ভালো কর্মী হওয়ার আছে কিছু শর্ত
ভালো কর্মী হওয়ার আছে কিছু শর্ত
প্রফেশনাল ক্যারিয়ার নিয়ে সামনে এগুতে হলে প্রতিষ্ঠানে সবসময় ভালো কাজ করে যেতে হবে, যেন অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করতে পারে। কারণ জীবন যেমন সামনে চলে, ঠিক সেইভাবে চলে পেছনেও। সুতরাং সামনে চলাকে অব্যাহত রাখতে ভালো কর্মী হতেই হবে। একবার পেছনে পড়ে গেলে সেখান থেকে উঠে আসা বেশ কষ্টসাধ্য। সে জন্য ভালো কর্মী হওয়ার চেষ্টা অব্যহত রাখা জরুরি।
ভাল কর্মী হতে হলে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
সময়মত কর্মস্থলে হাজির হওয়া
সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখবেন সময়ানুবর্তীতা মেনে চলতে পারলে সব কাজ সময়মত শেষ করা যায় এবং ভূলত্রুটি শোধরানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে সময়ানুবর্তীতা মেনে চলা কর্মীকে কর্তৃপক্ষও বেশী গুরুত্ব দেয়। সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে বোঝাতে পারবেন নিজের কাজকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেন এবং প্রতিষ্ঠানকে আপনি ধারণ করেন।
ইতিবাচক আচরণ
কর্মস্থলে ইতিবাচক আচরণ কর্মীর ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। সহকর্মীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনায় যোগ দেয়া, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা ইত্যাদি কাজের পরিবেশকে সহজ করে তোলে। উপর্যুপরি কাজের চাপ পড়লে নিজেকে বিভ্রান্ত মনে হতে পারে। তবে হাল না ছাড়ার মানসিকতা দেখাতে পারলে দিন শেষে ব্যর্থতার চাপ কিছুটা হলেও কমনো সম্ভব।
রুচিশীল পোশাক পরিধান
কর্মক্ষেত্রে রুচিশীল পরিপাটি পোশাক পরে গেলে যে কারো ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। অনেক অফিস তাদের কর্মীদের ‘ফরমাল’ পোশাক পরতে বাধ্য করে না, তবে তাতে তার প্রয়োজনীয়তা কমে না মোটেই। আপনার পোশাকই নির্ধারণ করবে কর্মক্ষেত্রে অন্যরা আপনাকে কতোটা গুরুত্ব দেবে। আর আপনার পোশাক আপনার ব্যক্তিত্বেরই একটি অংশ, সেকথা মনে রাখতে হবে।
কাজ শেখার মানসিকতা
সব সময় কাজ শেখার মানসিকতা থাকতে হবে, তাহলে সহকর্মী অথবা উর্ধ্বতনরা কাছে টেনে নেবেন এবং নির্দ্বিধায় কাজ শেখাবেন। মনে রাখতে হবে যাদের আচরণে কাজ শেখার মানসিকতা থাকে না অথবা “আমি সব জানি” ধরণের ভাব থাকে তাদের কেউ কাজ শেখায় না। এধরনের মানসিকতা থাকলে ক্যারিয়ার নিয়ে বেশী দূর যাওয়া সম্ভব হয় না।
পরিশ্রম করার মানসিকতা
পরিশ্রম করার মাধ্যমে নিজের কাজকে ভালো কাজে পরিণত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর তাই ভালো কাজের জন্য পরিশ্রমের মানসিকতা থাকাটা জরুরি। তবেই ভালো কর্মী হওয়া সহজ।
কাজের প্রতি আগ্রহ
কাজের নির্দেশ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে নিজেই কাজ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে খুঁজে নিয়ে জেনে নিতে হবে কাজের পরবর্তী ধাপ কি, কোনো প্রশ্ন থাকলে জড়তা কাটিয়ে জেনে নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কাজ শিখে নেওয়ার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। কাজের আগ্রহ একসময় নজরে আসবে যা পদোন্নতির পথ সুগম করতে অবদান রাখবে।
কুশল বিনিময়ে মনযোগ দেয়া
পদমর্যাদা যতই বড় বা ছোট হোক না কেনো, প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীর সাথে সব সময় সামাজিকতা বজায় রাখার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। চেষ্টা করতে হবে নিজেই আলাপ শুরু করার। নাম পরিচয় জানা, কুশল বিনিময়, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সাধারণ বিষয়গুলো জানতে চাওয়া এগুলোই হবে প্রথম পদক্ষেপ। আর অন্যদের সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নিজের সম্পর্কেও জানাতে হবে। এভাবেই ধীর ধীরে সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
ইচ্ছাশক্তি
আমরা সবাই জানি, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। সফলতার জন্য চাই অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কেউ ভালো কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
জয় করার স্বপ্ন
আগামী পাঁচ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেটা ঠিক করা জরুরী। তাই সবার একটি স্বপ্ন থাকা চাই। স্বপ্ন না থাকলে জীবন আগায় না। কাজেই আপনি জয় করার স্বপ্ন দেখতেই পারেন। স্বপ্ন থাকলেই আপনি ভালো কর্মী হতে পারবেন।
অন্যের সফলতায় হিংসা না করা
অন্যের সফলতা দেখে তাকে হিংসা না করে তার সফলতার পিছনে কি কি বিষয়গুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সেগুলো খুঁজে দেখা জরুরী। সেটাকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারটা সাজাতে পারলে সফলতা আসবেই।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান
যেকোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নিতে হবে নিজের চেষ্টায়। কর্মরত অবস্থাতেও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খবর জানতে হবে, শুধু নিজের বিভাগে মুখ গুঁজে থাকলে চলবে না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আপনার কাজের গন্ডির বাইরের কোনো পরামর্শ চাইলে তাকে সহজেই সাহায্য করতে পারবেন। এই সামান্য সাহায্যের প্রতিদানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন আশাতীত কিছু।
অর্পিত দায়িত্ব নিধর্রিত সময়ে সম্পন্ন করা
উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে এবং নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা থাকতে হবে। এতে যেমন প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে যেমন অবদান রাখা যায় তেমনি দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানে নিজের যোগ্যতা প্রমান করা যায়।
জিয়াউল হক: মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, নেক্সাস টেলিভিশন।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়