শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

ওমর, দ্য টেন্টমেকার ।। অনুবাদ: কবির চান্দ ।। মূল: নাথান হাসকেল [কিস্তি-৪]

কবির চান্দ, লেখক ও অনুবাদক

১৮:৩৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ০০:৪৫, ১৩ মার্চ ২০২১

১১৩৩

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

ওমর, দ্য টেন্টমেকার ।। অনুবাদ: কবির চান্দ ।। মূল: নাথান হাসকেল [কিস্তি-৪]

ওমর, দ্য টেন্টমেকার
ওমর, দ্য টেন্টমেকার

[কিস্তি-১: সুলায়মান পয়গম্বরের যাদুর গালিচা] [কিস্তি-২: গিরিপথ] [কিস্তি-৩ পাহাড়ি উদ্যান]

চার. পুরনো বন্ধুদের সাক্ষাৎ

শিকার করা সবসময়ই রাজাদের মহত্তম ক্রীড়া হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এটা কেবল হত্যার আনন্দে মেতে উঠা নয়, যদিও এর একটা ভূমিকা এতে আছে। হয়তো এটা সেই প্রকৃতিরই খেয়াল, যা ঈগলকে লেলিয়ে দেয় চড়ুইয়ের পিছনে যে আবার পতঙ্গকে তাড়া করে। নিষ্ঠুরতা আর হত্যার এ খেলার বুঝি শেষ নেই। কিন্তু শিকার করাতে বিপদ এবং রোমাঞ্চও আছে। প্রচণ্ড গতিতে পশ্চাদ্ধাবনের উল্লাস কোনো খানা-খন্দ বা সীমার পরোয়া করে না। এর সঙ্গে শিকারী কুকুরদের গলায় বাঁধা ঘন্টার ধ্বনি আর ঈগলদের কাব্যিক উড়াউড়ি তো আছেই। 

খোরাসান প্রদেশ তখন এমনি জনবহুল ছিল আর এর তিনদিক ঘেরা পাহাড়গুলোর ঢালে এত উঁচু পর্যন্ত চাষ-বাস হয়েছে যে শিকার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সুদূর ফিরোজা পাথরের পাহাড় পেরিয়ে গেলে তবে সাধারণ শিকারীরা তুষারঢাকা পর্বতমালার উপরিভাগে বাখতা নামের পাহাড়ি ভেড়া আর বুজ নামের বাঁকা শিংয়ের ছাগলের সন্ধান পায়। কিন্তু ইবরাহিম নিয়ালের এই উদ্যানে অনেক রকমের পশুপাখি সংগ্রহ করে রাখা ছিল। সুলতানকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে তিনি কুকুর এবং ঈগলদের নিয়ে বেরুলে গর্ব করে বলার মত শিকার পাবেন। 

রাতে বাতাস ছিল না। এরপর এমন একটা সকাল এল যার জন্য শিকারীরা মুখিয়ে থাকে। নজরদারির জন্য নির্মিত উঁচু স্তম্ভ থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে শুনতে তুষারঢাকা পাহাড়চূড়ার আড়াল থেকে সূর্য বেরিয়ে এল, তার জ্বলজ্বলে মুখ দেখে মনে হয় যেন নিচের সুন্দর পৃথিবী দেখে সে খুশিতে হাসছে। উপত্যকার জলধারার উপর তখনও হালকা কুয়াশার চাদর ঝুলছে, যা চোখে এমন বিভ্রম তৈরি করেছে যে সেগুলিকে বড় জলাশয়ের মত দেখাচ্ছে। কিন্তু কুয়াশা শীঘ্রই রাজহংসীর মত মেঘের রূপ ধরে উপরে উঠে গেল আর ধীরে ধীরে আকাশে মিলিয়ে গেল। 

