্যান্ডে সেরা ১০০ ক্ষমতাধরের তালিকায় বাংলাদেশি আমেরিকান করিম চৌধুরী
নিউইয়র্কের স্ট্যাটান আয়ল্যান্ডে সেরা ১০০ ক্ষমতাধরের তালিকায় বাংলাদেশি আমেরিকান করিম চৌধুরী
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স ফর সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল) এর জাতীয় কমিটির সেক্রেটারি মো. করিম চৌধুরী নিউইয়র্কের স্ট্যাটান আয়ল্যান্ডের পাওয়ার ১০০ এর একজন হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। মর্যাদাকর রাজনৈতিক জার্নাল 'সিটি অ্যান্ড স্টেড অব নিউইয়র্ক' প্রণীত ২০২৩ সালের তালিকায় উঠে এসেছে তার নাম। নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের একজন হিসাবে নির্বাচিত করিম চৌধুরী এর আগে ২০২১ এবং ২০২২ সালেও এই তালিকায় এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয় তথা অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপের বৈষম্য ও অন্যয্যতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কাজ করছেন করিম চৌধুরী। ১৯৯৭ সাল থেকে করিম চৌধুরী নিউইয়র্কের শিক্ষা দফতরে সরকারি কর্মচারি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে নিউইয়র্কের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এবং শ্রমিক নেতা হিসেবি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিউইয়র্ক স্টেট পাবলিক এমপ্লয়ি ফেডারেশন-এনওয়াইএসপিইএফ এর নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক স্টেটের ৫৫,০০০ কর্মীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই বাংলাদেশি আমেরিকান।
একজন রেজিটার্ড ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বিশেষ করে স্ট্যাটেন আয়ল্যান্ডের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখেন। স্ট্যাটান আয়ল্যান্ড ডেমোক্রেটির পার্টির লেবার চিফ তিনি। ২০১৯ সালে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ডেলিগেট হওয়ার সুযোগ পান করিম চৌধুরী। নিউইয়র্কের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে তার সুপরিচিতি রয়েছে। ইউএস কংগ্রেসনাল অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু জাতীয় ও স্টেট পর্যায়ের পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, পেয়েছেন অনেক প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন। অসংগঠিতদের সংগঠিত করা ও বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার কারণেই এসব স্বীকৃতি মিলেছে করিম চৌধুরীর।
ফার্স্ট জেনারেশন ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসেন করিম চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই তিনি এ দেশে পারি জমান। নিউইয়র্কে পৌঁছে করিম চৌধুরী স্যাটান আয়ল্যান্ডে বসবাস শুরু করার পর থেকেই দক্ষিণ এশীয়দের সংগঠিত করতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি কাজ শুরু করেন নিম্ন-আয়ের ইমিগ্র্যান্টদের পরিবারগুলোর সাথে। তারা যাতে ভালো মজুরির কাজ পেতে পারেন এবং দারিদ্রদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন সেটাই ছিলো তার লক্ষ্য। সরকারি ও বেসরকারি খাতে যাতে ভালো মজুরির কাজ পাওয়া যায় সে জন্য বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে চেষ্টা করতে তিনি এই মানুষগুলোকে উদ্বুদ্ধ করেন। স্ট্যাটান আয়ল্যান্ডের অভিবাসী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তারা যেনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন সে চেষ্টা অব্যহত রাখেন। করিম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চেষ্টায় অনেক ট্যাক্স থেকে সুবিধা নেওয়া মানুষ নিজেই ট্যাক্স জেনারেটরে পরিণত হন। কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে তাদের বিরাজমান সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে পারার মধ্যেই নিজের কাজের আনন্দ খুঁজে নেন তিনি। কমিউনিটির মানুষগুলো যাতে কাজ খুঁজে পান সে জন্য তাদের রেজুমি তৈরি করে দেওয়া, কাজের জন্য আবেদন, কাজের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগগুলো নিশ্চিত করেন। আর এসব কারণে গোটা সংখ্যালঘু গ্রুপের মধ্যে তিনি সুপরিচিত।
২০০১ সালেই করিম চৌধুরী নিউইয়র্ক সিটি সিভিল সার্ভিস সিস্টেমে যোগ দেন এবং এনওয়াইসি লোকাল ৩৭১ এর সক্রিয় সদস্য হন। একজন সক্রিয় ইউনিয়ন মেম্বার হিসেবে নিজের ইউনিটে সদস্যদের সংগঠিত করা শুরু করেন। ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক স্টেট সিভিল সার্ভিস সিস্টেমে যোগ দেন তিনি। এবং দ্রুতই নিউইয়র্ক স্টেট পাবলিক এমপ্লয়ি ফেডারেশন (পিইএফ) এর সক্রিয় সদস্য হন। ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পিইএফ ডিভিশন ৩৪৯ এর কাউন্সিল লিডার। পরে জয়েন্ট অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পান। স্টেট এজেন্সিগুলোয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক স্টেট, ডিএইচআর ও ইইওসিতে দায়ের করা মামলা ও অসন্তোষ পর্যালোচনা করাই ছিলো তার দায়িত্ব। নিউইয়র্ক সিটি সেন্ট্রাল লেবার কাউন্সিলে পিইএফ'র প্রতিনিধিত্ব করেন করিম চৌধুরী।
২০১৮-১৯ সালে রিচমন্ড কাউন্টি ডেমোক্রেটিক পার্টিকে চাঙ্গা করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন করিম চৌধুরী। এসময় তিনি সংগঠনকটিকে আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক ও রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় করে তোলেন। পরে তিনি রিচমন্ড ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাহী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পান। করিম চৌধুরী ২০১৮ সালে এডি ৬১ এর জুডিশিয়াল ডেলিগেট নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে পূননির্বাচিত হয়ে এখনো সেই পদে রয়েছেন। এনওয়াই কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ১১ এর পক্ষ থেকে তিনি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেন।
এছাড়াও করিম চৌধুরীর ডাক পড়ে স্টেটওয়াইড লেবার ম্যানেজমেন্ট ও হেলথ অ্যান্ড সেফটি কমিটিগুলোর বৈঠকে। সেখানে তিনি পিইএফ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরাজমান সংকটগুলো নিরসনে দায়িত্ব পালন করেন। একজন আত্মনিয়োজিত শ্রমিক নেতা ছাড়াও তিনি সফল কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে গোটা নিউইয়র্কে তার সুপরিচিতি রয়েছে। বিভিন্ন অংশগ্রহণ ও অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে তিনি সমস্যাগুলোর গুরুত্বানুসারে সমাধানের পথে নির্দেশ করেন।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের এই পথ পরিক্রমায় ২০১৫ সালে করিম চৌধুরী এএসএএএল এর যোগ দেন। সে বছর দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকান শ্রমিক সংঘের স্ট্যাটান আয়ল্যান্ড চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন তিনি। এখানে অ্যাসালের ব্যানারে দক্ষিণ এশীয়দের সংগঠিত করতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে একটা শক্ত মোর্চা গঠন করেন। ক্রমেই স্ট্যাটান আয়ল্যান্ড বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে অ্যাসাল। নিউইয়র্কের এই বোরোতে জনমত গঠন, ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও আদমশুমারিগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে সংগঠনটি।
করিম চৌধুরীর তুলনাহীন নেতৃত্ব প্যানডেমিকের সময়টিতে তাকে দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিতে আরও সুপরিচিত করে তোলে। নিউইয়র্ক সহ অন্যান্য স্টেটেও দক্ষিণ এশীয় নেতাদের কাছে পরিচিতি পান তিনি। এর আগে ২০১৬ সালেই অ্যাসাল এর ন্যাশনাল সেক্রাটারি পদে দায়িত্ব পান এবং নিউইয়রর্কের পাঁচটি ও নিউ জার্সির একটি চ্যাপ্টারের নেতৃত্ব তার হাতে আসে। তার নেতৃত্বে অ্যাসালা নিউইয়র্ক , নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডি.সি, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা ও মিশিগানে ২০টি চ্যাপ্টার গড়ে ওঠে। নিয়মিত তিনি এসব স্টেটে সফর করে সেসব কমিউনিটিতে কণ্ঠস্বর জাগ্রত করে তুলতে কাজ করেন।
মোহাম্মেদ করিম চৌধুরীর বড় ছেলে ফাতিন ইফতেখান (২২) ব্রুকলিন টেকনিক্যাল হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে কিউনি- হান্টার কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন। ছোট ছেলে ফাতিন ইশতিয়াক (১৯) হাইস্কুল শেষ করেন স্টাটেন আয়ল্যান্ড টেকনিকাল হাই স্কুল থেকে এবং বর্তমানে ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর করছেন। তার মেয়ে মানহা কারিমা মাহজাবিন (১১) আইএস ২৭ এর সিক্স গ্রেডার। তার স্ত্রী ফারহানা আহমেদ এনওয়াইসি সিভিল সারভেন্ট হিসেবে কর্মরত। এবং এনওয়াইসি ১৫৪৯ এর সদস্য। খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তির।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- ওরে বাব্বা কত পিঠার কত নাম!
- ডা. ফারজানাকে অভিনন্দন
- রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট সেবার অনলাইন কার্যক্রম ফেসবুকে ল
- মাকে হারালেন আজিজ আহমদ
- স্বজনদের শেষ মাটি দিতে না পারা প্রবাসীদের জীবনে বড় কষ্ট
- বিনা সাক্ষাৎকারে
ভ্রমণ, ব্যবসা ও মেডিকেল ভিসার আবেদন নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস - দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম হিসেবে
এনওয়াইপিডির লে. কমান্ডার হচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকান শামসুল হক - কানাডায় পেস এর উদ্যোগে বর্ণবাদ বিরোধী কার্যক্রম শুরু
- নিউইয়র্কে আগ্রাবাদ নাইট, এক মুখরিত সন্ধ্যার গল্প
- বিদেশি সিইও নয়, ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা পাবেন নিজ দেশে কাজের সুযোগ