সাহিত্যে ভুল তথ্য, ‘অ্যানাক্রনিজম’, ইত্যাদি...
সাহিত্যে ভুল তথ্য, ‘অ্যানাক্রনিজম’, ইত্যাদি...
পুরানো কাগজপত্র-নথি এদিক-ওদিক করতে গিয়ে যথারীতি এমন কিছু পেয়ে গেলাম যা নস্টালজিয়া বা স্মৃতি-কাতরতা উসকে দেবার জন্য যথেষ্ট অথবা তার চেয়েও বেশি। এসব কাগজের বেশিরভাগই যে বই বা বিশ্ব-সাহিত্য সম্পর্কিত নানা কিসিমের খবর-আলোচনা-সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ঘিরে আবর্তিত হবে তা বলাই বাহুল্য। বাদ-বাকি নিজের পেশার সাথে জড়িত কোন সংবাদ-নিবন্ধ বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট কোন বইয়ের রিভিউ, যেমন- ‘অর্থনীতি নিয়ে ওবামা এবং বিল ক্লিনটন এর একত্রে প্রচারণা’, ডেভিড মারানিস এর ‘বারাক ওবামা: দ্য স্টোরি’ নামক বই থেকে ওবামার প্রাক্তন বান্ধবীর স্মৃতিচারণায় তাঁদের সম্পর্কের কিছু বয়ান, অথবা ‘হোয়ার চায়না মিটস ইন্ডিয়া’ বইয়ের ওপর গার্ডিয়ান পত্রিকায় সিদ্ধার্থ দেব এর রিভিউ, ইত্যাদি ।
আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ঘুরে ফিরে বইকেন্দ্রিক হবে এতে নতুন করে অবাক হবার কিছু নেই। জমতে জমতে এতো পড়ার কাগজ বা রিডিং মেটারিয়াল জমেছে যে বাড়িতে নির্ধারিত জায়গায় আর স্থান সঙ্কুলান করা সম্ভব হচ্ছেনা। বই ছাড়া এসব কাগজপত্রাদির অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সামগ্রি হচ্ছে বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট থেকে প্রিন্ট আউট নেওয়া দুনিয়ার আগ্রহ-উদ্দীপক সংবাদ, পেপার কাটিং, জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারি ঘুরতে যাওয়ার পর সংগৃহীত ক্যাটালোগ, লিফলেট, প্যাম্ফলেট ইত্যাদি।
প্রবাসে প্রায় ছ’বছরের কর্ম-জীবন শেষ করে দেশে ফিরেছি তাও আড়াই বছর হয়ে গেলো। সাথে করে আনা ব্যক্তিগত লাট-বহরের অর্ধেক কার্টন এখনো খোলার ফুরসৎ করতে পারিনি। কারণ, ওই একই কাসুন্দি, ক্রমবর্ধমান পেশাগত ব্যস্ততা। এই না-খোলা কার্টনের বেশ কিছু আমার বইপত্র আর অফিসের কাগজপত্রে ঠাসা। এমনিতে মোটামুটি গোছানো স্বভাব আমার। চেষ্টা করি অপ্রয়োজনীয় কিছু জমিয়ে না রেখে ফেলে দিতে বা কারো দরকারে কাজে লাগলে তাকে দিয়ে দিতে। সমস্যা হচ্ছে সবসময় এতে সফল হতে পারিনা। কাগজপত্রের কথাই যদি বলি, আট-দশ বছর আগের পেপার ক্লিপিং হাতে নিয়েও মনে হয়, ভবিষ্যতে যদি কোন কাজে লাগে, থাক। এই থাক থাক করতে গিয়ে এখন আমি আমার বইপত্রের তাক রাখার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিনা।
আসল কথায় ফিরে আসি। সেদিন এরকম কিছু পুরনো নথি ঘাঁটতে গিয়ে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের একটি ইংরেজি প্রিন্ট-আউট পেলাম। হার্ভার্ড গেজেটে প্রকাশিত বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান বৃটিশ ঔপন্যাসিক আয়ান ম্যাকইওয়ান সম্পর্কিত সংবাদটির শিরোনাম বাংলায় অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায়, ম্যাকইওয়ান তাঁর ভুলগুলি তুলে ধরলেন। উপ-শিরোনামে বলা হচ্ছে, লেখক ব্যাখ্যা করলেন ছোটবড় মিলিয়ে সেইসব ভুল যেগুলো বাস্তবতাভিত্তিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে তৈরি হয়েছে।
প্রায় নয় বছর আগে পড়া নিবন্ধটি এতোই ভালো লেগেছিল যে একটি প্রিন্ট-আউট নিয়ে আজ অব্দি জমা করে রেখেছি। তাতে অবশ্য লাভ ছাড়া ক্ষতি হয়নি। বরং অনেক বছর পরে আবার এটি পড়ার সুযোগ পেয়ে সাহিত্য-পাঠের নির্মল আনন্দ কেমন বিশুদ্ধ অপার্থিব অনুভূতির জোগান দিতে পারে তা আরো একবার উপলব্ধির দারুণ উপলক্ষ্য ঘটলো। যদিও আমার ক্ষেত্রে এই উপলব্ধির সঞ্চারণ নিত্য ঘটমান, অর্থাৎ সবসময় ঘটে যাওয়ার প্রক্রিয়ার ভেতরেই আছে। দিন দিন আনুপাতিক হারে পাঠের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই অবাক আনন্দ অনুভবের মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কথায় বলে, কোনকিছুই বেশি বেশি ভালো নয়। আমার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বেশি বেশি সাহিত্য পাঠের ভালোর দিকটাই বেশি। শুধু মন খারাপ হতে থাকে যখন নিদারুণ পেশাগত ব্যস্ততার ফাঁক-ফোকর গলে পাওয়া সামান্য সময়টুকুর খানিকটা অল্প কিছু লেখালেখির ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজে লাগাতে পারিনা। তখন বেশিরভাগ সময় শারীরিক ক্লান্তি আর মানসিক অবসাদ এর কারণে লেখালেখির জন্য একান্তভাবে দরকারি একাগ্রতা বা মনোনিবেশটুকু প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হই। ফলত দিনদিন লেখালেখির সাথে দূরত্ব এবং একই কারণে পরিমাণের স্বল্পতা। পরিপূর্ণ লেখক হতে চাইলে এর পেছনে সবটুকু সময় ও শ্রম দিতে হবে। অন্যথায় ফলাফলও তেমনি হওয়াই স্বাভাবিক। সবকিছু বিবেচনায় আমি অবশ্য ক্রমশই একজন সিরিয়াস কম্পালসিভ পাঠকে পরিণত হয়ে যাচ্ছি বা ইতিমধ্যে হয়ে গেছি। তাইবা কম কী।
আজকাল লোকজন তো দেখি পড়ার চেয়ে বাখোয়াজের পেছনে সময় অপচয় করছে বেশি। অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর প্রবচনটি অনেক পুরানো হলেও বর্তমান সময়ের চেয়ে এর বেশি যথার্থতা আর কখনো ছিল বলে মনে হয়না। সভ্যতা ও সংস্কৃতির তথাকথিত চূড়ান্ত উৎকর্ষতার যুগে ততোধিক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের অর্থহীন হামবড়া-দাম্ভিক ভাব আর অন্তঃসারশূণ্য ভান দেখে যারপরনাই বিরক্ত আমি। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ নাকি এসব বিরক্তির কথা আবার প্রকাশ করতেও পারবেন না। অন্ততপক্ষে মহান রুশ সাহিত্যিক আন্তন চেকফ তো তাই বলছেন। আজই তাঁর নামে উল্লেখ করা একটি উদ্ধৃতি পড়ে এমনটাই মনে হলো। “খাবার টেবিলে সস না ফেলে খেতে পারলেই তোমার বেড়ে উঠবার শিক্ষা ঠিকঠাক হয়েছে তা নয়। বরং খাবার টেবিলে কেউ সস ফেললে তাকে সেটি নিয়ে কিছু না বলাই তোমার প্রকৃত শিক্ষার পরিচায়ক।” লে হালুয়া!
এমনিতে আমার ব্যক্তি চরিত্রে বিনয়ের কোন অভাব নেই। বরং মাঝেমাঝে নিজের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে দুর্বলতাই মনে হয় যখন কারো মুখের ওপর তার অসততা, হীনমন্যতা বা এরকম কোন চরিত্রগত দোষ-ত্রুটির জন্য দু’চারটে কথা শুনিয়ে দিতে পারিনা। তাহলে কি একজন ব্যক্তি একই সাথে বিনয়ী আর স্পষ্টবক্তা হতে পারবেন না? আমি খুব অল্প সময়ই কারো আচরণে ব্যথিত হয়ে তাকে সরাসরি কিছু বলতে পেরেছি। অথচ, এরকম বলতে পারার সামর্থ্যকে যে কোন মানুষের জন্য একটি শক্তিশালী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে আমার কাছে মনে হয়।
যা হোক, চেকফ আসলেই ওরকম কিছু বলেছেন কিনা তা ঠিক নিশ্চিত নই। যদি বলে থাকেন, প্রিয় লেখক হিসেবে চুপচাপ শুনে গেলাম, যদিও মনে মনে মানতে পারলাম না, যদিও আশ্চর্যজনকভাবে চেকফ যেমনটা বলেছেন, ব্যক্তিজীবনে আমি ঠিক তাই। তারপরও মেনে নিতে কেন অস্বস্তি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছি না। আবার একেবারে যে বুঝতে পারছি না তাও নয়। তবে এ আলোচনা এখানেই থামিয়ে দিয়ে আমি বরং গোড়ার কথায় ফিরে যাই যেখানে ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক আয়ান ম্যাকইওয়ান সম্পর্কে কিছু বলতে চেয়েছিলাম।
২০১২ এর এপ্রিলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহিন্দ্রা হিউম্যানিটিজ সেন্টারে আয়োজিত এক লেকচার সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যাকইয়ান কথা বলছিলেন সৃজনশীল প্রক্রিয়ার পথে বাস্তব প্রেক্ষাপটের ভূমিকা আর এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে। তাঁর বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, ‘দ্য লিভার: যেখানে অবস্থান নিয়ে ঔপন্যাসিক পৃথিবীকে চলমান রাখেন”। ‘আমস্টারডাম’ উপন্যাসের জন্য ১৯৯৮ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার জয়ী লেখকের ‘অ্যাটনমেন্ট’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সিনেমা ২০০৭ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে। ম্যাকইওয়ান তাঁর লেখায় জাদু-বাস্তবতার ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, সারা লেখক জীবনে আমি আমার চরিত্রগুলোর গায়ে পাখা লাগিয়ে দিতে অস্বীকার করেছি। কিন্তু বাস্তবতার সংস্পর্শে থাকার জন্য কখনো কখনো লেখককে চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, এমনকি অটোমেকানিক্সের মতো বিষয়েও ডুব মারতে হয়, সম্ভবত কোন প্রকৃত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছাড়াই।
লিভারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ম্যাকইওয়ান বলেন, এটি হচ্ছে রেনেসাঁ বিজ্ঞান কর্তৃক সমাদৃত ছয়টি সাধারণ যন্ত্রের অন্যতম। বাকিগুলি হলো স্ক্রু, পুলি (কপিকল), আনত তল, কীলক এবং অক্ষদণ্ড। তবে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর গ্রীক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস এর ভাষ্যে লিভার যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেটি আধুনিক বাস্তববাদী লেখকদের জন্য বিশেষ বার্তা বহন করে। আমাকে একটি দাঁড়াবার জায়গা দাও, তাহলে আমি পৃথিবীকে নড়াতে সক্ষম হবো, আর্কিমিডিস এমনটা বলেছিলেন বলে জানা যায়। একইভাবে তথ্য-নির্ভর লেখক পৃথিবী ছাড়া আর কোথায়ইবা দাঁড়াবেন, ম্যাকইওয়ান এর জিজ্ঞাসা। কোন উপন্যাসে প্রকৃত তথ্যের হেরফের হলে অভিজ্ঞ পাঠক সেই উপন্যাসের দুর্ভাগা লেখককে চোখে আঙুল দিয়ে তাঁর ভুল ধরিয়ে দেন।
ম্যাকইওয়ান হার্ভার্ড বক্তৃতাটিকে তাঁর গোটা লেখক জীবনে করা সমস্ত ভুলের একটি পূর্ণাঙ্গ খতিয়ান হিসেবে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেটিতে সেই চিঠিগুলোরও উল্লেখ ছিল যেখানে পাঠকরা তাঁর ভুলগুলো শুধরে দেবার জন্য ছিল উদগ্রীব। এ ধরনের একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে ম্যাকইওয়ান তাঁর ‘ইন দ্য কমফোর্ট অফ স্ট্রেঞ্জার্স’ বইয়ের এক চরিত্রের কথা উল্লেখ করেন যে ভেনিসে এক গ্রীষ্মের রাতের আকাশে তাকিয়ে থেকে ওরিয়ন তারকাপুঞ্জি নিয়ে ভাবনায় বুদ হয়ে যায়। উপন্যাসটি প্রকাশের পর লেখক এক সৌখিন মহিলা জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কাছ থেকে একটি চিঠি পান যাতে ভদ্রমহিলা লিখেন, “গ্রীষ্মকালে ওরিয়ন দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই নিউজিল্যান্ডে যেতে হবে”। এরকম একটি চিঠি পেয়ে লেখক ম্যাকইওয়ান এর বিব্রতকর মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। “কখনো ভাবতে পারিনি যে আমি আসলে পৃথিবীটাকে উল্টো পথে ঘুরিয়ে দিয়েছি”, লেখকের অকপট স্বীকারোক্তি।
