শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কী পেলাম || আমিত্রাক্ষর কবীর

আমিত্রাক্ষর কবীর

২২:৩৮, ১০ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ২২:৪৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২১

১১৮৪

কী পেলাম || আমিত্রাক্ষর কবীর

নতুন কুঁড়ির শিল্পী ছিল সে, সেই ছোটবেলায়। তখনকার দিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে শিশু শিল্পীদের সুযোগ করে দিতে সারা দেশে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করে টিভির পর্দায় পারফর্ম করার সুযোগ দেয়া হত। সেকালে টিভিতে দেখা বা দেখানোর সুযোগ ছিল শুধু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতেই।  

সে বিবেচনায় নতুন কুঁড়ির শিল্পী হওয়া যেমন ছিল স্বীকৃতির, তেমনি মর্যাদার। রীতিমনি সেই সম্মানের অধিকারিনী হয়েছিলেন সেই ছোট বেলায়ই। তার স্কুল-কলেজের পড়াশুনাও স্বনামধন্য কলেজিয়েট স্কুলে; পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গর্ভনরের স্ত্রী, যিনি নিজেও খুবই প্রভাবশালী এক অস্ট্রিয় বংশোদ্ভুত নারী, তারই নামে নামকরণকৃত রীতিমনির স্কুল কাম কলেজের। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। যার শৈশব এমন ঐশ্বর্যপূর্ণ, কিন্তু বড়বেলা এত ব্যর্থতা, নিরানন্দ আর গ্লানিময়, যা অচিন্তনীয় ব্যাপারই বটে।

তার বিয়ে হয়েছিল, নিজের পছন্দ করা পাত্রের সাথেই। তার সুখী হওয়ারই কথা ছিল। নিঁখুত দাম্পত্যের অধিকারীও। ব্যাপারগুলো সেভাবে ঘটেনি। বিয়ের পূর্বেই শাশুড়ির সাথে বনিবনা না হওয়ার সূত্রপাত ঘটে।

জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠানে শাশুড়ি মা উপস্থিত হন নি। আগের একটা রেওয়াজ ছিল পদ্মা-মধুমতি বিধৌত অঞ্চলে যে মা ছেলের বিয়েতে যান না বরযাত্রী। বাড়িতে থেকে যেয়ে বধূবরণ করেন। এটা সেরকম কারণ না। তাছাড়া আজকালতো রিসিপশন হয়। বর ও কনেপক্ষ মিলে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে। শাশুড়ি যাননি রাগ করেই। বিয়ের আগে থেকেই পুরোটা রাজী ছিলেন না। কথাবার্তা চলাকালে আরো কিছু উল্টোসিধে কথায় জাটিল্য ঘনীভূত হয়। প্রেমের বিয়ে, এদিকে বাড়িতে কী কথাবার্তা হচ্ছে সবই হবু বর উগড়ে দিতেন রীতিমনিকে। রীতিমনি পইপই করে শুনে নিয়ে মায়ের সাথে শলাপরামর্শ করে ধেয়ে যেতেন বিবাহপূর্ব অবস্থায়ই। বিয়ের কেনাকাটা, তত্ত্ব পাঠানো নিয়েও কিছু মুখ কালাকালি হল। এসব সত্ত্বেও নির্ধারিত দিনে রীতিমনির পছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। রীতিমনি দমবার পাত্রী নন একদমই। তার সব ভোগান্তিই মনে রাখলেন। এতে শুরুতেই শুরু হয়ে গেল। কী, অবধারিতভাবে অশান্তি। কথাবার্তায় কাউকেই সামান্য ছাড় দেয়া ধাতে নেই নতুন বউয়ের, বুঝতে বাড়ির সকলের দিন লাগলো না। তার সীমিত ধৈর্য্য, কথার চাবুক আর সৌজন্যের ঘাটতির অসংখ্য ঘটনা আছে। সবচে’ বেশীটা বললেই একটি থেকেই পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়। বিয়ের বছর খানেকের মধ্যেই কোন একসময় রীতিমনি মন্তব্য করলেন তার ছোট ননদের সন্তানের পিতা তার ননদাই নন, অন্য কেউ। মারাত্মক কথা, প্রহেলিকার চেয়েও গুরুতর। বড় ননদ প্রবাসী, তার অধ্যাপক স্বামীকে সরকার বিরোধী লোক বলে একেতাকে বলতেন। কিন্তু প্রবাসী আত্মীয়র এই সংঘাতে খুব ভূমিকা ছিল না, ভৌগলিক দূরত্বের জন্য। কিন্তু সন্তানের পিতৃত্বের অপবাদ একে অসহনীয় ও চূড়ান্ত রকমের মৌখিক আঘাত, অধিকন্তু রীতিমনির শাশুড়ির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে সেই ননদকে এভাবে বিষিয়ে তোলা কোন বিবেচনায়ই শুভফল বয়ে আনতে পারে না। এসব জটিলতায় নিজেকে জড়িয়ে জীবন নিয়ে বাজি ধরা শুরু করলেন রীতিমনি। যেভাবে হোক তাকে জিতে থাকতে হবে তার। এতে যাই ঘটুক জীবনে তাতে কিছু আসে যায় না। এজন্য মোক্ষম অস্ত্র বানালেন মিথ্যা অভিযোগ অবিকল সত্যের মত করে বলে প্রতিপক্ষ ঘাঁয়েল করা। যেমন স্বামী আরিফ আহম্মেদের এক বন্ধুকে কেঁদেকেটে একদিন বললেন : আরিফ প্রায়ই বলে আমার ছোট মামার সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক। . . . আর বাকীটা কান্নাকাটির বাড়াবাড়িতে আরও সংবেদনশীল ও গুরুতর করে ফেললেন। অথচ আরিফ আহমেদ, রীতিমনি রীতিমনি জপ করতে করতে জীবন সাঙ্গ করতে পারলেই সার্থক হন। একটা ট্রেনিং এ চাকরী জীবনের প্রায় শুরুতে থাইল্যা- গিয়েছিলেন আরিফ আহমেদ। অন্যরা যেখানে সেই সুযোগ থেকে সেভিংস করলেন, আহমেদ সব উজাড় করে নব পরিণিতা মানে রীতিমনিকে নিয়ে ব্যাঙ্কক,পাতায়া, ফুকেট ঘুরে এলেন। কচি ডাব, ভিতরের তুলতুলে সাদা অংশ কেটে, বরফের টুকরার উপরে রেখে ঠা-া করার পর মুখ খুলে পরিবেশন করে পাতায়ায়। সে ভারি কায়দার ব্যাপার। সেই আকর্ষণীয় পরিবেশনে শুভ্র ডাব জোড়া স্ট্র দিয়ে তাদের চুমুকরত অবস্থার একটি ছবি তুলে দেশে ফিরে ব্যাঙ্কক থেকে কেনা ক্রিস্টালের অভি শখের ফটোফ্রেমে রেখে ছিলেন। ফুকেটে সমুদ্র ¯œান করলেন সূর্যোদয় এবং অস্ত যাওয়ার সময়ে দুবার করে। অনেক দামের রকলবস্টার দিয়ে সমুদ্র তীরে ডিনার করেছিলেন আহমেদ-রীতিমনি। ব্যাঙ্ককে রেইনবো, সেন্ট্রাল . . . বড় মলে যেমন ঁঢু দিলেন তেমনি সুকুমভিত, প্রাতনাম, এমবিকে মার্কেট . . . এসব সস্তা মার্কেট চষে বেড়ালেন। দাম্পত্যকে আরও উপভোগ্য করার মানসে দামী কয়েক ফাইল লুব্রিকেন্ট কিনে নিলেন। শান্তি রক্ষায় যেয়ে আফ্রিকা থেকে অনেক কিছুর মধ্যে এমবুশ করা থ্রিডি টেচকারের কুমিরের চামড়ার যে অনেক দামী হ্যান্ডব্যাগ এনেছিলেন রীতিমনির জন্য, তার সাথে মিলিয়ে জুতা কিনে দিলেন প্রেয়সীকে।

