শীতের সুস্থতায় সামান্য করণীয়
শীতের সুস্থতায় সামান্য করণীয়
শীত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। শীতকালে যে ঘটনাটি বেশি ঘটে তা হচ্ছে ছোট-বড় সবার ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। ফলে ত্বক হয় অমসৃণ আর রুক্ষ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি ঋতুতে তার বৈশিষ্ট্যের সাথে আমরা যাতে খাপ খাওয়াতে পারি সেই ব্যবস্হা খাবারের মাঝে করে দিয়েছেন।
শীতকালে শিশু এবং বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় থাকে। এ সময় সর্দি জ্বর, তাছাড়া শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন বেশি হয়ে থাকে। আরও কিছু রোগ যেমন- সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া ও বাতের ব্যাথার তীব্রতাও শীতে বেড়ে যায়। এছাড়া এ বছর রয়েছে করোনার বাড়তি ঝুঁকি।
এসময় শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে বেশি শক্তি ব্যয় হয়। যে কারণে কিছু খাবার আছে যেগুলো এসময় খাদ্য তালিকায় রাখলে অনেকটাই আরামে থাকা সম্ভব।
টমেটো: এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং লাইকোপেন যা এই শীতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ইনফেকশনের ঝুঁকি হ্রাস করে।
আদা: আদায় আছে অনেক উপকারি এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা এই শীতে খুস্খুসে কাশি থেকে রক্ষা করে।
বাদাম: বাদাম হলো গুড ফ্যাটের উৎকৃষ্ট উৎস। শীতে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ থাকবে।
মাছ ও ডিম: শীতকালে মাছ ও ডিম খাওয়ার পরে যদি কিছু সময় রোদে কাটানো যায় তবে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর হয়। এতে হাড়ের ব্যাথাও লাঘব হবে।
আপেল: এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি ফল, এই ফল শীতকালীন স্বাস্থ্য জটিলতা কমিয়ে দেহকে রাখে সুস্থ।
দুধ ও জাফরান: গরম দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে শীতে যেমন তাপ উৎপাদন হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে, পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বজায় থাকে।
গোল মরিচ: গোল মরিচে এন্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পাওয়া যায় যা শীতকালীন ব্যাথা প্রদাহ উপশমকারী ভূমিকা পালন করে। যারা বাতের ব্যাথায় আক্রান্ত তারা প্রতিদিনের রান্নায় গোল মরিচ ব্যবহার করুণ দেখবেন কতখানি উপকার পাচ্ছেন।
খেজুর: শীতকালে ভেতর থেকে উষ্ণতা বজায় রাখতে খেজুরের জুড়ি নেই। এটি দ্রুত তাপশক্তি উৎপাদন করে তাপমাত্রা ঠিক রাখে।
তুলসী: তুলসীপাতায় আছে বিটা ক্যারটিন ও ইউজিনল। এরা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে তাই শীতকালের সাধারণ সর্দি জ্বর থেকে বাঁচতে নিয়মিত তুলসীপাতার চা, সুপ বা কাচা রস খান। ফলে গলা খুসখুসানি বা অস্বস্তি কমে যাবে।
ঘি বা মাখন: শিশু ও যারা স্বাভাবিক ওজনে আছেন তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন ঘি বা মাখন। এই খাবার গুলো তাপ উৎপাদন করে ও দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
মাশরুম: শীতকালীন খাবারে অবশ্যই রাখুন মাশরুম। মাশরুমের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এতে ভিটামিন বি, সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, মিনারেল, আরগোথিওনিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের শরিরে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
এছাড়া কিছুটা ব্যায়াম করলে শরীর চাঙা থাকবে এবং তাপমাত্রা ঠিক থাকবে। তাছাড়া রক্তসঞ্চালণ ঠিক রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। পাশাপাশি পানি পান করতে হবে প্রয়োজনে ডাবের পানি বা ফলের রস দিয়েও দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। তবেই শীতের সাথে তাল মিলিয়ে সুস্থ থেকে শীতকাল উপভোগ করা সম্ভব। শীতের সময় আমরা বেশি অলস ও নিদ্রাহীনতা অনুভব করি। ফলে, কাজের সময় শরীরে কষ্ট অনুভব হয়। তাই শীতকালে সময় মত সঠিক পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন। তবেই সতেজ এবং চাপমুক্ত থাকা যায়।
মাহফুজা আফরোজ সাথী: প্রধান পুষ্টিবিদ, ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়