প্রাসাদের ভেতরে ও বাইরে সবাই শয্যা ত্যাগ করে কাজে নেমে পড়ল। হালকা নাস্তা সেরে শিকারী-দল প্রস্তুত হয়ে গেল। মালিক শাহ কোনোরূপ বিঘ্ন পছন্দ করেন না। তারা দেরি না করেই ঢালু পথে নেমে উল্টোদিকের পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগল। খুব পরিকল্পিতভাবে ঘটানোই হোক আর দৈবক্রমেই হোক, তারা প্রথমে যে ধরনের প্রাণী শিকারের কথা ভেবেছিল দেখা গেল সেরকম একটি পাহাড়ি ছাগল চূড়া পেরিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পাহাড়ে আর কোনো প্রাণীই এতটা দ্রুতগতির নয়, আর কোনো প্রাণীর পা-ই পিছল না খাওয়ার বিষয়ে এতটা নিশ্চিত নয়। কেবল ঘোড়ায় চড়ে এর পিছু ধাবন করা অসম্ভব। এমনকি সবচেয়ে দ্রুতগতির গ্রেহাউন্ডও পাহাড়ে এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবে না। কিন্তু সৃজনশীল মানুষেরা শিকারী ঈগলকে এমন প্রশিক্ষণ দিয়েছে যে তারা বুনো ছাগলের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

মালিকশাহ যখন দেখলেন যে শিংবিশিষ্ট সুন্দর শিকারটি অপ্রতিরোধ্য বেগে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে, তিনি দুটি ঈগলকে ছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিত করলেন। তাদের প্রশিক্ষক তাদের মসৃণ পালকে হাত বুলাল আর কানে কানে কয়েকটা কথা বলল, তারপর তাদের উড়িয়ে দিল। ঈগল দুটি বাতাসে চক্কর খেল, তারপর স্বাভাবিক প্রবৃত্তির জন্যই হোক আর শেখানোর ফলেই হোক, সোজা তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেল। তাদের সাধ্যের মধ্যে যা ছিল তা হল ছাগলটার চলায় বাঁধা সৃষ্টি করা, ওটার চোখের সামনে নিজেদের পাখা ছড়িয়ে রাখা যেন দেখতে না পায় আর লাফ দিতে দেরি করে। একইসাথে শিকারী কুকুরগুলো গলায় বাঁধা ঘন্টির ধ্বনি-প্রতিধ্বনি পর্বতের খাড়া দেয়ালে ছড়িয়ে দিয়ে ঈগলগুলোর কাজ সহজ করে দিয়েছিল। আর দূষণমুক্ত হিমেল পাহাড়ি বাতাসের স্পর্শ ও আসন্ন শিকার-সম্ভাবনার উল্লাসে মত্ত হয়ে রাজকীয় শিকারী দল তাদের ঠিক পেছন পেছন ছুটে আসছিল।

এই বিশেষভাবে নির্বাচিত শিকারীদলে অবশ্যই নিজাম-উল-মুলকও ছিলেন, আর তিনি ওমরকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। ওমর সানন্দেই আসতে রাজি হয়েছিলেন কেননা তিনি জীবনের নানা রূপ দেখতে ভালোবাসতেন। কিন্তু একটা ঘটনার কারণে তারা শিকারের শেষপর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারলেন না। তারা দুজন অন্যদের তুলনায় একটু পেছনে দুটি ঘোড়ায় করে আসছিলেন। এমন সময় যেন শূন্য থেকে তাদের সামনে একটা লোকের উদয় হল। দেখতে ভিখিরির মত, গায়ে হজ¦যাত্রীদের মত পোষাক, একখ- কাপড় কাঁধ থেকে কোমর অবধি প্যাঁচানো আর একখ- কোমর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঝুলছে। দুটি কাপড়ই অত্যন্ত নোংরা আর এখানে-ওখানে ছেঁড়া। মাথায় যেনতেনভাবে পরা ভেড়ার পশম দিয়ে বানানো লম্বা টুপি। লম্বা, জটপাকানো চুল আর মেহেদির রঙে রঞ্জিত চমৎকার লম্বিত দাড়ি। মড়ার মত বিবর্ণ, চিকন আর অদ্ভুত শ্যামবর্ণের মুখের এপাশ-ওপাশ বিস্তৃত বাঁকা গোঁফজোড়ায় হিং¯্রতার ভাব। আর কোটরের গভীরে সেঁটে যাওয়া একজোড়া কালো চোখ যেন উনুনের পেটে কয়লার মত জ¦লছে। পায়ে স্যা-েল আছে, কিন্তু সে এমনভাবে দাঁড়িয়ে যেন মাটিমাখা গোড়ালি আর পায়ের পাতার উপরিভাগ ভালোমতোই চোখে পড়ে। তাঁকে লম্বা লাগছিল, কিন্তু ঝুঁকে পড়া কাঁধ দেখে এটাও মনে হচ্ছিল যে তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এই একটিমাত্র লোক দুজনের ঘোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের পথ রুদ্ধ করে দিল আর দুহাত উপরে তুলে পরিষ্কার, সবল গলায় চীৎকার করে উঠলো,

“শুনো! শুনো! হে খোদা, আমি ক্ষুধার্ত! আমাকে একটুকরো রুপি দাও!”

অশ্বারোহী দুজন অবাক। তারা ভেবে পেলেন না এত সুরক্ষিত উদ্যানে এরকম একজন ভাগ্যহত ভিখারি কী করে ঢুকল। তাঁরা হয়ত ঘোড়ার পিঠেই থাকতেন, এবং আগন্তুককে পাত্তা দিতেন না, কিন্তু তাঁদের এই মনোভাব দেখে ভিখারির চোখ যেন জ¦লে উঠলো - 
“খোদা নারায হবেন!” 

আগন্তুক তার দাঁতের সারির ফাঁক দিয়ে হিসহিস করে বলল আর নিজাম-উল-মুলকের ঘোড়ার লাগামে ধরল। 

উজিরের বুদ্ধিমত্তার প্রখরতা ঝিলিক দিল। 

“তুমি একজন অনুপ্রবেশকারী”, তিনি বললেন এবং চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন পাহাড়ী ঝোপঝাড়ের আড়ালে গলাকাটাদের দল লুকিয়ে আছে না, যারা প্রথমে তাকে হত্যা করবে আর পরে সুলতানকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।

ভিখারীমত লোকটা এবার সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াল।

“হায় রে আমার দুঃখের কপাল! সেই হাসান, সেই মহান উজির, সেই বিখ্যাত নিজাম-উল-মুলক তার এই সেবককে অনুপ্রবেশকারী বলছে। তোমার কি সত্যিই আমাকে মনে নেই - সেই হাসান ইবনে সাবাহ?* আমিই সেই। হাজারবার ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে বাঁচতে, হাজারবার মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে, শেষ পর্যন্ত পুরনো প্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য তোমার সামনে আসতে পেরেছি!”

এবারে বোঝা গেল যে ভিখারি আসলে ভিখারি নয়। তাকে দেখে সত্যি সত্যিই অনুগ্রহের পাত্র বলে মনে হচ্ছিল। বোধহয় তার উপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা গেছে। কিন্তু সে যখন সোজা হয়ে দাঁড়াল তখন বোঝা গেল লোকটা মোটেই বৃদ্ধ নয়, বরং যৌবনের শিখরে অবস্থান করছে। নিজাম-উল-মুলক তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী চাকরকে দিয়ে সুলতানের নিকট খবর পাঠালেন যে তাকে সরাইয়ে ফিরতে হবে, এবং তিনি পরে শিকারে যোগ দেবেন।

তিনি আরেকজন চাকরকে বললেন একটা দ্রুতগামী অশ্ব নিয়ে আসতে। ঘোড়া আসার পর একসময়ের তিন সহপাঠী এই অসাধারণভাবে মিলিত হবার পর প্রাসাদের পথ ধরলেন। **

হাসান বিন সাবাহ বরাবরই আত্মকেন্দ্রিক, আবেগপ্রবণ এবং অল্পকথার মানুষ। এমনকি তারা যখন ইমাম মোবাফফাকের নিকট পড়ালেখা শিখছিলেন তখনও তিনি এরকমই ছিলেন। তিনিই এরকম একটা চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন যে, তিন বন্ধুর মধ্যে যে আগে প্রতিষ্ঠিত হবে সে অন্য দুজনকে তাঁর সৌভাগ্যের ভাগ দেবে। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ছিল দৃঢ়ভাবে নিজের দাবি তুলে ধরা; অবশ্য আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি যে নিজাম-উল-মুলক সে চুক্তির কথা ভুলে যাননি। আর এখন, তাঁদের মাঝখানে ময়লা কাপড়চোপড় পরিহিত হাসানকে বেমানান লাগছিল, যদিও অন্য দুই বন্ধু শিকারের পোষাকে আছেন, তবু তাদের রাজসিক আভিজাত্য ঠিকরে বেরুচ্ছিল। এই বৈপরীত্য মনে হচ্ছে হাসানের ভুরুর ভাঁজকে আরও গভীর আর কালো চোখের দৃষ্টিকে আরও বেশি জ্বলজ্বলে করে তুলল। তাহলে কি তাঁর এখন কঠিন সময় যাচ্ছে?

ওমর এবং নিজাম-উল-মুলকের মনে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিনতু সৌজন্যবোধের কারণে তাঁরা তাঁকে তা সরাসরি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলেন না। কাজেই তারা যে কেবল ধীরে ধীরে চলছিলেন তা নয়, তারা কোনো কথাবার্তাও বলছিলেন না। হজে¦ও পোষাকটা একটা প্রশ্নের মওকা তৈরি করে দিল।

“আমাদের প্রিয় বন্ধু, হাসান ইবনে আলি ইবনে সাবাহ ্আল রাজি কি হজ¦ করতে গিয়েছিল?”

নিজাম-উল-মুলক প্রশ্ন করলেন, আর পুরো নামটি উচ্চারণ করে এও জানিয়ে দিলেন যে বন্ধুকে তিনি ভুলেননি। স্মরণশক্তি দেখানোর পাশাপাশি এটা হাসান সাবাহকে খুশি করার একটা চেষ্টাও হল।

“জীবনটাই একটা তীর্থযাত্রা, আর আমি এর মধ্য দিয়েই যাচ্ছি”, হাসান বিজ্ঞের মত জবাব দিল। মনে হল সে কথা বলতে চায় না, অস্থায়ী ক্যাম্পের সদর দরজায় পৌছুনো পর্যন্ত তার কাছ থেকে আর কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। অবিন্যস্ত আর ছেড়াখোঁড়া পোষাক সত্ত্বেও হাসানের মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল যে তাঁকে অবজ্ঞা করা যায় না। বোঝা যাচ্ছিল যে সে আর দশটা সাধারণ মানুষের মত নয়। নিজাম-উল-মুলক প্রথমেই তাঁকে হাম্মামখানায় নিয়ে গেলেন, যেখানে তাঁকে ভালো করে গোসল করানো হল। তাকে নতুন কাপড় দেয়া হল, আর সাজপোষাকের পর খাবার পরিবেশন করা হল। তিনি ক্ষুধার্ত মানুষদের মত চেটেপুটে খেলেন, আর উদরপূর্তির তিনি কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন।

ওমর পরামর্শ দিলেন পুনরায় শিকারে যোগ না দিতে। আরেকজন বার্তাবাহক পাঠিয়ে মালিকশাহকে জানিয়ে দেয়া হল যে বিশিষ্ট অতিথিকে সঙ্গ দিতে সুলতান না ফেরা পর্যন্ত তারা ক্যাম্পেই থাকবেন। তারা ভালোই জানতেন যে শিকারের দলে তাদের উপস্থিতি কেবলই আলঙ্কারিক, গোটা দলটা এমনভাবে গঠিত যে তারা না থাকলেও কেউ ঘাটতি অনুভব করবে না। শিকারে যেতে না পারার কারণে নিজাম-উল-মুলকের মনে যদি একটু খেদ তৈরি হয়েও থাকে, মুখে তার কোনো ছাপ পড়ল না। এই আমোদে কী কী হয় তার পুরোটা ওমর জানতেন না। কিন্তু একজন তিনি ছিলেন একজন মনোযোগী পাঠক, যিনি হাতে কলমে অভিজ্ঞতা নেয়ার চেয়ে নির্জনতা আর মানসিক অনুসন্ধান আর কল্পনা করতে বেশি পছন্দ করতেন। কাজেই এ পর্যন্ত যা দেখেছেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ঠ ছিলেন। চলন্ত শিকারের পিছনে প্রশিক্ষিত আর সুন্দর ঈগলের ধাওয়া ইতোমধ্যেই তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল, আর তিনি ভাবছিলেন যে এটাকে চিত্রকল্প হিসেবে কবিতায় ব্যবহার করা যাবে। চতুষ্পদীর মনোহারী ছন্দ ইতোমধ্যেই তার মনে উঁকি মারতে শুরু করেছিল।

একটি রুবাইয়ের প্রথম দুলাইন মনে গাঁথা হবার পর তিনি আর এগোতে পারলেন না। হাসান তার গল্প বলতে শুরু করেছিল যা ওমরের পুরো মনোযোগ কেড়ে নিল। কেবল আল্লাহই জানেন এ গল্পের কতখানি সত্য আর কতখানি বানানো!
...........................................................
* হাসান আল সাবাহ (১০৫০-১১২৪) ইতিহাসের প্রথম সুগঠিত গুপ্তঘাতক দলের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর দলের লোকেরা হাসিস (একধরনের মাদক) খেত বলে তাদেরকে আরবিতে ‘হাসাসিন’ বলা হত। ওই শব্দটি থেকেই ইংরেজি ‘অ্যাসাসিন’ বা গুপ্তহত্যা শব্দটির উৎপত্তি। বিশিষ্টজনদের হত্যা করার মাধ্যমে দলটি মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যযুগের ইতিহাসকে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছিল। নিজাম-উল-মুলককেও এরাই হত্যা করেছিল বলে ধারণা করা হয়। মার্কোপোলোর ভ্রমণকাহিনীতে তাঁকে ‘পাহাড়ের বুড়ো মানুষ’ (ওল্ডম্যান অব দ্য মাউন্টেন) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘নিজারি ইসমাইলি’ নামে একটি শিয়া উপদলের নেতা ছিলেন এবং ইরানের আলামুত নামক এক দুর্গম পাহাড়ে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য প্রিন্স অব পার্সিয়া’ এই আলামুত দুর্গের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত। ইরানের কাজভিন প্রদেশে তেহরান থেকে ২০০ কি.মি. দূরে দুর্গটির অবস্থান। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোঙ্গলদের অভিযানে দুর্গটি দখল ও ধ্বংস হয় এবং গুপ্তঘাতক দলটিও নিষ্প্রভ হয়ে যায়।

** ফিটজেরাল্ডের অনুবাদের মুখবন্ধে উল্লেখের কল্যাণে ওমর খৈয়াম, নিজাম-উল-মুলক আর হাসান আল সাবাহ, এ তিনবন্ধুর চুক্তির কথা ও দেখা হওয়ার ঘটনা প্রচারিত হলেও, এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এটা যত না বাস্তব তার চেয়ে বেশি মিথ। নিজাম-উল-মুলকের নিহত হবার বছর(১০৯২) আর তদুপরি যে বইটির সূত্রে ফিটজেরাল্ড ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন সেই মূল বইটির রচনাকাল এবং খাটিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকার কারণে এ সন্দেহ জোরালো হয়েছে।

[কিস্তি: পাঁচ: হাসান বিন সাবাহর কাহিনী]

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank