বাংলাদেশি কারি-গুরুদের সম্মান জানাতে ‘ব্রিটিশ কারি ডে’
বাংলাদেশি কারি-গুরুদের সম্মান জানাতে ‘ব্রিটিশ কারি ডে’
বিশ্বজুড়ে সবার কাছে অতিপ্রিয় ব্রিটিশ রান্না। কিন্তু খুব অল্প মানুষ জানেন আজকের বিখ্যাত এ কুলিনারি শিল্পের ভিত্তি রচনা হয়েছিল বিগত শতকের ৬০ ও ৭০ দশকে। সেসময় বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে যাওয়া প্রতিভাবান একঝাঁক মানুষের হাত ধরে এর গোড়াপত্তন হয়।
দেশের কুলিনারি শিল্পের নেপথ্য কারিগর বাংলাদেশি কারি-গুরুদের সাফল্য উদযাপন করছে ব্রিটেন। তাদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দিচ্ছে তারা।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) নানা আয়াজনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে ব্রিটিশ কারি ডে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশন, দ্য গিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টস এবং স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে কারি-দিবসটি উদযাপনে রেস্টুরেন্টগুলো এদিন সেরা ডিশ তৈরি করবে। সেগুলো বিভিন্ন হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে।
পাশাপাশি স্কুলের শিশু ও করোনা মোকাবেলায় নিবেদিত প্রাণ স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। একে ঘিরে দেশসেরা শেফ ও নন্দিত রাঁধুনিদের তৈরি বেশ কিছু রেসিপি তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটিশ কারি ডে’র নিজস্ব ওয়েবসাইটে (www.britishcurryday.org) । সেখানে ভিজিট করলেই যে কেউ এ বিষয়ে জানতে পারবেন।
এ বছর ব্রিটিশ কারি ডে’র প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘ব্যাক দ্য ভাজি’। যার মধ্য দিয়ে মূলত সেই সত্যটি স্মরণ করা হবে-জনপ্রিয় তথাকথিত ‘ইন্ডিয়ান’ ডিশগুলো (যেমন, অনিয়ন ভাজি এবং চিকেন টিক্কা মাসালা) প্রকৃতপক্ষে তৈরি হয়েছিল ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টকর্মী এবং শেফদের হাত ধরেই।
মহামতি ব্রিটিশ রানির আনুকূল্যে কুলিনারি শিল্পের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তুলে ধরতে এখন থেকে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর ‘ব্রিটিশ কারি ডে’ উদযাপিত হবে। ফলে হাজার হাজার পাউন্ডের তহবিল গঠন করা সম্ভব হবে। স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক যেকোনো সংকটে যা কাজে লাগবে।
তিল তিল করে গৌরবমণ্ডিত এ শিল্প গড়ে তুলেছেন প্রায় অর্ধশতক আগে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে যাওয়া পূর্বপুরুষরা। আর্থিক উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তারা। এক পর্যায়ে দুই দেশের স্বাদ বিজ্ঞান ও রন্ধনকৌশলের অনন্য ফিউশন ঘটিয়ে ভিত্তি রচনা করেন এ শিল্পের।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের জনক এবং স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রকাশক এনাম আলি এমবিই বলেন, দুঃখজনকভাবে প্রথম প্রজন্মের কারি-গুরুদের অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া মহামারির প্রেক্ষিতে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন আরো অনেকে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে দূর জন্মভূমি ছেড়ে একদিন তারা এসে পা রেখেছিলেন এ অচিন দেশে। পরবর্তীতে অদম্য মনোবল আর অমানুষিক পরিশ্রমের সুবাদে হালের এ সুবিশাল শিল্পকাঠামো গড়ে তুলতে সমর্থ হন তারা। বাংলাদেশে তাদের অবদান অপরিসীম।
এনাম আলি জানান, প্রথম প্রজন্মের এ মানুষগুলোর জীবনে সুখ-বিলাসিতা ছিল না। পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সবই ত্যাগ করেছেন তারা। তাদের সেই ত্যাগেরই ফসল ‘চিকেন টিক্কা মাসালা’ আজ ব্রিটেনের জাতীয় ডিশ।
দেশটিতে ১২ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট নিয়ে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সাড়া দিয়েছেন রানি। কারি ডে উদযাপনে সম্মতি ও উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। যার প্রধান লক্ষ্য এ শিল্পের গৌরবজনক ইতিহাস ও সাফল্য উদযাপন এবং সবাইকে এর সঙ্গে আরো বেশি সম্পৃক্ত করে তোলা।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ব্রিটেনের জাতীয় আয়ে পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখে কারি শিল্প।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়