শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শুভ জন্মদিন রুদ্র

সাহিত্য ডেস্ক

১২:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ২৩:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০২০

২০৯৮

শুভ জন্মদিন রুদ্র

আমায় যদি তুমি বলো ঈশ্বর,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই।
আমায় যদি বলো পাপী শয়তান,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই-ই

কবি তখন মাত্র ক্লাস টেনে পড়েন। লিখলেন 'আমি ঈশ্বর আমি শয়তান'। নেহাতই কাঁচা লেখা, তবুও কবির প্রথম কবিতা। তাই গুরুত্বপূর্ণ। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথা বলছি। সদ্য স্বাধীন দেশের টালমাটাল সময়, সত্তরের দশকে রাজনীতি আর সমাজের অস্থিরতা, অপ্রাপ্তি, স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গতায় নতুন করে বাঁচার ও সৃষ্টির উন্মাদনায় এবং মুখ লুকানো সুসময়কে ফেরানোর আবেশে যারা কলম চালিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। কবি ও ব্যক্তি সত্তায় এপার বাংলা ওপার বাংলায় সাড়া জাগানো একজন মানুষ, কবিকূলে বিস্ময়। আজ তার পৃথিবীতে আসার দিন। শুভ জন্মদিন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

পরিবার থেকে পাওয়া নাম ছিল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ছেলেবেলা থেকে কবি জীবনের আগ পর্যন্ত এ নামটি ধরে রেখেছিলেন। লেখালেখির জগতে এসে নিজেই বদলে দিলেন নিজের নাম। যোগ হলো 'রুদ্র'। 

জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত শহর বরিশালে। 'বেগম', 'শিশুভারতী', রবীন্দ্র আর নজরুলের লেখায় শৈশব-কৈশোরেই ডুব দিয়েছিলেন তিনি। মন-মননে পাঠক ও লেখক সত্তা গঠে গড়ে তখনই। 

বাগেরহাটের মিঠেখালিতে নানাবাড়িতে রুদ্রর স্কুল জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে ঢাকায় চলে আসা। ১৯৭৩ এ ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি। সেখানে তিনি পান কামাল চৌধুরী, আলী রিয়াজ, জাফর ওয়াজেদের মতো একঝাঁক তরুণ সাহিত্যপ্রেমীকে। তখন সাহিত্যে পুরোপুরি মনোনিবেশ, দুবছরে ক্লাস করেন মাত্র ১৮টি! এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হন কবি। 

আটাত্তরের রুদ্র  ছাত্র ইউনিয়নের মনোনয়নে সাহিত্য সম্পাদক পদে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেন। ছাত্র ইউনিয়নের মতাদর্শে বেঁচে ছিলেন আমৃত্যু। রাজনীতি-সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক আন্দোলনে আদ্যোপান্ত জড়িয়ে যাওয়ায়পড়াশোনায় কিছুটা ছেদ পড়ে, এমএ পাস করেন ১৯৮৩ তে। 

অকালপ্রয়াত এই কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। দুই কাব্যগ্রন্থ 'উপদ্রুত উপকূল' ও 'ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম' প্রকাশিত হয় ছাত্রজীবনে, প্রকাশক ছিলেন আহমদ ছফা। দুটি বইয়ের জন্যেই রুদ্র পান সংস্কৃতি সংসদ প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’-এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন, ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন।

সামাজিক প্রথা ভেঙ্গে তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করলেও দাম্পত্য জীবন সুখকর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাদের। প্রচণ্ড উড়নচণ্ডী স্বভাবের ও যাবতীয় নিয়মনীতির বিরুদ্ধ শিবিরবাসী রুদ্রের উৎসাহতেই লেখালেখির জগতে সংস্কৃতমনা তসলিমার প্রবেশ। 

অনিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত রুদ্র যেন শীরের ওপর অত্যাচার করতেই পছন্দ করতেন। আলসার আর পায়ের বার্জাস রোগ নিয়েই ঢাকা আর ঢাকার বাইরে সাহিত্য অনুষ্ঠানে যেতেন কবিতা পড়তে। জীবনের শেষের দিকে অনেকটাই নিঃসঙ্গ কবি বসে থাকতেন নীলক্ষেতের বাবুপাড়ায় কবি অসীম সাহার ইত্যাদিতে। অসুখের বাড়াবাড়ি হলে রুদ্রকে ভর্তি করা হয় হলি ফ্যামিলিতে। হাসপাতালের ২৩১ নম্বর কেবিনই হয়ে ওঠে একসময় সাহিত্য আড্ডাঘর। 
হাসাপাতাল থেকে ছুটি পর বাড়িতে ১৯৯১ সালের ২১ জুন সকালে রুদ্র মুখ থুবড়ে পড়ে যান বাথরুমে। ডাক্তারের ভাষ্য 'সাডেন কার্ডিয়ার অ্যারেস্ট'। পরদিন ২২ জুন অকালপ্রয়াণ ঘটে তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। যদিও প্রস্থানের বহু আগে এই বাউল আকাশের ঠিকনায় চিঠি লিখতে বলে গিয়েছিলেন সবাইকে।

তাই...

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।
জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে...

 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank