শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৩:০৩, ২১ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৩:৪৭, ২১ এপ্রিল ২০২১

৭৫৫

চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ

করোনায় মারা গেছে কবি শঙ্খ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
করোনায় মারা গেছে কবি শঙ্খ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

'পা বাড়ালেন ফিরে যাবার জন্য।
আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করি তখন: কিছু কি বলবেন আমাকে?
হেসে জানালেন তিনি:
একটাই শুধু কথা—
তোমার স্বপ্নে কোনো বাস্তব নেই, বাস্তবে নেই কোনো স্বপ্ন।’

ছুটি পেলেন ভারতের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ। হ্যা, তার কলম থেমে গেল। হিসেবনিকেশ বন্ধ হলো কাজ অবসরের, লেখা না লেখা, মায়া-যন্ত্রণা, বাস্তবতা-স্বপ্ন বা জাগতিক সবকিছু থেকে। কারণ করোনা কেড়ে নিয়েছে তাকে। 

বুধবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি চলে যান। তার প্রস্থানের মধ্য দিয়ে অবসান হলে কবিতার একটি যুগের।

শঙ্খ ঘোষ কয়েক মাস ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। গত ২১ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালেও ছিলেন কয়েক দিন। এর মধ্যে জ্বর ও পেটের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তার করোনা টেস্ট করা হয়। 

১৪ এপ্রিল বিকেলে রিপোর্ট এলে জানা যায়, তিনি সংক্রমিত হয়েছেন। তাইকোভিড সংক্রমণ ধরা পরার পর ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতেই একাকী ছিলেন। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। একসময় হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি চলে গেলেন।

কবির জন্ম ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি।বাংলাদেশের চাঁদপুরে। পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়ায়বাবা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ মা অমলা ঘোষ। কবির বাবা মায়ের দেওয়া নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ।

বাবার কাজের জায়গা পাবনা হওয়ায়, তার বেড়ে ওঠা পাবনায়। সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এর পরের ঠিকানা কলকাতা। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

বাংলা কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান গভীর। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। 

নিষ্ঠ চিত্রীর মতো ক্ষান্তিহীন ছিল তার কবি  সাধনা। নিবিড় তার বুনোট, নিমগ্ন তার সত্তা। তার কবিতা আত্মনিমগ্নের। তার লেখায় আছে দেশ-বিশ্ব দর্শনের স্বরূপ। তার কবিতা রাষ্ট্রিক ও সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সব সময়।

তার ‘সন্ধ্যানদীর জলে’ বইটি মূলত বাংলাদেশ প্রসঙ্গেই নানান সময়ে লেখা তার স্মৃতিকথা, ভ্রমণপঞ্জি ও অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণময় লেখাগুচ্ছের সংকলন।

রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। অধ্যাপনাকেই পেশা বেছে নিয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। 

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাও করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ায় ‘রাইটার্স ওয়ার্কশপ’-এও যোগ দেন। 

সাহিত্যিক জীবরে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান।

১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করেও পান সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার।  এ ছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার গেছে কবির ঝুলিতে। ২০১১ সালে পদ্মভূষণে সম্মানিত হয়েছেন।
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank