সায়ন্থ সাখাওয়াৎ-এর তিনটি কবিতা
সায়ন্থ সাখাওয়াৎ-এর তিনটি কবিতা
বৈপরীত্য
মরে গিয়ে বেঁচে গেছে যারা
তাদের জন্য শোক নয়, হিংসে হয়
এই অক্সিজেন শূন্য মৃত্যুপুরীতে
হাঁটাচলা খাওয়া কাজ করা মানেই কী বেঁচে থাকা!
আকাশে তাকালে শকুনের ঝাঁক
মাটিতে তাকালে ভয়ংকর সাপ
বায়ু-জলে অদৃশ্য বিষের উপদ্রব
বিশ্বাস ঘুমায় গুটিশুটি জাদুঘরের এক কোনায়।
অনুভূতিহীন মগজ মগ্ন রুটিন কাজে
পাখা কেটে দেওয়া প্রজাপতির মত জীবন
কোটরে ধরে রাখা একজোড়া স্বপ্নহীন চোখ
তবু বেঁচে আছি এই ঢের, বলে বগলবাজিয়ে হাসব?
আসমানী-জমিনী কিতাবের জ্ঞান কিতাববন্দি
ভালোবাসা বিক্রি হয় মতিঝিলের ব্রোকার হাউজে
বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদে মা, ছেলে তার মুখোশের কারবারি
অভিজাত বেশ্যার খিলখিল হাসিতে নাচে পচা শহর।
টকটকে লালজবা ভেসে যায় নর্দমার জলে
ফুলদানিতে হিসহিস করে ফণাতোলা সাপ
ভরসার হাতের আঙুলে হ্যামলকের প্রলেপ
বৈপরীত্যের ঠিকানা জেনে গেছে আজ অশুভ ডাকপিয়ন।
এমন দিন আসে
মাঝে মাঝে এমন দিন আসে
যখন ভেতরটা তোলপাড় অভিমানে
নির্লজ্জের মত সশব্দে কাঁদতে ইচ্ছে করে
লোনাজলে মুছে দিতে ইচ্ছে করে সব পাপ
অথচ চোখ তখন চৈত্রের শুকনো ফাটা মাঠ।
এমনও সময় এসে দুয়ারে দাঁড়ায়
যখন খা খা শূন্যতাই সম্বল
অর্জনের থলিতে অসংখ্য ফুটো
সুতোছেঁড়া পুঁতির মালার মত
খসে পড়ে ইহলৌকিক বিশ্বাস।
কখনো কখনো এমন দিন আসে
যখন একেবারেই সূর্য হাসে না
রাতের পৃথিবী জোছনায় ভাসে না
আঁধারের জরায়ুতে জন্ম নেয়া পাপ
দৈত্যের মত চেপে বসে পৃথিবীর বুকে।
কখনো কখনো এমন দিন আসে
যখন অবরোধের ডাক দেয় অক্সিজেন
ফুসফুস তড়পায় গলাকাটা মুরগীর মত
তবু সেই তামাশা উপভোগ করতে
আজরাইল থমকে দাঁড়ায় অদূরে।
কখনো কখনো এমন দিন আসে
যখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না
একটা শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করি
দারুণ খড়ায় গলা ফাটানো ব্যাঙের মত
আর্তনাদেও মন ভোলে না স্রষ্টার।
তবু বেঁচে থাকি বেঁচে থাকতে হয়
কুনোব্যাঙের মত আঁধার গৃহকোণায় ।
তোমার কাছে যাব বলে
তোমার কাছে যাব বলে
কলি হাসে ফুলে ফুলে
কামিনী ডাকে, আয়
ফুলকে রেখে তোমায় দেখে
আনমনে সব স্বপ্ন এঁকে
সময় বয়ে যায়।
তোমার কাছে যাব বলে
কাশফুলে ঢেউ বয়ে চলে
শান্ত নদীর কূলে
পাখির গানে সবুজ বনে
উতাল হাওয়া অবুঝ মনে
স্বপ্ন দুয়ার খুলে।
তোমার কাছে যাব বলে
লাল সূর্য সাত-সকালে
ছড়িয়ে দেয় হাসি
শিশির ভেজা ঘাসের পাতায়
আলোর চুমু মুক্তো দানায়
প্রেমের পিয়াসী।
তোমার কাছে যাব বলে
চাঁদমাখা রাত আপন ভুলে
হাত বাড়িয়ে থাকে
কোজাগরী রূপোর ঝিলিক
রহস্যময় রাত্রি অলীক
মধুর সুরে ডাকে!
তোমার কাছে যাব বলে
হাজার তারায় আলো জ্বেলে
পথ দেখাল যেই
তুমি তখন অন্য ধ্যানে
অন্য কারো পথ পানে
আমার জন্যে নেই!
আমি এখন একলা পথে
জোনাকজ্বলা আলোর সাথে
একলা কথা কই
আপন মনে আকাশ দেখি
স্বপ্নপোড়া ভস্ম মাখি
কারো আমি নই!
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
সাহিত্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন - ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৩] - শোকস্রোতের নীলমণি: নাট্যদিশারী আফসার আহমদ
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন, [পর্ব-২] - ভ্রমণকাহিনী: ইরানি গোলেস্তান আর ঝর্ণার গল্প
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৩
- রশীদ হায়দার আর নেই
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ২৪
- সিলভিয়া প্লাথের শেষ বই