কিছু আধুনিক লেখক গভীর গবেষণার মাধ্যমে তাঁদের লেখায় সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতি এড়িয়ে যাবার সরবচ্চ চেষ্টা করেন উল্লেখ করে ম্যাকইওয়ান ‘ইউলিসিসি’ স্রষ্টা আইরিশ লেখক জেমস জয়েস এর উদাহরণ টানেন যিনি স্রোতের তালিকা, ট্রেইন শিডিউল এবং শেষ মুহূর্তের খুঁটিনাটি তথ্যের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। তারপর ম্যাকইওয়ান যোগ করেন এ কথা বলে যে তারপরও এমন কিছু ভুল ঘটে গেছে যেগুলো আর কখনো সংশোধনের সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বৃটিশ কবি লর্ড আলফ্রেড টেনিসন এর নাম উল্লেখ করেন যার ইতিপূর্বে কোন ট্রেন দেখার অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁর লেখায় প্রথম রাতের ট্রেন যাত্রা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি একে খাঁজের মধ্য দিয়ে চলমান পরিবর্তনের ব্যঞ্জনা হিসেবে রূপায়িত করেন। বিষয়টি গীতিকাব্যময় এবং রূপকার্থে উপযুক্ত হলেও টেকনিক্যালি সঠিক নয়। ট্রেইন রেইল ট্র্যাকের ওপর দিয়ে চলে, খাঁজের ভেতর দিয়ে অবশ্যই নয়।
আবার এমন কোন কোন কবি-লেখক আছেন যারা তথ্যগত এসব ভুল-ভ্রান্তির ধার ধারেন না মোটে। ম্যাকইওয়ান একটি কবিতার নাম উল্লেখ করেন যেখানে পেঙ্গুইনকে ভুলবশত দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্রতটে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সেই নির্দিষ্ট কবিতার কবির নির্বিকার উচ্চারণ, “আমার কবিতায় ওই পেঙ্গুইনগুলো ওখানেই অবস্থান করে”! কী দারুণ পোয়েটিক ডিফেন্স!
যা হোক, এ ধরনের আরও একাধিক উদাহরণ দিয়ে ম্যাকইওয়ান বলেন, এভাবে সময়ের সাথে সাথে তথ্য-সংবেদনশীল পাঠকদের সাথে তাঁর চিঠি বিনিময়ের ধারাটি এক প্রকার উত্তম যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়। হতে পারে এই পত্র-লেখকদের মধ্যে কেউ ছিলেন প্রফেশনাল তথ্য যাচাইকারী, কেউবা স্কুলের ছাত্র, অথবা কেউ কেবলই ভুল ধরিয়ে দিতে চেয়েছে; কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল যে প্রকৃত সত্য এবং নিখুঁত তথ্য একটি উপন্যাসের প্রকৃষ্ট গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম।
ম্যাকইওয়ান এর হার্ভার্ড বক্তৃতার ওপর লেখাটি পড়তে পড়তে আমি অনেক বছর আগে আমার অনার্স এর ছাত্রজীবনে ফিরে যাই। সেসময় সাহিত্যের খুঁটিনাটি জানার অভিপ্রায়ে আরও অনেক তত্ব-সমালোচনামূলক বইয়ের সাথে পড়েছিলাম বিখ্যাত ব্রিটিশ সমালোচক ডক্টর স্যামুয়েল জনসন এর ‘প্রেফিস টু শেক্সপিয়ার’ যেটিকে শেক্সপিয়ার বা তাঁর সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা গ্রন্থ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই গ্রন্থে জনসন শেক্সপিয়ার এর নাটকের ভালো-মন্দ বা দোষ-গুণ এর একটি তালিকা তুলে ধরবার চেষ্টা করেন। বইটি পড়তে গিয়ে আমি সম্ভবত প্রথম ‘অ্যানাক্রনিজম’ বিষয় বা ধারণাটির সাথে পরিচিত হই। ‘অ্যানাক্রনিজম’ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে কালের অসঙ্গতি বা বৈষম্য, অর্থাৎ এক যুগ বা সময়কালের ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা, ভাষা বা পোশাক এর ব্যবহার ইত্যাদিকে ভুলক্রমে অন্য সময়কাল বা যুগের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা বা জড়িয়ে ফেলা। শেক্সপিয়ার এর নাটকের ত্রুটি দেখাতে গিয়ে জনসন এরকম কিছু ‘অ্যানাক্রনিজম’ এর উদাহরণ উল্লেখ করেন। ভাবছি, সময় পেলে সামনের কোন লেখায় জনসন এর ‘প্রেফিস টু শেক্সপিয়ার’ পাঠজনিত আমার কিছু ভাবনা-প্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস নেওয়া যেতে পারে।
মালেকা পারভীন: লেখক ও গল্পকার।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন - ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৩] - শোকস্রোতের নীলমণি: নাট্যদিশারী আফসার আহমদ
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন, [পর্ব-২] - ভ্রমণকাহিনী: ইরানি গোলেস্তান আর ঝর্ণার গল্প
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৩
- রশীদ হায়দার আর নেই
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ২৪
- সিলভিয়া প্লাথের শেষ বই