দৌড়ানো কি হাঁটুর জন্য ক্ষতিকর?
দৌড়ানো কি হাঁটুর জন্য ক্ষতিকর?
যারা নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস করতে চান তাদের সবারইকেই একটা কথা শুনতে হয় যে, দৌড়ালে হাঁটুর উপর চাপ পড়ে। যার ফলে বয়সের সাথে বাড়তে পারে হাঁটুজনিত বিভিন্ন জটিলতা।
কখনো কখনো এই কথাটা আমাদের কাছে সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ দৌড়াতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটুর উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়। যার কারণে হাটুর চারপাশে থাকা তরুণাস্থির ক্ষয় হতে পারে এবং শেষে হয়তো হাঁটুর ক্ষয়ও হতে পারে। [তরুণাস্থি কী? তরুণাস্থি হলো হাঁটুর চারপাশে যে রাবার জাতীয় কোমল টিস্যু থাকে তাই। তবে এ টিস্যুর সাথে রক্ত সংবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই।]
তবে কি দৌড়ালে হাঁটুর সমস্যা ও আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা বাড়ে?
অনেকের মতই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রস মিলারকেও এ ব্যাপারটি আগ্রহী করে তোলে। তিনি এ নিয়ে একটি গবেষণা চালান।
শুরুতে তিনি বিভিন্ন প্রাণীর উপর গবেষণা পরিচালনা করেন। প্রাণীদের উপর করা বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফল থেকে জানা যায়, যেসব প্রাণীরা সাধারণত দৌড়ায়, তাদের হাঁটুর তরুণাস্থি যেসব প্রাণীরা হাঁটে বা দাঁড়িয়ে থাকে তাদের তুলনায় অধিক পুরো এবং সুস্থতর হয়।
অর্থাৎ যেসব প্রাণীরা সাধারণত দৌড়ায় তাদের তরুণাস্থি সময়ের সাথে আরো পুরো এবং আরো সহনশীল হয়ে উঠে।
ড. মিলারের মনে হয়েছিলো, সম্ভবত যেসব মানুষের নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস আছে তাদের তরুণাস্থিও সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি কিছু সুস্থ তরুণ-তরুণীর উপর পরীক্ষা চালান।
মূলত তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, কিছু সেচ্ছাসেবক ৬ কিলোমিটার দৌড়ালে আর বাকি কিছু সেচ্ছাসেবক ৩ কিলোমিটার হেঁটে আর ৩ কিলোমিটার দৌড়ালে, দুই দলের হাটুতে কী কী ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে।
পরীক্ষা থেকে চমকে যাওয়ার মতোই ফল আসে। মডেল অনুযায়ী, নিয়মিত হাঁটলে হাঁটুর উপর যে চাপ পড়ে, তার ফলস্বরূপ ৫৫ বছর বয়স হতে হতেই ৩৬ শতাংশ মানুষের আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু, যেহেতু তরুণাস্থি সময়ের সাথে সাথে তার ক্ষয় সারিয়ে তুলতে পারে, তাই একই সময়ে আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা ১৩ শতাংশেরও কম।
নিয়মিত দৌড়ানো মানুষদের বেলায়, পরিসংখ্যান আরও আশ্চর্যজনক। তাদের আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে ৯৮ শতাংশ, সেখানে বাস্তবে তাদের সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। যা থেকে বোঝা যায়, দৌড়ানোর ফলে হাঁটুর তরুণাস্থি সময়ের সাথে আরো শক্ত হতে থাকে।
ড. মিলার বলেন, উপরের পরীক্ষা থেকে একটি কথা সহজেই বলা যায়, তরুণাস্থি সময়ের সাথে সেরে উঠতে পারে। দৌড়ানোর ফলে তরুণাস্থির যে ক্ষতি হয়, তা সে বুঝতে পারে, সে অনুযায়ী নিজেকে সারিয়ে তোলে এবং আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। তিনি আরো যুক্ত করেন, এ গবেষণা থেকে অবশ্য কীভাবে তরুণাস্থি নিজেকে সারিয়ে তোলে, তা বোঝা না গেলেও, অন্তত এটা প্রতীয়মান হয় যে, নিয়মিত দৌড়ানোর ফলে হাঁটুর ক্ষয় হয়ে আর্থ্রাইটিস হওয়ার যে কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি, তা শুধুই একটি ভ্রান্ত ধারণা।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়