আহমেদের স্ত্রীর প্রতি প্রেমময়তা তার পরিচিতজনদের মধ্যে এর আগে পরেও সুবিদিত ছিল। এমন এমন ঘটনা আছে যা থেকে সহজেই তার আবেগ, আন্তরিকতা, অনুভূতি বোঝা যায়। একবার সুন্দরবনের করমজলে বেড়াতে যেয়ে কাঠের যে দীর্ঘ সাঁকো দিয়ে পর্যটকরা আরো কিছুটা ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পান, সেটার উপর দিয়ে রীতিমনি হাঁটতে পারছিলেন না হিল পরে। আহমেদ অন্য সঙ্গীদের কটাক্ষের ধার না ধেরে ঘন্টা দেড় দুই পুরো সংরক্ষিত বনটি ঘুরে বেড়ালেন রীতিমনির স্যান্ডেল হিল হাতে করে। খালি পায়ে আরাম করে বনের মধ্যে চলে যাওয়া কাঠের সাঁকোর উপরে হেঁটে হেঁটে রীতিমনি চোখ জুড়িয়ে বনের সৌন্দর্য অবগাহন করলেন। ঢাকায় ফিরে আসার সময় সে যাত্রায় ফেরীর টয়লেটে যেয়ে ভিমড়ি খাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে রীতিমনি ছুটে বেরিয়ে আসেন, আহমেদ যতটুকু পারা যায় ধূয়ে টুয়ে ব্যবহার উপযোগী করে দিলেন। সঙ্গীরা সে যাত্রায়ও মিটিমিটি হাসলেন। তার তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই আহমেদের।

এই যাত্রার আগে ও পরে ঘটেছিল তাদের দাম্পত্য জীবনের সবচে’ বড় ট্রাজেডি। এই ট্যুরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপাতঃ সুখী এই প্রায় নবদম্পতির সংঘাতময় জীবনের কথা বাইরের দুনিয়ার সামনে আসে নি। ঝগড়াঝাটির প্রায় বাড়াবাড়ি রকম হয়ে যাওয়ায় আহমেদ তার হোস্ট বন্ধুকে একবার বলতে বাধ্য হচ্ছিলেন প্রোগ্রাম বাতিল, আবার কিছুক্ষণ পরই ‘ঠিকআছে আমরা শেষপর্যন্ত আসছি’। এত দোদুল্যমানতা হচ্ছিল কারণ তাদেরও ঘটনাগুলি দ্রুত পরিবরর্তনশীলভাবে ঘটছিল এই পরম্পরায়- ঝগড়া - রীতিমনির ছোট মামার বরাবরের মত অনুপ্রবেশ - তার পক্ষপাতিত্বপূর্ণ মধ্যস্থতার চেষ্টা - আবার উত্তেজনা - অবশেষে সাময়িক মিটমাট। একই কারণে হোস্টকে জানাতেও হল এই অশান্তির সূত্রপাত কোন সুদূরে প্রোথিত। এই প্রথম পরিবারের বাইরে এল দাম্পত্য কলহের অন্ধকারময় দিক। এই ধরণের শালিস বৈঠকে বিবাদমান দুইপক্ষেরই গভীর আবেগ ও আবেগজনিত উত্তেজনায় হৈচৈ বেশী হয়, ঠা-াভাবে, যুক্তির নিরিখে আলোচনা খুবই কম হয়। এজন্য সুন্দরবনের প্রোগ্রামে ক্যানসেল আবার যেমন কথা ছিল তেমন . . . এমনই মুর্হুমূহ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তাদের বেড়ানো হয়েছিল। সুন্দরবন যাত্রার উদ্দেশে এসে, মফ:স্বলের শহরের বাগেরহাটের নিউমার্কেটে রীতিমনিকে নিয়ে যেয়ে সকলের জন্যই বিড়ম্বনা হল। ছেলে-বুড়ো অনেকেই জড়ো হল রীতিমনিকে দেখতে, ‘নায়িকা, নায়িকা’ বলে একটা শোরগোল বেঁধে গেল। আসলে রীতিমনিকে টেলিভিশনে এখনো সপ্রতিভভাবেই দেখা যায়। কিন্তু নায়িকা রূপে নয়। এঘটনার আকস্মিকতায় এই দম্পতিকে আতিথিয়তাকারী পরিবার ও আহমেদ কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও সকলেরই মনে গর্ব হয়েছিল। এমন একজন কিছুটা পাবলিক ফিগারের সংস্পর্শে তারা আছেন ভেবে। 

সুন্দরবন বেড়াতে আসার মাস দুয়েক আগে বাগেরহাটে আহমেদের যে বন্ধু তাদের এই ট্যুর ব্যবস্থাপনায় আছেন এবং যার বাড়িতেই আহমেদ সস্ত্রীক উঠেছেন, তাকে নিয়ে একজন  হাতযশওয়ালা জ্যোতিষীর কাছে গেছিলেন আহমেদ। জ্যোতিষী  অনেক কথার মাঝে একটি রিমার্ক দিয়েছিলেন আহমেদকে, এই বলে, আপনি আগামী একবছরের মধ্যে মেয়ে দ্বারা হেনস্তা হবেন, তবে তিনি বাইরের কেউ নন, নিজের কেউ।
একথাটায় ব্যাখ্যা চেলেও জ্যোতিষী আর কিছু ভেঙ্গে বলতে চাননি। যথারীতি এই বিশ্লেষণ আর ডিকোডিং করতে করতেই তারা দু’জন বের হন চেম্বার থেকে। 
- ভাই, উনি বললেন, নিজের কেউ, তাহলে তো আপনার দুই বোন আর ভাবী। কেমনে কি?
- বাদ দেন তো ভাই। জ্যোতিষীদের কথা।
- না। এতটা লাইটলি নিতে পারছিনা আমি। এটাও একটা বিজ্ঞান বটে।
- যা বলেন আপনি।
- আমাদের রোগ হলে ডাক্তারের কাছে গেলে উপসর্গ জেনে তিনি হয়ত বলেন এটা ভাইরাল ফিবার। এটা টাইফয়েড। এটা নিউমোনিয়া। কিভাবে? বহু রোগীর উপর গবেষণা করে একটি সাধারণ উপসর্গর আলাদা আলাদা তালিকা হয়েছে। সেগুলির সাথে মিলিয়ে ঠিক করা হয় কোনটা কোন প্রকৃতির অসুখ। ঠিক ?
- তাতে কী হল?
- জ্যোতিষশাস্ত্রের হাজার মানুষের হাতের রেখার একটা বহুবছরের গবেষণার পর ধারণাটাও তৈরী করা হয়েছে যে, এমন রেখা থাকলে সম্ভাব্য ভবিষ্যত কী কী। এখানেই মিলটা আমি পাই জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে চিকিৎসাশাস্ত্রের।
- সেটা বুঝলাম। আপনার কথাটি উড়িয়ে দিতে পারি না এই আসপেক্টে।
- ধরেন আপনি একটি প্রোগ্রামে যাবেন। সে ব্যাপারে একটা আগাম চিত্র থাকলে সুবিধা না। ধরেন অনুষ্ঠান স্থল, হলের বর্ণনা, এমিনিটিস, ক্যাপাসিটি, সিট প্ল্যান . . .। কী-কী ইভেন্ট থাকবে, কতক্ষণ, কোনটার পর কোনটা . . . এসব আরকি।
- সেকথা ঠিক। কিন্তু এখানে মিল কোথায় দেখছেন?
- তারপরও অনুষ্ঠানসূচি বদলায়, যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে, শুরু-শেষ ঠিকসময়ে হয় না। তবু জেনে হাজির হলে প্রস্তুতিতো একটা থাকে।
- তো
- জ্যোতিষীও তেমনি। একটা পূর্ব প্রস্তুতির সুবিধা। আর . . .
- আর কি?
- ধরেন আমরা ঠিকঠাক মত অনেক কাজ করি। কার্যকারণ জানিনা। যেটা গ্রামার, সবকিছুরই তো একটা গ্রামার থেকে থাকে।
- জ্বি
- জ্যোতিষী ভাল হলে কিছু বেসিক কথা বলে দিতে পারেন। সেটার সাথে অতীত মিলিয়ে আপনার মনে হবে এমনই তো ঘটে আসছে। আবার জানার পর থেকে মিলিয়ে দেখবেন, মনে হবে এমনই তো ঘটে থাকে।
- তা বেশ। তাহলে মেডিক্যাল সায়েন্স আর গ্রামার। হা-হা-হা।

ফিরতে ফিরতে এমন সব কথাই হয়েছিল। কিন্তু তখনো  ডিকোড করে ওঠা যায়নি। যা বাগেরহাটের প্রোগ্রামটা ফাইনালি করে ওঠায় জানা যায়। তারপরও ট্যুরটি সবভাবে সফল করতে ব্যবসায়ী বন্ধুটি ও তার পরিবার সাধ্যমত করে গেলেন। আয়োজনে ত্রুটি রাখেননি কোন। আরিফ আহমেদ দম্পতির অবস্থানকালে তারা এক রাঁধুনী কন্টাক্ট করলেন, কুন্তি নামে। ছোট শহরে সবাই চেনে। বাড়িতে ঘরোয়া মেহমান হলে তাকে ডেকে নেয় সামর্থ্যবান লোকেরা। মাছ ছড়ানো, আমড়ার খাট্টা, ভেটকি কালিয়া, চিংড়ি মালাইকারী, পটল দোলমা, খাসীর রেজালা . . . নানা পদ রান্না করে একেকদিন বেশ সমাদৃত হলেন কুন্তি খুড়ি। এমন রান্না একটু সতর্ক আর পাঁকা হাতে করতে হয়। সামান্য এদিক-সেদিক হলে স্বাদ ঠিক আসে না। কুন্তি খুড়ির হাতে সবই পারফেক্ট হয়ে নামলো খড়ির চুলা থেকে।

