রোজা রেখে যে ৭টি কাজ করবেন না
রোজা রেখে যে ৭টি কাজ করবেন না
ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রমজান মাসে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকেন। অভুক্ত থাকার ফলে এ সময় শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মনও থাকে বিক্ষিপ্ত। এ সময় অনেকেই না বুঝে কিছু কাজ করেন, যেগুলো পরিহার করা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক রোজা রেখে যে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অতিরিক্ত ঘুম
রোজা রেখে সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেওয়ার বদভ্যাস আছে অনেকের। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে এমনিতেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। সেইসঙ্গে ধর্মীয়ভাবেও রোজা রেখে ঘুমিয়ে থাকাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। তাই অতিরিক্ত ঘুম বাদ দেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম হয়ে গেলে বাকি সময়টা অন্যান্য কাজে ব্যয় করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট।
একটানা বসে থাকা
রোজায় ক্লান্ত থাকার কারণে অনেকে কোথাও বসে আছেন তো আছেনই। আর কোনো হেলদুল নেই। এই অভ্যাসের কারণে শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় শরীর নড়চড়া না করলে রক্ত চলাচলে সমস্যা হতে পারে। অনেকের বসার ভঙ্গীর কারণে মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রোজা রেখে ক্লান্ত লাগলেও কিছুক্ষণ পরপর অল্পস্বল্প হাঁটাহাঁটি করুন।
সারাদিন ধরে কেনাকাটা
রোজার পরে আসে খুশির ঈদ। আর ঈদ মানে সবার জন্য কেনাকাটা। এই কেনাকাটার কাজ সারতে গিয়ে অনেকে সারাদিন ব্যয় করেন মার্কেটে। এভাবে ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটা করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। তাই এ সময় অতিরিক্ত কেনাকাটার অভ্যাস বাদ দিন। যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই কিনুন। এভাবে ছোটাছুটি না করে আগে একটি তালিকা করে নিন। এরপর সে অনুযায়ী একটা একটা কিনে ফেলুন।
দীর্ঘ সময় ধরে রান্না
রোজা রেখে এই কাজ অনেক নারী করে থাকেন। ইফতার ও সেহরির আয়োজন নিয়ে তারা তুমুল ব্যস্ত থাকেন। বাহারি পদের ইফতার টেবিলে রাখতে গিয়ে তারা হয়ে পড়েন কাহিল। রোজা যেহেতু সংযমের মাস তাই খাবারের তালিকায়ও সংযম আনুন। পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর কয়েক পদ রাখুন। খাবারের অপচয় করবেন না। সেইসঙ্গে ডুবো তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত মসলাদার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। রোজা রেখে চুলার পাশে গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় কাটালে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরে আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবেন।
শরীরচর্চা
শরীরচর্চা করা শরীরের জন্য উপকারী ও প্রয়োজনীয়। তবে রোজা রেখে শরীরচর্চার ফলে আমাদের শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যায়। যে কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শরীরচর্চার পর তাই বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর পানীয় পানের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু রোজা রেখে যেহেতু কোনোকিছু খাওয়া সম্ভব নয়, তাই এ সময় শরীরচর্চা এড়িয়ে যেতে হবে। নয়তো শরীর আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবে।
দৃষ্টি সংযত রাখা
বেগানা মেয়েদের দেখা থেকে চোখকে হেফাজত করুন। তা সরাসরি দেখা হোক বা টিভি-সিনেমায় দেখা হোক বা ম্যাগাজিন ও পত্রিকার ছবি হোক। অনেকে রোজা রেখে অবসর সময় নাটক-সিনেমা দেখে কাটায়। এতে তাদের রোজা হালকা হয়ে যায়।
জবানের হেফাজত করা
অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্থাৎ জবানের হেফাজত করতে হবে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ করেনি, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। -সহিহ বুখারি: ১/২৫৫, হাদিস- ১৯০৩
অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি কেউ তার সঙ্গে গালিগালাজ বা মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত হতে চায়, তবে সে (অনুরূপ আচরণ না করে) বলবে, আমি রোজাদার। '
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রোজা অবস্থায় মারামারি ও ঝগড়াঝাঁটি তো দূরের কথা, শোরগোল করাও রোজার আদব পরিপন্থী। অতএব, জবানকে এসব থেকে বিরত রেখে সর্বদা জিকির ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে তরতাজা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়