চাকরি ছাড়বেন? জেনে নিন সঠিক উপায়
চাকরি ছাড়বেন? জেনে নিন সঠিক উপায়
বর্তমান বেতনে আপনি সন্তুষ্ট নন, দীর্ঘদিন কাজ করার পরও বেতন বাড়ছে না কিংবা সময়মত প্রমোশন হচ্ছে না অথবা বর্তমান কাজের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে, ঘাড়ের ওপর সবসময় নিঃশ্বাস ফেলছে রোবোটিক বস, তার খবরদারি থেকে রেহাই পেতে চান আপনি। কিংবা প্রতিদিনই বিরক্তিকর একঘেয়ে কাজ করতে করতে আপনি ক্লান্ত; ভাবছেন চাকরিটা না বদলালেই নয়, বসের টেবিলে পদত্যাগ পত্রটা রেখে আসবেন।
চাকরি ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যেতে চান, অবশ্যই যাবেন। চাকরি ছাড়তে চাওয়ার অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে কারণ যাই হোক না কেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে নিতে হবে। একবার ভাবুন, সম্পর্কের যে সেতুবন্ধন গড়েছেন- তা কী নিমিষেই শেষ করবেন?
চাকরি আপনার পোষায় কিনা- তা নিতান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয় আর দিনশেষের সিদ্ধান্তটাও আপনার একান্ত নিজের। কিন্তু, একইসঙ্গে জরুরি সঠিক উপায় মেনে কর্মস্থল ত্যাগ। কারণ, তাতে আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতি বৈ ক্ষতি হবে না- রক্ষা হবে কর্মী হিসেবে আপনার সুনাম, নিশ্চিত হবে ভবিষ্যতে আরও ভালো বেতনে চাকরি পাওয়ার সুযোগ।
কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে, আপনি বর্তমান কর্মস্থল সঠিক উপায়ে ত্যাগ করতে পারেন। মনে রাখবেন, রাগারাগি করে চাকরি ছাড়ার পরিণাম ভালো হয় না। তার জের পড়ে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে। তে পারে আপনি যে শিল্পে আছেন, সেখানকার অন্যান্য কোম্পানি আপনাকে বর্জন করবে। ক্ষুন্ন হবে আপনার পেশাগত সুনাম। অনেক সেক্টর আছে যার পরিধি বেশ ছোট। সবাই সবাইকে চেনে, নতুন কর্মী নিয়োগের আগে তারা আগের প্রতিষ্ঠানে খোঁজখবর নেয়। এ বাস্তবতায় আপনি যদি বর্তমান চাকরি বাজেভাবে ছাড়েন বা সদ্য চাকরিতে ঢুকেই ছেড়ে দিতে উদ্যত হন- নির্ঘাত তা আপনার ক্যারিয়ারে বাজে প্রভাব ফেলবে।
তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেনে নিন, পেশাদারভাবে চাকরি ছাড়ার ধাপগুলো। এই গাইডলাইন আপনাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়াও শেখাবে।
১. চাকরি ছাড়ার আগে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। পরবর্তী কর্মস্থল সম্পর্কেও একটা প্রাথমিক ধারণা আগেই থেকেই নিতে হবে। আসলে চাকরি ছাড়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সঠিক ভাবে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চাকরি ছাড়ার কিছু দিন আগে মানবসম্পদ বিভাগকে অবহিত করার নিয়ম চালু থাকে। এ সময় মানবসম্পদ বিভাগ আপানার বিকল্প কর্মী খুঁজে বের করা এবং আপনার প্রাপ্য বেতন ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা হিসাব করার সুযোগ পায়।
৩. পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার পর বাকি দিনগুলোতে এমন কোন আচরণ করা যাবে না, যাতে প্রতিষ্ঠান কিংবা সহকর্মীদের প্রতি আপনার কোন প্রকার অসস্তষ্টির প্রকাশ ঘটে। তাই পুরোনো সহকর্মী কিংবা অফিসের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ কিংবা বাজে আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. আর্থিক হিসাব-নিকাশের দিকে খেয়াল রাখুন। বকেয়া বিল কিংবা ছোটখাটো সব আর্থিক হিসাব মিটিয়ে ফেলুন। আপনার অর্জিত ছুটি আর বেতন-বোনাস সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মানবসম্পদ বিভাগের সাথে কথা বলুন।
৫. ব্যবহৃত ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, গাড়ি-মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি, চাবি নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে লিখিত ছাড়পত্র নিন।
৬. চাকরি ছাড়ার আগে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতিপত্র আর অভিজ্ঞতার সনদ মানবসম্পদ বিভাগ থেকে নিতে ভুলবেন না। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অভিজ্ঞতা সনদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। বুদ্ধিমান কর্মীরা কর্মস্থল পরিবর্তনের সময় অব্যাহতিপত্র আর অভিজ্ঞতা সনদ নিতে ভুল করেন না।
৭. অফিসের ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি মুছে ফেলুন এবং অফিসের প্রয়োজনীয় ফাইলসমূহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিন।
৮. চাকরি ছাড়ার শেষ দিন পর্যন্ত অফিসের নিয়ম-কানুনকে শ্রদ্ধা করুন। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েই অনেক কর্মী পুরোনো কর্মস্থলে অসৌজন্য ও বিশৃঙ্খল আচরণ করেন, যা কোনভাবেই করা ঠিক হবে না। চাকরি ছাড়ার সময় অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে পুরোনো রাগ-অভিমান কাটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন বেসরকারি চাকরিতে নেটওয়ার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরোনো সহকর্মীদের সাথে সুম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব। এমনও তো হতে পারে যে আপনি নতুন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যা শুনে এসেছেন বাস্তবে তার কোন মিল নেই! আপনি নতুন কাজে যোগ দিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে আরো বেশি হতাশায় পড়ে গেছেন! আপনার জানাশোনার জগৎ টা যদি বড় হয় তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে আপনি সহজেই বেরিয়ে আসাতে পারবেন। পুরোনো সহকর্মীরাই হয়তো আপনার এই বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবে। তাই ভাল কর্মী হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সচেষ্ট হোন।
জিয়াউল হক: মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, নেক্সাস টেলিভিশন।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়