আরিফ আহমেদের ব্যবসায়ী বন্ধুটির মাছের ঘের আছে, চিংড়ি মাছের উৎপাদন হয় সেখানে। ভেঁটকি, পারশেরও চাষ হয় আজকাল। তিনি স্থানীয় সমাজসেবামূলক সংগঠন, সাহিত্য সংসদ, প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। তাই মফঃস্বলের মৎস্যজীবী হলেও দার্শনিক বুদ্ধি বিবেচনা আছে। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা শেষে এলাকার লাভজনক পৈতৃক ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। ঢাকা ও মফস্বল মিলিয়ে থাকেন। পরিবার ঢাকায় স্থায়ী হয়েছে। তিনি আসা যাওয়ার উপর থাকেন। পরিবারের অন্যান্যরা উৎসব, পার্বণ কোন উপলক্ষ হলে চলে আসেন। এবারও যেমন এসেছিলেন সকলে মিলে। এই সুবাদেই আহমেদের অতি ব্যক্তিগত ব্যাপারে জীবনবোধ প্রদায়ক দার্শনিক বন্ধু বনে গেলেন। আরো একটু সুবিধা এখানে ছিল, তা হল মোটামুটি দাম্পত্য ঝামেলার অনেকটাই জানা, নতুন করে বলার দরকার পড়বে না।
আরিফ আহমেদ এসব নিয়েই নতুন ফ্রেন্ড কাম ফিলোসফারকে আরও অনেক একান্ত ব্যক্তিগত কথা আলাপ করলেন প্রসঙ্গক্রমে। বেশ কিছুদিন আগে একটি নাম-সাকিন বিহীন গল্প বলেছিলেন, ‘এক মহিলা তার প্রেমিককে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে নেন। প্রেমিকের সাথেও যোগাযোগ ছিল, সত্য-মিথ্যা বলে তাকে কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘুণাক্ষরেও বিয়ে হয়ে যাওয়ার ক্লাইমেক্স জানতে-বুঝতে দেননি। এভাবে সাত-আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এক কমন পরিচিতের কাছ থেকে প্রেমিক খবর পান তার প্রেয়সী সাত-আট মাস ধরে অন্যত্র সংসার করছেন।’ বলেছিলেন একটা উদাহরণ হিসাবে কথায় কথায়। আহমেদ এবার ভেঙ্গে বললেন এটি তার জীবনেরই গল্প, রীতিমনিই এমনটি করেছেন। হঠাৎই বিয়ের খবরে বজ্রাহত প্রেমিক ছেলেটির নাম বাবলু। বাবলু একদিন দিগবিদিক শূন্য হয়ে আহমেদকে ফোনও করেছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে যেয়ে বাবলুর সাথে পরিচয় রীতিমনির। এ সম্পর্ক অল্প দিনেই গভীর প্রণয়ে গড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলিতে। প্রেমে পড়ে আবেগ আচ্ছাদিত ছেলেরা যেমন হয়, বাবলু তার ব্যতিক্রম ছিল না। তখনকার দিনে বেবী ট্যাক্সি আর পরে সিএনজি বাহন হিসাবে ঢাকার রাস্তায় নামলে, দুই সময়ই বাবলু বরাবরই রীতিমনিকে নামিয়ে নিজে পরে নামতেন। ভয় ছিল যদি রীতিমনিকে নিয়েই বেবী বা সিএনজিওয়ালা চলে যায়। একবার ক্ষেপলেন রীতিমনি। বাবলুকে দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিদেশে চলে যেতে হবে। বাবলুও নাওয়া-খাওয়া ভুলে আইএলটিএস পরীক্ষা সহ বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতিতে মত্ত হয়ে গেলেন। এসব হাঙ্গামায় তার একাডেমিক পড়াশুনায়ও ভালই ব্যাঘাত ঘটল। তাতে কী বা যায় আসে। অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার পর রীতিমনি কাঁদো কাঁদো হয়ে একদিন বললেন সে পরিবারের একমাত্র মে’। তাকে বাবা-মা বিদেশ বিভূঁইয়ে হতে দেবেন না। কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো বাবলুর বিদেশ যাওয়া চলবে না। বাবলুও সবক্ষতি হাসিমুখে সয়ে ক্ষ্যান্ত দিলেন বিদেশ যেতে। দিন কাটতে লাগলো। এর মধ্যে একদিন বায়না ধরলেন বাবলুকে আর্মি হতেই হবে। দ্রুত প্রতিষ্ঠা-লাভে এই-ই মোক্ষম। বাবলু এবার আই এস এস বি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যপৃত হলে, যাতে আর্মি হওয়া যায়। চূড়ান্ত মুহূর্তে আবার তাকে থামিয়ে দিলেন রীতিমনি। অনার্সের শেষ বর্ষ থেকে শুরু হল বিয়ের প্রস্তাবের ধুম। সত্য বা মিথ্যা যাইহোক রীতিমনিকে এখনই বিয়ে করে নিতে ছেলেরা লাইন ধরছে, আর একেকদিন একেকজনের বর্ণনায় মুখরিত হন বাবলুর সকাশে। বাবলুতো এসব শুনে প্রতিদিনই ভিমরি খান একেকবার। অসনীয় ঠেকে তার পাত্রদের প্রোফাইল শুনতে, তবু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়, এক. রীতিমনি নাহলে রাগ করেন, দুই. এই প্রস্তাবগুলি ফিরিয়ে দিতে  একেকদিন একেকটি বুদ্ধি বাতলে দিতে হয় বাবলুকেই। রীতিমনির প্রেমের এমনই পাগলপারা অবস্থা ছিল বাবলুর যে আজও কেউ যদি বলেন ২০০০ থেকে ২০০৩, ২০০৪ সালের দিকে আমি সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় থাকতাম। বাবলু বলেন, ভাই ঐ সময় ঐ এলাকায় রীতিমনিকে নিয়ে রিকশায় কত ঘোরাঘুরি করেছি। হয়ত একই রিকশা আপনি ইশারা করেছেন, কিন্তু চালক আমাদের আগে দেখায় রিকশায় আগে আমরা উঠে গেছি। আমাদের তখন পরিচয় ছিল না বলে আমরা মুখোমুখি হলেও কোনপক্ষেরই স্মরণ রাখার কথা না। আজও এমনই স্মৃতিকাতর বাবলু।

