শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ইতিহাস গড়া নাগরিক কবির আজ জন্মদিন

সাহিত্য ডেস্ক

১৪:১৫, ২৩ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১৬:৪৫, ২৫ অক্টোবর ২০২০

১০২৭

ইতিহাস গড়া নাগরিক কবির আজ জন্মদিন

শামসুর রাহমান [ছবি সংগৃহিত]
শামসুর রাহমান [ছবি সংগৃহিত]

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

গদ্য কবিতার দুর্বোধ্যতার দেয়াল ভেঙে সহজ অথচ ধারালো পংক্তি তিনি পৌঁছে দিয়েছেন সব ধরনের পাঠকের হৃদয়ে। নাগরিক কষ্ট, দুঃখ-সুখকে ঠাঁই দিয়েছেন কবিতায়। জীবনের সত্য-সুন্দরকে তুলে ধরায় তিনি ছিলেন অনন্য। পাশাপাশি বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবদীপ্ত অধ্যায় ফিরে ফিরে এসেছে তারই কবিতায়। তিনি কবি শামসুর রাহমান। স্বাধীনতা শব্দটি তিনি এনেদিয়েছিলেন আমাদের কাছে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৯২তম জন্মদিন আজ। 

তার জন্ম ঢাকায় মাহুতটুলিতে। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, কর্মজীবন সবই ঢাকায়। আধুনিক কবিতা মাত্রই অনিবার্যভাবে নাগরিক হতে হবে, এ নতুন বোধের জন্মদাতা তিনি। শামসুর রাহমান একাধারে কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক ও গীতিকার। গত শতকের পঞ্চশের দশক থেকে বিরামহীন তার কলম চলেছে প্রায় ছয় দশক। এই পথযাত্রায় তিনি হয়ে ওঠেন কবিতার রাজপুত্র।

বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মা আমেনা বেগম। আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের পড়াশোনায় হাতেখড়ি পোগোজ স্কুলে। ঢাকা নগরেই তাঁর বেড়ে ওঠা।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে শামসুর রাহমানের লেখনি ছিল সোচ্চার। 'আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা' কিংবা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে লেখা 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়', স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রকামী বাঙালিরই প্রাণের কথা।

'গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।'

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। এরপর ‘নিজ বাসভূমে’, 'বন্দী শিবির থেকে', 'দুঃসময়ে মুখোমুখি', 'ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা', 'বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে', 'ইকারুসের আকাশ', 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ', 'যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে', 'অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই', 'দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে', 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়', 'ভষ্মস্তুপে গোলাপের হাসি'সহ শতাধিক গ্রন্থে তিনি ঋদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৫৭ সালে ডেইলি মর্নিং সানে শামসুর রাহমানের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে রেডিওতেও বছর দেড়েক কাজ করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক বাংলায় যোগ দেন শামসুর রাহমান। তিনি পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকও হয়েছিলেন। তার সম্পাদনায় বেশ কিছুদিন প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা। মূলধারা ও অধুনা নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেন।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কারসহ বহু সম্মননায় ভূষিত হয়েছেন শামসুর রাহমান।

আনন্দবাজার পত্রিকা ১৯৯৪ সালে তাকে আনন্দ পুরস্কার দেয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪ সালে এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৬ সালে তাকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি দেয়। ২০০৬ সালের ১৭ অগাস্ট শব্দের মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন বাংলাদেশের এই অন্যতম প্রধান কবি।
  
অথচ জানে না ওরা কেউ
গাছের পাতায়, ফুটপাতে
পাখির পালকে কিংবা নারীর দু-চোখে
পথের ধুলোয়,
বস্তির দুরন্ত ছেলেটার
হাতের মুঠোয়
সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank