সাত রঙের ফল খাবেন কেন?
সাত রঙের ফল খাবেন কেন?
বলা হয়ে থাকে যে, খাবার যত রঙিন হবে, বিশেষ করে ফলমূল ও সবজি যতো রঙে ভরপুর থাকবে পুষ্টি পাওয়া যাবে তত ভালো। বিশ বছর পুষ্টি ও ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করা ডাক্তার ডেভিডহেবার চমৎকার একটি বই লিখেছেন- ‘হোয়াট কালার ইজ ইউর ডায়েট’ নিউইয়র্কের রিগান বুকস প্রকাশ করেছে বইটি। এতে একটি মজার কথা তিনি লিখেছেন। তার ধারণা ভাত বা জাউ ভাত খাওয়া, সুপ, বর্ণহীন খাদ্য যারা আহার করেন এদের মধ্যেই রোগ বেশি। এমনকি হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস ও মেদস্থূলতাও এদের মধ্যে বেশি। ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি বা মেদস্থূলতা যেহেতু একে অপরের সঙ্গী এবং ডায়াবেটিস ও মেদ ইদানীং মহামারী হয়ে দেখা দিচ্ছে তাই তিনি এর নাম দিয়েছেন ডায়াবেসিটি।
লাল রঙের ফল যেমন টমেটো। টমেটো সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতকালীন সবজি হিসেবে একটু বেশিই মেলে। অনেকেরই পছন্দের তালিকায় উপরের সারিতে থাকে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ সমৃদ্ধ এ সবজি। এতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখ, ত্বক ও হাড়কে সুস্থ রাখে। টমেটোতে থাকা লাইকোপেন ও ভিটামিন ‘এ’ অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটিও ক্যান্সার রোধী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এর উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। সাধারণত ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু টমেটো ডিএনএ’কে ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে।
টমেটোতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য ভালো এবং অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। হাড় দুর্বল থাকলে টমেটো খান। এতে থাকা লাইকোপিন হারের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এই সবজি স্বাস্থ্যকর চোখ ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। টমেটো খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে শর্র্করার মাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। প্রতিদিন কুচি করে কাটা এক কাপ কাঁচা টমেটো খেলে দেহে ভিটামিনের অর্ধেক চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। টমেটো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।
এই টমেটো জাতীয় খাবার- এমনকি টমেটোর চাটনি বা সস্ও এর অন্তর্ভূক্ত। টমেটো, তরমুজ, পেয়ারা এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার রোধী এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কমলা রঙের ফলে রয়েছে বিটাক্যারোটিন। যা চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। যেমন- স্কোয়াশ, গাঁজর, আম, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
হলুদ রঙের খাদ্য কিছুটা কমলা পরিবারের সহোদর হলেও এদের মধ্যে আছে প্রচুর বিটা- ক্রিপটোজ্যানথিন। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। যেমন: কমলা, পেঁপে, পীচ ফল, আনারস, হলুদ গ্রেপফ্রুট ইত্যাদি।
সবুজ রঙ চোখকে দেয় বাড়তি সুরক্ষা। এসব খাবারে থাকে ল্যুটিন এবং জিয়াজ্যানথিন। যা চোখের ছানিপড়া ও ম্যাকুলার ক্ষয় থেকে সুরক্ষা দেয়। এসব হচ্ছে-এভোকেডো, শশা, সবুজ মটরশুঁটি, সবুজ বীনস্, সবুজ মরিচ, পালংশাক, কচুশাক, মেথিশাক, লাউশাক, ঢেকিশাক, কলমীশাক ইত্যাদি। গাঢ় সবুজ রঙের খাদ্যে রয়েছে প্রচুর থাইসোথায়োসায়েনটস্, সালফোর্যাফেন এবং ইনডোলস্। এগুলো ক্যান্সার রোধী। এসব হচ্ছে- ব্রকোলি, ব্রাশেলস্ অংকুর, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি। তাই এগুলো যতোটা সম্ভব খাওয়া ভালো।
তবে একথাও ঠিক দৈনিক ফল ও সব্জি খেলেই যে দেহের জন্য আবশ্যক সব পুষ্টি উপকরণ পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। কারণ আজকাল ফাস্টফুডের দুনিয়ায় মানুষের প্রিয় একটি খাবারের মেনু হচ্ছে লেটুস ও ফ্রেঞ্চফ্রাই। দুটো সব্জি এতে থাকলেও পুষ্টির ঘাটতি কিন্তু রয়ে গেলো।
কারণ কি? এদের মধ্যে রঙের বাহার নেই। বিচিত্র বর্ণের শাক সব্জি হলে পাওয়া যাবে রোগ প্রতিরোধক রাসায়নিক বস্তু। যাকে আমরা বলছি ফাঁইটো নিউট্রিয়েন্টস্’। পুষ্টিকর সব উপকরণ প্রচুর পেতে হলে কি করতে হবে তাহলে? ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, চর্বি যা দৈনিক খাচ্ছি এর সঙ্গে যোগ করতে হবে অন্ততঃ এক টুকরো ফল, এক কাপ ফলের জুস, দুই কাপ সব্জি, এক কাপ শাক। সপ্তবর্ণা পরিবার থেকে সাতটি রঙের প্রতিটি থেকে প্রতিদিন এক টুকরো ফল, এক কাপ ফলের রস, এক কাপ সবজি যোগ করতে হবে।
ব্যস। সাত রঙের সাত রকম ফল সবজি খাওয়া হলো। সাতটি রঙের সবজি ও ফলের কথা এবার তাহলে বলা যাক। বেগুনি রঙের খাদ্যে থাকে ‘এনথ্রোসায়ানিন’- এই শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা কমিয়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে। যেমন: কালোজাম, নীলজাম, চেরিফল, ক্যানবেরি, কুল, শুষ্ককুল, বেগুনি রঙের আঙুর, রাজবেরি, আপেল, নাসপাতি, মরিচ, স্ট্রবেরি এবং শাক ইত্যাদি।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়