সুন্দরবন ট্যুরে হোস্ট করা বন্ধু ঘটনাক্রমে আরিফ আহমেদ - রীতিমনির অনেক কিছুই জেনে যাওয়ায়, আরিফ আহমেদের বাসায় ছোট খাটো শালিসী বৈঠকে এরই মধ্যে বসা হয় তাকে নিয়ে। হাল আমলের বিল্ডিং-এ আহমেদের বসবাস। সরকারী কোয়ার্টার হলেও মেইট্যানেন্স সর্বোত্তম। আহমেদ ইউনিফর্ম অফিসার। ইউনিফর্ম ম্যানেজমেন্ট খাওয়া-পরা-বাসস্থানে ত্রুটিহীন টিপটপ তা কারো অজানা নয়। আহমেদের ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরও ছিমছাম গোছাল। বসার ঘরে সেন্টার টেবিল ভর্তি নানা স্যুভেনীর। বিভিন্ন দেশ, জাতি, সংস্কৃতি’র প্রতিনিধিত্বকারী। একটি পটারীতে স্প্যানিশ মেজাজে কলকীর নকশা আঁকা হ্যান্ডপেইন্টে, আসমানী জমিনে। সেটা দিয়ে ল্যাম্পের বেস বাধানো হয়েছে। ঘরের মূল আলো নিভিয়ে ল্যাম্পটি প্রজ্জ্বলিত করলে মায়াবী আবহ সৃষ্টি করে। সাইড টেবিলে আফ্রিকান উডওয়ার্কের বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক ছোট শিল্পকর্ম। জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে সংগৃহীত। শোকেসে সারিসারি ক্রেস্ট। শৌর্য আর ক্ষিপ্রতার আলোকরশ্মি রিফলেকশনে ঠিকরে আসছে। সাহসিকতা, সাফল্য আর শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জয়ের গৌরবোজ্জ্বল নিকট অতীতের স্বাক্ষরবহন করছে স্মারক সম্মাননাগুলি। দেয়ালে কেনিয়ার আইকনিক আর্টের একটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং। আরেক দেয়ালে সগার (স্টিক) ও সোর্ড থরে থরে সাজানো কাঠের স্ট্যান্ডের উপরে। সিলেটি অন্তত পোনে একইঞ্চি ব্যাসের পুষ্ট বেতের ম্যাগাজিন হোল্ডারে টাইম, নিউজ উইক, রিডার্স ডাইজেষ্ট প্রভৃতির চলতি সংখ্যা, নিজেদের জার্নাল ও মাসিক ম্যাগাজিন। আরেকদিকে চাবাগানের শিকড়ের উপরে গ্লাস জুড়ে নির্মিত সাইড টেবিল, আরও কয়েকটি কাঠের ফ্ল্যাট সাইড টেবিল। সেন্টার টেবিলে যেহেতু স্যুভেনীরের জন্য তিল ধারণের জায়গা নেই, সাইড টেবিলেই মেহমানদের খাবার পরিবেশন করা হয়। এই রুচিবোধ ঢাকা পড়ে যায় যখন এই সুসজ্জিত বসার ঘরেই হৈ হট্টগোলে প্রায়ই ঘরোয়া শালিস বসে। এসব সালিস বৈঠকের অভিযোগে নতুন কিছু ওঠে না, পুরাতন অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তিই ঘটে বেশী।
আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে আহমেদ ধৈর্য্য হারিয়ে বলে বসেন, 
- আমি আফ্রিকা থেকে ফোন করে, বাংলাদেশ সময় গভীর রাত, তোমার পরিবর্তে এক ছেলের গলা শুনি। অত রাতে তোমার সেলুলার ফোন অন্য কারো কাছে থাকত কেন? তবু কিছু বলি নি সেদিন আমি। সেটা না হয় আগের কথা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু টি টোয়েনটি ম্যাচে স্টেডিয়ামে যেভাবে তুমি নাচানাচি করলা, তাতে কতজন কত কথা শুনাইলো আমাকে, সেটা নিয়ে কোন রিগ্রেট নাই তোমার?
- টি টোয়েনটি খেলায় মাঠে গেছি আমার ডিউটি হিসাবে। কাউকে শরীর দেখাইতে না। আমাদের হাউস একটা টিম কিনছে, তুমি তো জানোই। আমাকে প্লেয়ারদের ইনস্পারেশন দিতে। যারা এর মধ্যে দোষ ধরে বা দেখে তাদের মানুষই মনে হয় না আমার।

এসব বাক বিত-ার এক পর্যায়ে দিশেহারা আহমেদ লাইসেন্সড রিভলবার মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহননে অভিলাষী হয়। এরই এক ফাঁকে আহমেদ যখন বসার ঘরে বাইরে উঠে যান, রীতিমনি টুক করে বিভ্রান্ত করে দেন আহমেদের বন্ধুটিকে। বলে বসেন, আপনার বন্ধুর প্রত্যেক রাতেই একেকজন মেয়ে লাগে। এই নেশা তার অনেক আগে থেকেই। . . . ডাইনিং স্পেসে একটি ওয়ালটনের মাঝারি রিফ্রিজেটর দেখিয়ে দাবী করেন ঐটা আমার বাবার বাড়ি থেকে দেয়া। আরও অনেককিছুই দিছে তারা। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোক কোন মূল্যায়নই করে না।

এরপর আরেকদিন বাগেরহাট, সুন্দরবন ট্রিপের ধন্যবাদ জ্ঞাপন একটি ডিনারে আহমেদ তার বন্ধুকে সপরিবারে আমন্ত্রণ করেন। আদর আপ্যায়নের কোন ত্রুটিই থাকে না। দেখে বোঝার উপায় থাকে না। বাসায় গত দিনও কী লঙ্কাকা- গেছে। সব পদই প্রশংসা কুড়ায়, তবে কাকরোলের লম্বচ্ছেদে ডিমের পুর ভরে ভাজি স্বাদের তারিফের পাশাপাশি নজরও কাড়ে। তখন রীতিমনি প্রশংসার বন্যায় মুখ ফসকে বলে দেন, এ সবই আমার মা করে পাঠিয়েছেন। সংসারে সব কিছুই তিনি বলে দেন। তার কথার বাইরে যাই না আমি কখনো। আমার সব চিন্তা, সব ভার এখনো আমার মায়ের। আহমেদ প্রসঙ্গ ঘুরাতে স্মিত হেসে বলেন, আসলে আপনাদের ভাবীর রান্নাবান্নায় এখনো অত এক্সপার্টিস নেই। তাই আর কি . . .

এর কয়েকদিন পরই বিবাদ-বচসার একপর্যায়ে রীতিমনি বাপের বাড়ি চলে গেলেন। তখন বোঝা যায়নি এটিই তার চূড়ান্তভাবে এই সংসারের পাট চুকিয়ে চলে যাওয়া। সে গৃহছাড়া হওয়ার পর থেকে দু তরফের ভুল পদক্ষেপ আর অসহিষ্ণুতার জেরে দ্রুতই তাদের ডিভোর্স ফাইল করা হল। এসময় আহমেদ ও রীতিমনি দুই তরফেরই কমন বন্ধু, আত্মীয়, কর্মস্থলের অভিভাবকদের এহেন অভিযোগ নেই করা হল না। অবশ্য কেউ-কেউ ভালো কথাও যে কিছু বলেননি , তাও বা বলি কেমন করে। কেউ-কেউ রীতিমনির মা-বাবাকে বললেন, আজ আপনারা যে আপনাদের জামাতার কথা বলছেন, সে ক্ষমতার দম্ভ দেখায় , আজ বাদে কাল মিটমাট হয়ে গেলে, কাল তো তার ক্ষমতা আপনাদেরই শক্তি হবে। আপনাদের গবের্রও কারণ হবে তার সব কিছ’। আগে যেমন ছিল। এরই মধ্যে আহমেদ তার কয়েকজন প্রভাবশালী মুরব্বীর ভরসায় ভয় দেখানোর ছল করে একটি বিবাহ বিচ্ছেদ নোটিশ পাঠালেন। উদ্দেশ্য ছিল একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দাম্পত্যকে মোলায়েম করা। তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বাদ দিয়ে নতজানু করা। কিন্তু এ কৌশলে হিতে বিপরীত হল। দাপ্তরিক অনুমতি না নিয়ে নোটিশ পাঠানোর এই ভ্রান্তিটিকেই হাতিয়ার করলেন রীতিমনি। দৃশ্যমান প্রশ্রয়দাতা মুরব্বীরাও তখন যে যার মত কেটে পড়লেন। যাদের ভরসায় আহমেদ শেষ অস্ত্র ডিভোর্সের উকিল নোটিশ দিয়ে ছিলেন। তারা তাকে আশাহত করলো।

বিভাগীয় তদন্ত শুরু হল স্বাভাবিক নিয়মেই। আহমেদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নন এমন অনেকেই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে রীতিমনির সহায়তায় এগিয়ে আসলেন। অনেক তথ্য-প্রমাণ যোগাড় হয়ে গেল। একজন দারোয়ানের জবানবন্দী নেয়া হল। যে নাকি দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় আহম্মেদের বাড়ির দারোয়ান নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সাক্ষী দিলেন আহমেদের মা ক্লাস টেনে পাঠরত অবস্থায়ই বাড়িতে ছেলেকে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় আপত্তি করতেন না। সে তার অপরাপর বান্ধবী, সহপাঠী নিয়ে এসে নিজ বাড়িতেই অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হত। এমন কথাই রেকর্ড হল। কিন্তু দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় ভাড়া বাড়ির দারোয়ানের নিশ্চিত সন্ধান কিভাবে পাওয়া গেল তা একটি অমীমাংসিত বিষয় হয়েই থেকে গেল। আহমেদের অতীতের আরও দু’-তিনটি বিবাহের খবরও তখন চাউর হল। একটি রেজিষ্ট্রি বিবাহের ফটোকপিও রীতিমনি পরিচিতদের সেধে সেধে হাতে তুলে দিতে লাগলেন। সুন্দরবনের মতই কক্সবাজারে একবার বেড়াতে গেলে শরীফ সাহেবের শ্বশুর বাড়িতে কয়েক দফায় তারা গিয়েছিলেন। শরীফ সাহেব পেশায় একজন ব্যাঙ্কার। তিনিও সস্ত্রীক এই বেড়ানোয় সঙ্গী হয়েছিলেন। তার শ্যালিকাকে সেয়ানা মে’ মানুষ উল্লেখ করে রীতিমনি ক্রোধের সাথে তদন্তকারীদের জানিয়ে দিলেন, কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে আহমেদ কী বিশ্রী আর অবাধে মেলামেশাই না করেছেন! তদন্তকে প্রভাবিত আর সহানুভূতি আদায়ে বারবারই এককথাই বললেন, ‘আমি সংসার করতে চাই, সংসার চাই, ভাই আমাকে আমার সংসার ফিরিয়ে দিন, ভাই আপনারা ওকে বোঝান . . .।’ আসলে মনে মনে তিনি প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসায় দিশেহারা। কায়মনঃভাবে চাইছেন, আহমেদের কঠিন শিক্ষা। বিভাগীয় আইনের ভাষায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিনকে ধরলেন। যাতে কোনক্রমেই রক্ষা না পান আহমেদ। এভাবেই নো চান্সেস নিশ্চিত করলেন। আহমেদের পরিবার বাধ্য হয়েই ধর্না দিলেন হেরে যাওয়া কাউন্সিলর হাসান সুরার্দীর কাছে। এরপরই রীতিমনি হাসান সাহেবের সাথে দেখা করে অভিযোগ জানালেন, তার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা খন্দকার দেলোয়ারের ছেলের বন্ধু আহমেদ। হাসান সাহেবের বোনের সাথেও যে আহমেদের আলাপ পরিচয় ছিল সে কথাও রীতিমনি জানেন। তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে এসব জানানোর জন্য অনেকেই তাকে বলেছেন। তবে তিনি তা করবেন না। অন্যদিকে রীতিমনি প্রাণান্ত চেষ্টা করতে লাগলেন আহমেদের বাহিনী প্রধানের সহধর্মিনীর সাক্ষাৎ লাভে।
এসব প্রক্রিয়া চলমান রেখেই রীতিমনি বেড়াতে আসলেন আহমেদের মৎস্যজীবী বন্ধুর বাসায়। সেখানে মৎস্যজীবী বন্ধুর হোম টাউন বাগেরহাটের আদর আপ্যায়নের অনেক প্রশংসা করলেন। তার ব্যক্তিত্ব, সহবত, সৌজন্য, মার্জিত রুচির গুণগান গাইলেন। গদগদ হয়ে মৎস্যজীবী বললেন আমার ছোট ভাইয়ের সাথে আপনার সম্বন্ধ করাতাম, আগে সাক্ষাৎ হলে। রীতিমনি ভাবলেন, আসলে তিনি তাকে এতই মুগ্ধতার সাথে গ্রহণ করেছেন সে এমন একটি পারিবারিক বন্ধনে বেধে রাখতে চাইছেন। যেন সারাজীবন কাছে রাখতে পারেন। রীতিমনিও সাতপাঁচ ভেবে বলে ফেললেন, ভাই আপনি সিঙ্গেল হলে আমি আপনাকে বিয়ে করতাম। মৎস্যজীবি এবারে নড়েচড়ে বসলেন। চা চক্র ও আরও কিছু কুশল আলাপ শেষে নিজের গাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করলেন। তার বিদায়ের পর অতিথি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হল খানিকক্ষণ। মৎস্যজীীব তার স্ত্রীকে বললেন, উনি হ্যান্ডব্যাগে একটা স্কার্ফ বেধে রাখে, দেখেছো। স্টাইলটা ভালই। উনি পৌঁছানোর ঠিক আগেই ফোন করেছিলেন। আমি দরজা খুলতে খুলতে দেখি পারফিউম স্প্রে করে ব্যাগে রাখছেন। ঘাড়ে, ঠিক চুলের নীচে স্প্রে শেষ করতে করতেই দরজা খুলে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। স্ত্রী বললেন, ডায়েট করতে করতে এসিডিটিতে মুখে কী গন্ধরে বাবা।
. . . 
অন্যদিকে রীতিমনি যে ‘সিঙ্গেল হলে বিয়ে করতাম আপনাকে’ এমন কথাও বলে গেছেন তা অন্যদেরও কয়েকদিন ফেনিয়ে গল্প দেয়া হল। শ্রোতাদের মধ্যে আহমেদের মৎস্যজীবী বন্ধুর, এক ভাবী সম্পর্কের প্রতিবেশী নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে কয়েকদিন কপট রাগের ভনিতা করলেন।

আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনের আয়োজন হল ঢাকায়। মাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পুষ্টিমান অটুট রাখা বিষয়ে। সেই সেমিনারে দেশি-বিদেশী অতিথি যেমন আসলেন, মাননীয অতিথি হিসাবে অর্থ, বাণিজ্য, প্রাণিসম্পদ, কৃষি ও খাদ্য পাঁচ-পাঁচজন মন্ত্রী যোগ দিলেন। বিজ্ঞানী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী, রপ্তানীকারক . . . মিলিয়ে এক মহোৎসব যেন। আহমেদের মৎস্যজীবী বন্ধুও আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলেন ঐ অনুষ্ঠানে। গরমের দিন ছিল বলে স্যুট বা ব্লেজার পরে গেলেন না। উজ্জ্বল রঙের একটি জোডিয়্যাকের শার্ট পরে গেলেন। প্রোগ্রামটি স্বাভাবিকভাবেই টিভিতে দেখালো। পাঁচ মন্ত্রীকে বক্তৃতারত অবস্থায় দেখানোর ফাঁকে দর্শক সারিও ঘুরে ফিরে দেখানো হল সংবাদে। পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে এবং কপাল মন্দ থাকলে একাধিকবার। রীতিমনি সংবাদে দেখেই ফোন করে জানালেন, ‘ভাই আপনার শার্টটি সুন্দর খুউব।’ রীতিমনির মুখে স্বতঃপ্রণোদিত এহেন কথায় স্বভাবতই বিগলিত হয়ে গেলেন শ্রোতা। বললেন, জোডিয়্যাকের শার্ট, এরা গর্জিয়াস, পার্টিশার্ট বানায়, গরমকালে স্যুট না পরলে এটা ভাল অপশন। আমি জি সিনেমায় এর এ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখি প্রথমে। দিল্লী থেকে কেনা . . .।’ দেড় হাত দুরে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী এসব আলাপ শুনে হঠাৎই উগ্র মেজাজ দেখালেন। চাইলেও রীতিমনির কাছে চাপিয়ে রাখা গেল না। কী অসহায় অবস্থা সে মুহূর্তে আহমেদের বন্ধুর। কিছু পরে তার স্ত্রীকে ফোন করলেন রীতিমনির মা। তখনো তার ভায়োলেন্ট অবস্থা কাটেনি। রীতিমনির মা সরি টরি হলেন। বললেন, তোমাদের নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছিল। রীতিমনির কাছে শুনে। এই সব কথা আরকি। রাতে বিছানায় ঘটনাটি নিয়ে স্ত্রীর কাছে আরও কিছু শুনতে হল। স্ত্রী এসময় অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনে কাঁচা বাংলায় ‘ম’ ‘খ’ দিয়ে গালাগাল দিয়ে বললেন দু’দিন বাদে মে’র ডিভোর্স চূড়ান্ত হবে সে খেয়াল নেই মায়ের। মায়েরই দোষ . . . । সব বুদ্ধিতো সেই দিয়ে এতদিন সব চালায় আসছে। এখন বোঝ। টেনশন করে আমাদের জন্য। নটঙ্কিপনার আর শেষ নেই! আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেলন, দু’টোই উদ্দুরি বেটিছোল। মা-ও’ক সাগানো লাগবি ক্যা? এসব শুনে টুনে এপাশ-ওপাশ করে তার স্বামী অস্বস্তি এড়াতে চেষ্টা করলেন।

রীতিমনির বিবাহ বিচ্ছেদ তখন কার্যকর হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সে তদন্তকে প্রভাবিত করা কিংবা সমাজের সহানুভূতি পেতে মুখে যতই সংসার টেকানোর কথা বলুক না কেন, ঐভাবে সার্ভিসরুলের সব ধারার প্রয়োগ করে আরিফ আহমেদকে ধরাশায়ী করার প্রাণান্ত চেষ্টা তার সংসার রক্ষায় হিতে বিপরীত হবে, সেও তা ভালই বুঝতেন। হলও তাই।

পুরাতন প্রেমিক বাবলু তাঁকে মনপ্রাণ সঁপে ভালবেসেছিলেন তা সর্বৈব সত্য। এই পরিস্থিতিতে তিনি আন্তরিকভাবেই রীতিমনিকে বিয়ে করতে চাইলেন। এসময়ে বাবলুর প্রায়ই মনে পড়তে লাগল কয়েকবছর আগে ধানম-ি লেক পাড়ে রীতিমনির বাবাকে একদিন হঠাৎ পেয়ে নিজের বজ্রাহত মনের অবস্থায় কাতরভাবে দুইহাতে দুইহাত চেপে ধরেছিলেন। আজ ভাবেন সেদিনও কী ভেবেছিলেন একইভাবে ঐহাত ধরাধরি করে বিয়ের আসরে কন্যা সম্প্রদানের ঘটনাও ঘটতে পারে এ জীবনে। অনেকেই রীতিমনিকেও বললেন দ্রুত বাবলুর সাথে সম্বন্ধটা পাঁকা করতে। যুক্তি দেখালেন তারও বিয়ের বয়স প্রায় শেষ। সেও হয়ত পরিবারের চাপে বেশীদিন অকৃতদার থাকবেন না। পরিবারের মুরুব্বীরা আপাতঃ অক্ষতযোনি পাত্রীই অগ্রাধিকার দেবেন। তবুও বাবলুর যখন এত ইচ্ছা, পরিবারের সংস্কারকে পরাভূত করে সে বিয়েটা যখন করতে মরিয়া, তখন তা দ্রুত হওয়াই ভাল। রীতিমত অবশ্য বাবলু তার চিরদিনের সহায়- এই আত্মবিশ্বাসে সময় নিতে থাকলেন। এক পর্যায়ে এমন মনে হল বাবলুও মনে হয় সন্দেহ পোষণ করতে লাগলেন, তাকে হাতের পাঁচ ধরে ডানে-বামে আরেকটু দেখছেন রীতিমনি, প্রথম জীবনের মত। বাবলু আর দুঃস্বপ্নের মাঝে পড়তে চান না। এ কয়বছরে দুঃশ্চিন্তায় স্বাস্থ্যহানি হয়েছে তার। হাইপার টেনশনের মেডিকেশন চালু করতে হয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শে। তিনিও অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য মনস্থ করলেন। বিবাহযোগ্য যে মেয়ের সাথেই স্যোশাল মিডিয়ায় বাবলুকে লাইক-কমেন্টের নিয়মিত মিথষ্ক্রিয়ায় দেখা যায়, রীতিমনি তাকে ইনবক্সে কানভাঙ্গানিমূলক বার্তা দেন। এই টাগ অব ওয়ারের মাঝেই একটি সম্বন্ধ পাকা হয়ে গেল প্রায়। ঘনিষ্ঠদের কাছে রীতিমনি বলে বেড়াতে লাগলেন সেই মে’টির নামে নানা কথা। ছেলে বন্ধু বেষ্টিতা থাকেন, গায়ে ঢলে ঢলে হাসি ঠাট্টায় অংশ নেন। ছেলে বন্ধুদের সাথে একই আইসক্রিম বা ডিসপোজেবল কাপে চা-কফি ভাগ করেন। একই স্ট্র দিয়ে ফ্র্যাপে পান করেন। স্লিভলেস জামা পরেন, ওড়না ঠিক থাকে না, নেটের ফুল তোলা কামিজের নীচে প্রয়োজনীয়ভাবে শেমিজ পরিধান করেন না।  . .
.
এরও পরে বিয়ের প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত, সে মুহূর্তে ঠিকানা যোগাড় করে সরাসরি চলে গেলেন নিকুঞ্জে বাবলুর হবু শ্বশুর বাড়ি।

সেখানে তিনি বাবলুর চরিত্রের যাবতীয় নিন্দে করলেন। তাদের যে প্রেম জীবনে সবকিছু হয়ে গেছে তা খুবই জোর দিয়ে বললেন। প্রমাণ হিসাবে বাবলুর বাগদত্তাকে বললেন বাবলুর উরু সন্ধির কাছে একটি তিল আছে, যেন মিলিয়ে নেয়। তার পুরুষাঙ্গটি বাঁকা চাঁদের মত বক্র সে কথাও বললেন। সব মিলিয়ে তুমুল হৈচৈ বাধিয়ে বিদায় নিলেন। অন্যদের এ অভিজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, বাবলুর হবু শ^শুর বাড়ীর সকলে রীতিমনির ফিগারের প্রশংসা করেছেন। তার যে বিয়ে হয়েছিল তা নাকি বোঝাই যায় না।

পরে সব শুনে বাবলুর মনে হল আরিফ আহমেদের ব্যাপারে একই কায়দায় একটি ব্যাখ্যামূলক অজুহাত বলেছিলেন তাকেও রীতিমনি। টিএসসির বাথরুমে নেকি কমোডের উপরে তারা মিলিত হয়েছিলেন। কেউ চলে আসার আগেই যেন হ্যাপী এন্ডিং হয় তাই আহমেদ আগে যেয়ে ওয়ার্মআপ হতেন, রীতিমনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত তখতে একটি বিশেষ আসনে মিলনে লিপ্ত হতেন। শেষে বলেছিলেন, ‘এতদূর হয়ে যাওয়ায় বাবলু, তোমাকে আর বিয়ে করে ঠকাতে চাইনি।’ ভাবতে ভাবতে খুব যে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন তা নয়, এরই মাঝে তাকে বেরোতে হল একজন প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার ডাক্তার নিয়ে হবু শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য। তার বাগদত্তা বার কয়েক ফিট হয়ে গেছেন। আগামীকাল তাদের হলুদ সন্ধ্যা। পরিস্থিতির মুখে সব নিখুঁতভাবে করে উঠতে পারাকে এরই মধ্যে বাবলু চ্যালেঞ্জ হিসাবেই গ্রহণ করেছেন।

বিয়েটা ঠেকাতে না পারার হতাশা বা নিসঙ্গতায় রীতিমনি পাঁচ-ছয় বছরের এক জুনিয়র বন্ধু জুটিয়ে তার মত চলতে লাগলেন। নতুন এ বন্ধুর নাম মাইকেল, ধারণা করি এটা তার হাল ফ্যাশন অনুসারে নিজের বদলে রাখা। তাদের রাতে-দিনে ঘনিষ্ঠভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল কয়েকবছর। অপরাপর বন্ধুরা নিশ্চিত হলেন তাদের প্রণয় এখন তুঙ্গে। সকল ধাপ অতিক্রম করে এখন কেবল সামাজিকভাবে একসাথে বসবাসের অপেক্ষা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি এল বলে। সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরিফ আহমেদের বিভাগীয় তদন্ত শেষ হলে তাকে কঠোর শাস্তি সুপারিশ করা হল। রীতিমনি যদিও দৃষ্টান্তমূলক ধাপে শাস্তি কামনা করেছিলেন। এত গঞ্জনা নিয়ে আহমেদ তার ইউনিফর্মেও সার্ভিস থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিলেন। কিছু দিনের মধ্যেই যোগদান করলেন বেসরকারী চাকুরীতে, বেশ বড় পদেই। আফসোস নিয়ে বের হলেন এই যে, জীবনের সব নতুন করে ভাবতে, সাজাতে হবে। এতদিনের সময়, শ্রম, একনিষ্ঠতার ইনভেস্টমেন্ট তেমন আর বেনিফিট দেবে না। তার নতুন জীবনের খবর জানাজানি হতেই, রীতিমনি ফোন করলেন আহমেদের বন্ধুকে। এর মাঝে অবশ্য অনেক সময় গড়িয়েছে। আরও এক ঘটনায় তাদের যোগাযোগটা বন্ধ হয়েছিল। তিন-চার বছর আগে রীতিমনির এক কলিগকে আহমেদের বন্ধু সহজাতভাবে পরিচয়ের এক পর্যায়ে আলাপে আলাপে বলেছিলেন রীতিমনির কথা। চেনেন কি না? আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের মত। এসবই মাত্র। কিন্তু কলিগের মুখে শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে রীতিমনি ফোন করে সেবারে বলেছিলেন, আর কখনো কাউকে এভাবে বললে ভাবীর কাছে চলে আসব সোজা। . . . এরপর যা হয় আর কি, সংলাপের সম্পর্ক না থাকার তিন-চার বছর কেটে গেল। আজকের এ ফোনটার জন্য মনে হয় একটা প্রাকধারণা ও প্রস্তুতিই ছিল। প্রতীতি বলে আহমেদের বন্ধু যেন জেনেই ছিলেন একটা ফোন আসবে।

- হ্যালো, ভাল আছেন আপনারা।
- জ্বি আপনি কেমন আছেন? অনেকদিন পরে . . .
- আপনার খবর কিন্তু আমি রাখি।
- আমারও রাখা হয়। তো কী ভেবে?
- আহমেদ চাকরী ছেড়ে দিছে, জানেন?
- হ্যাঁ জানিতো। প্রাইভেট সেক্টরে ক্যারিয়ার করছে। অল্প দিনেই অনেক ভাল করতেছে।
- ও . . . (কিছুটা দমে যেয়ে)
- এমনিতো প্রমিজিং লোক। ইমপ্রেসিভ, ইনোভেটিভ। সবচে’ বড় কথা খুবই একটিভ।
- না, সেই-ইতো (আরও দমে গেল মনে হয়, একটু নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজও পেলেন আহমেদের বন্ধু)
- ও ভাল করবে বাইরেও। কাজের ছেলে। এমবিএতেও এডমিশন নিয়েছে। বিউপিতে। 

এরপর টুকটাক আরও কিছু কথা হল। রীতিমনিকে কথার ফাঁকে আহমেদের বন্ধুকে মূল্যায়ন ও অন্যরকম জানার জন্য ধন্যবাদ দিলেন। কখনো সুযোগ পেলে এমনকিছু বলবেন, তা পরিকল্পনা করাই ছিল। আজ বললেন। ‘তখন সময়টা খুবই খারাপ যাচ্ছিল। আমরা কেউই স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার অবস্থায় ছিলাম না। তবু আপনি সবসময়ই আমার ভ্যালু করেছেন। আমি গ্রেইটফুল। . . .’ যদিও এগুলো তেমন কানে নিলেন না। তিনি এ ফোনটায় যা জানতে চাচ্ছিলেন, তেমন সমর্থন পেলেন না। ফোনালাপটি রীতিমনির কাছে একদমই আকর্ষণীয় লাগলো না। যদিও ফোনের রিসিভার, মোবাইল টেলিফোন যুগের আগে তার পরম নির্ভর ছিল। টিএন্ডটি টেলিফোনেই নবম-দশম শ্রেণি, এরপর কলেজে প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দোর্দ- প্রতাপে রাজত্ব^ করেছেন অগণন প্রেম প্রত্যাশী তরুণ ও যুবকের উপরে।

ফোনের সংলাপে সবসময়ই আপার হ্যান্ড ছিলেন তিনি। জীবনে এই প্রথমবার টেলিফোন না হলেও একই প্রযুক্তির হাল আমলের ভার্সনে একটা বড় আঘাতই পেতে হল তাকে। এই টেলিফোনের প্রযুক্তিতেই বাবলুর সাথেও তার পরিচয়, পরে প্রণয়। তখনকার টিএন্ডটি ফোনে একটি রিং দিয়ে ছেড়ে দেয়া, বাবলুকে সরাসরি না পেলে কিছু না বলে রেখে দেয়া। প্রথম প্রথম কিছুদিন পরিচয় প্রকাশ না করে কথা চালিয়ে যাওয়া। সেলুলার ফোনের সময়ে সে সব আর্ট এখন চর্চাই হয় না।

বাবলুর বিবাহ সম্পন্ন হয় দুরুদুরু বুকে। বিয়ের আসরেই কত কী না ঘটে আশঙ্কায়। আরিফ আহমেদও পুনরায় বিয়ে করেছেন। বাবলুর বিয়ের দু’বছরে একটি মে’ হয়েছে। আহমেদ সময়ের ক্ষতিটা কপাল জোরে পুষিয়ে নিতে পেরেছেন। তার দু’টি জমজ কন্যা সন্তান হয়েছে। এরা কেউই হারানো প্রেয়সী স্মরণে কন্যাদের নাম রীতিমনির সাথে মিলিয়ে বা প্রথম কিংবা শেষ অংশজুড়ে দিয়ে রাখেন নি। বাবলু বা আহমেদ দ্রুত সংসারী হয়ে থিতু হলেও সংসার ছেড়ে চলে যাওয়া থেকে আট-নয় বছর পর্যন্ত রীতিমনি সিঙ্গেলই থাকলেন। এর মাঝে আহমেদের বন্ধুকে তিনি এসএমএস-এ পাত্র দেখার জন্য এক-দু’বার লিখেছেন। সংসারী হতে হলে, সে সময় যে অস্তচলায়মান, তা রীতিমনিও বুঝতে শুরু করেছেন। পাঁচ-ছয় বছরের জুনিয়র বন্ধু কাম প্রেমিক মাইকেল কেটে পড়েছেন। বাবলুকে এখনো ফোন করেন, প্রথম জীবনের মনোযোগ ও ভালবাসার ভরসায়। আশ্চর্যজনক অথচ সহজ বাস্তবতা হল বাবলুকে পেয়েও যান এক দুই রিং-এ। নাহলে বাবলু দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ব্যাক করেন। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক প্রাসঙ্গিক এবং বেশীটাই অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। বাবলু বোঝেন যা বলবার তা বলে ওঠা হয় না। বাবলুর স্ত্রীও সন্দেহ আর নজরদারিতে রাখেন বাবলুকে। নানা প্রযুক্তি দিয়ে তিনি পুরাতন সংসর্গ মুক্ত রাখতে চান বাবলুকে। এজন্য দামী স্যামসং ফোন বাদ দিয়েই রীতিমনির সাথে যোগাযোগ ধরে রাখেন। এরমাঝে একদিন রীতিমনির একটি ফোন হাতে পড়ে বাবলুর স্ত্রী রোশনির। লাগামহীন মুখ ছুটিয়ে গালাগালে আরক্ত করেন রোশনি, রীতিমনিকে। রীতিমনি মনে মনে ভাবেন তার মতই বুঝি ঘর ছেড়ে যাবেন রোশনি। এবার সুযোগটা আর হাতছাড়া নয়, কাজে লাগাতেই হবে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়, কিছুতেই কিছুই ঘটে না। রীতিমনিরও ধৈর্য্যচ্যুতি হয়। 

এরপর একদিন স্যোশাল মিডিয়া সয়লাব করে, বিনোদন পাতায় খবর হয়ে এক চিত্র নায়ককে বিয়ে করেন রীতিমনি। কিন্তু বিয়ের অল্পদিনেই দাম্পত্য অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। মূলতঃ চিত্রনায়কের লাইফ স্টাইল, স্ক্যান্ডাল, অতীত, বর্তমান অসহ্য ঠেকে রীতিমনির। খ্যাতির মোহ তাকে নিবৃত্ত রাখতে পারে না। একবছরের মাঝেই আবার খবর বিচ্ছেদ ও মামলা-পাল্টা মামলার। রীতিমনি যৌতুক ও নির্যাতন মামলায় চিত্রনায়ককে জেলে পোরেন। তার গোটা পরিবারকে মাসের পর মাস পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করেন। স্যোশাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে লেখায় চিত্রনায়কের বড়ভাইকেও তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করান। তারা জামিনে বেরিয়ে রীতিমনির নামে প্রতারণা মামলা ঠুকে দেন। এজাহারে বলা হয়: ১. তিনি প্রজনন ক্ষম নন ২. দাম্পত্য ক্রিয়ায় (সহবাস কার্যে) অক্ষম। এই সংসারে রীতিমনির সাবেক ভাসুর তার ডাক্তার বান্ধবীর কাছ থেকে শারীরিক এ সীমাবদ্ধতার পোশাকী নাম- ব্যাক্টেরিয়াল ভিজিওয়োসোসিস, অনিয়ন্ত্রিত কলপসিস, হরমোন-নির্ভর টিউমার, যৌনাঙ্গে হারপিস, সজোগ্রেন সিন্ডোম, এন্ডোমেট্রিওসিস সর্বোপরি ক্রনিক ধরনের ভ্যাজাইনিটিস ... এসব একগাদা রোগের কঠিন-কঠিন নামের কথা  জেনে এসে এজাহারে জুড়ে দেন। জেল জরিমানার শোধ তুলতে চেষ্টা করেন।

প্রকৃতপক্ষে রীতিমনি নিজের মন মত অবস্থা ও ব্যক্তিকে পাওয়ার জন্য যেকোন কিছু করতে দ্বিধান্বিত নন। সত্য মিথ্যা সাজিয়ে পরিস্থিতির দখল নিতে তিনি অতিশয় পারঙ্গম। এ প্রয়োজনে তার ন্যায় নীতিবোধ কাজ করে না একেবারেই, কোন ঝুঁকি গ্রহণেও কুণ্ঠা করেন না সামান্য। সাজা যদি হতে হয়, এ মানসিক সীমাবদ্ধতার সাজা তার প্রাপ্য। কিন্তু তার শারীরিক দুর্বলতাকে লোকসম্মুখে আনা ও হেয় করা ছিল অমানবিক। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থা ও আইনের প্রতিবিধানের সীমাবদ্ধতা হল মনের রোগের তাড়নায় অন্যায় বা অমানবিকতার প্রতিকারে কোন বিধান নেই। অগত্যা প্রকৃত অপরাধ আড়ালে রেখেই অন্য দায়ে তার সাজা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হল।

ছেলেবেলার খেলার সাথী পিঠাপিঠি বয়সের রীতিমনির ছোট মামা এসব ঘটনায় মুষড়ে পড়লেন। তিনি আজও অকৃতদার। ছোটবেলার ভাগ্নি বন্ধুর প্রতি বাৎসল্য অটুট রাখা বড়বেলায় দৃষ্টিকটু কেন ঠেকবে তা বোধগম্য নয় ছোটমামার। তবু লোকলজ্জার ভীতি আর সংস্কারের জন্য তাকে অনেক লুকিয়ে-চুরিয়ে চলতে হয়। পরিবারের মুরব্বীরা বলেছেন, তিনি সামনে আসলে, মামলা নিয়ে ছুটাছুটি করলে প্রতিপক্ষ এর সুযোগ নেবে। তারা আরও কোন ধারায় ফেলে মামলা দেবে। ছোট মামা রীতিমনির বহু শঙ্কু এ সঙ্কটে ডুকরে কাঁদেন একা একা আর অন্যদের সামনে চাপা কান্নাতুর মনে হাসি ফুটিয়ে চলেন। ‘এমনও হাসি আসে বেদনা মনে হয়’ এই গানই এখন তার যাপিত জীবনের স্ট্যাটাস।

এসব খবর পাল্টা খবর যখন অনলাইনে চাউর তখন বাবলুর এক কলিগ তাকে কিছু না জেনেই একটা ছবি দেখালেন। রীতিমনির কোন এক দুর্বলতার মুহূর্তে ভিডিও কলে কথোপকথন অবস্থায় তোলা। অর্ধ বিবস্ত্রা এ ছবিটি দেখামাত্রই বাবলু তীব্র শকড হলেন। যেন ভূত দেখার অনুভূতি হল। সেদিন এবং পরে আরো কয়েকদিন তার ছটফট করে কাটলো। বিছানায় শুয়ে বুকে বালিশ রেখে সিলিং ফ্যান ঘোরার দিকে আপাতঃ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আনমনা হয়ে থাকতে বাধ্য হলেন। দ্রুত হৃদকম্পন প্রশমনে বুকের উপরে বালিশ না সরিয়ে সামান্য হলেও ভাল বোধ করেন এসময়ে। রীতিমনির কারণে এরকম অতীতেও করেছেন। এবারটায় শুধু সতীনাথের একটি গান গুণগুনিয়ে গাইলেন বারবার। এই শুধু নতুনত্ব। ‘না না না। পাখীটার বুকে যেন তীর মের না। ওকে গাইতে দাও . . .’ গানটি তার নতুন সঙ্কটে সঙ্গী হল।

একমাত্র সন্তানের এরকম জীবনের বিপর্যয়কর অবস্থায় তার বাবা-মা তীব্র মর্মাহত হলেন। একমাত্র সন্তানের জন্য সব বাবামাই সেরাটাই ভাবেন। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে দিকশূন্যভাবে সুকঠিন বন্ধুর জীবন পথে চলা তাঁদের জন্য মারাত্মক আঘাততো বটেই। নিশ্চয়ই আবেগ ও উত্তেজনার বশে যা না তা হঠকারীভাবে করে বসায় স্বয়ং রীতিমনিরও মনে হতে পারে এত কিছু করে কী পেলাম?

রীতিমনিকে নিয়ে এখনো মাঝে মধ্যে কথা হয় আরিফ আহমেদ আর তার ফ্রেন্ডস কাম ফিলোসফার বন্ধুর। আরিফ আহমেদ এতকিছুর পরও এতদিন বাদেও রীতিমনিকে দোষারোপ করেন না এ আলোচনায়। বরং আগে রাগের মাথায় যে বলতেন, তার যেটি সিগনেচার সংলাপ হয়ে গে’ছিল প্রায় এ প্রসঙ্গে, ‘প্রবলেম লাইস উইথ হার’, সেজন্যও আজকাল লজ্জাবোধ করেন। একইভাবে একদিন গাড়ি চালাতে চালাতে আরিফ আহমেদ প্রশ্ন করেন মৎস্যজীবী ব্যবসায়ী বন্ধুকে, আসিফ ভাই, আমি সংসারের শান্তির জন্য কি না করছি। জ্যোতিষীর কথায় তেমন পাত্তা না দিলেও কোন চান্সেস না রাখতে এর পরপরই টার্কি ভিজিট থেকে থ্রিডি আই কিনে এনেছিলাম। বাসার সব ঘরেই ঝুলিয়ে দেই। শুনছি থ্রিডি আই সুখ, সমৃদ্ধি, সৌহার্দ্যরে প্রতীক। ঘরে রাখলে ভাল। তাতেও কাজ হল না। আসিফ বলেন, ভাই আমাদেরও আপনি একটা দিছিলেন। এটা ধরে নেন তুরস্কের মাটি, হাওয়া, জলে যেমন ক্রিয়াশীল, এদেশে তা নয়। আর কি বলি বলুন। আহমেদ গাড়িটা হাতিরঝিলের এক স্থানে থামিয়ে দম নেন। এরপর গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পিঠাপিঠি লুকিং মিররের সাথে ঝুলানো থ্রিডি আইটির প্রতি প্রায় আট-দশ বছরের মায়া ত্যাগ করে পাশের হ্রদের পানিতে ছুড়ে ফেলেন। তারপর গাড়ি আবার চালাতে শুরু করেন। কথা চলতে থাকে আগের বিষয়ে - ওর মাই সব কলকাঠি নাড়ে। সবকিছুর হোতা সে। সঙ্গীত শিল্পী সূর্য রায়ের সাথেও তার লটর-পটর পুরাতন। তার মে’ও শামস্ নামে এ ছেলের সাথে কাহিনী করছে। সেও নতুন কুঁড়ির শিল্পী। ছোটবেলার পরিচয়। আমি তখন গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু অনেক আগেই তার রেসটেইন ব্রেক করে গেছে। কোনকিছুতেই একবার সংযম ভাঙ্গলে তাতে আর নিয়ন্ত্রণ আনা যায় না। সেই ঘটনা এখানে।

- আমি ভাবি ওনার বাবা-মা’র কথা। আমারও একটা মে’। সেভাবে বোঝার চেষ্টা করি। কত না কষ্ট পাচ্ছেন! কত সময় চলে গেল। গোছাতে পারলেন না জীবনটা, থিতু হতে পারলেন না কোথাও এখনো। একবার বলছিলাম বিদেশে চলে যান, প্রবাসী বিয়ে করে, এই ক্যাঁচালে থেকেন না। এও বলছি না হয় আরও ভাল চাকরীতে ঢুকে ভাল ক্যারিয়ার করেন। কাজে মন ফেরান। . .
.
- আমার বন্ধু শাহরিয়ারকে তো চেনেন। ও বিয়ের আগে কত সাবধান করছে। শুনি নি কারও কথাই। বরং ভাল কথা যারা বলছে তাদের সাথেই যোগাযোগ তখন বন্ধ করছি। আপনারও ভাল পরামর্শ দেয়ার দরকার নাই। যার টা সে বুঝুক।

রীতিমনির শারীরিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টি শত কিছুর পরও আরিফ আহমেদ কখনো তোলেন না। তিনি যে এখনো রীতিমনিকে শতভাগ আপনার ভাবেন তা নয়। অনেক বিরূপ কথা বলেন, চরম বিরক্ত যে তার ব্যাপারে তা বোঝা যায়, তার জীবনের গতিপথ পরিবর্তনে ক্রীড়নক বলে দায়ীও করেন- তবু ইঙ্গিতেও কাউকে বলেন না। এমন একটি ব্যক্তিগত বিষয় প্রতিপক্ষ(!) দমনে দশজনকে বলে বেড়াবেন এমন ভাবনা কখনো আসেনি তার। বরং এই সামান্য গোপনীয়তার সুরক্ষা প্রদান তাকে মহানায়ক রূপে প্রতিভাত করল তার ঘনিষ্ঠদের কাছে। যারা আদ্যপ্রান্ত সবই জানেন। রীতিমনি তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য পীড়াপীড়ি করলেন। আহমেদ নানা বিবেচনায় গেলেন না। প্রতিপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেছিলেন, জনাব আহমেদও রীতিমনিকে শারীরিক মিলনে ত্রুটিপূর্ণতার জন্যই পরিত্যাগ করেছেন। আবার চিত্রনায়কের পক্ষ থেকে আহমেদকে যোগাযোগ করা হল যেন তাদের হয়ে সাক্ষী দেন। প্রতিশোধে পরম ও অনায়াস সুযোগ পেয়েও আহমেদ সে পথেও গেলেন না। চলচ্চিত্রের নায়ককে পরাভূত করলেন জীবনের মহানায়ক। মনুষ্যত্ব, উন্নত রুচিবোধ, নিষ্কলুশ বিবেক আর চিন্তার পরিচ্ছন্নতায় তিনি সেই কাজটিই করলেন যা তাকে সাধারণ্যে অসাধারণ করল। ব্যক্তিগত বিষয়ের মর্যাদা প্রদানে সেই কথাটি তার জন্য অমূল্য বস্তু হয়েই রয়ে গেল নিজ অধিকারে।

অন্যদিকে, রীতিমতি, যার জীবনের প্রভাতকাল এত গৌরবম-িত আর গরিমার ছিল, অথচ বেলা পড়ার আগেই সে জীবন কেন এমন গ্লানিময়, দুর্যোগপূর্ণতায় জীবনই অর্থহীন হওয়ার মত, এমন কেন হল নিয়তি, সেকথা অন্য সকলের কাছেই অমীমাংসিতই রয়ে গেল। 
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank