এম্পটি নেস্ট সিনড্রম: সন্তান ঘর ছাড়লে যেভাবে সামলাবেন নিজেকে
এম্পটি নেস্ট সিনড্রম: সন্তান ঘর ছাড়লে যেভাবে সামলাবেন নিজেকে
এম্পটি নেস্ট সিনড্রম |
সন্তান যখন তার নিজের জীবনপথের সন্ধানে মা-বাবার আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, তখন তা সহ্য করা বাবা মায়ের জন্য বেশ কষ্টের হয়। দীর্ঘ অনেকগুলো বছর একসাথে বাস করার পর এভাবে হঠাৎ সন্তানের ঘর ছেড়ে যাওয়ার মানসিক ধাক্কার সাথে খাপ খাওয়ানোটা খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা নয় অনেক পিতামাতার জন্যই। কিন্তু কি-ই-বা করার আছে, সন্তানের ভালোর জন্য বাবা-মা এত কষ্ট সহ্য করেন, এটুকুও তারা মুখ বুজে সহ্য করে নেন। তবে এই সময়টা আরেকটু ভালো কাটানোর জন্য সদ্য সন্তানবিরহে ভোগা বাবা-মা কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে অন্য জেলায় পাড়ি দেয়। বিশেষত গ্রামের ছেলেমেয়েরা, যারা কিনা তাদের জীবনের দীর্ঘ ১৮-২০ বছর মা-বাবা'র সাথে একত্রে বাস করে, তাদেরকে হঠাৎ করে শেকড় ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। এটি তাদের জন্য যেমন কষ্টের, তেমনি তাদের মা-বাবা'র জন্যও ভীষণ মর্মপীড়ার। ইংরেজিতে এই অবস্থাকে বলে 'এম্পটি নেস্ট সিনড্রম' (Empty nest syndrome)।
এম্পটি নেস্ট সিনড্রম-এ ভোগা মা-বাবাদের জন্য পুরো পরিস্থিতি ভীষণ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাদের জন্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের কথা। সেগুলোকে মাথায় রেখে এগোলে এই সাময়িক পরিবর্তনের ধাক্কাটা খুব বেশি আঘাত করবে না।
নিজেকে পিতা/মাতা'র পরিচয়ের বাইরে ভাবুন
আপনি কেবল একজন মা বা বাবা নন। সমাজে আপনার অন্যান্য ভূমিকাও আছে। যেমন, আপনি কারও স্বামী/স্ত্রী, কারও ভাই/বোন, আপনি নিজেও কারও না কারও সন্তান। সুতরাং, কেবল মা/বাবা'র ভূমিকার জন্য বাকি ভূমিকা বা সম্পর্কগুলোকে ছোট করে দেখলে চলবে না। আপনাকে এসব সম্পর্কের পেছনে সময় দিতে হবে। যে সময়টুকু আপনি আপনার সন্তানকে পিতা বা মাতা'র ভূমিকায় দিতেন, তা এবার অন্যান্য ভূমিকাগুলোর পেছনে বণ্টন করুন।
পরিবর্তন হোক ধীরে
বড় কোনো পরিবর্তন এলে তা ধীরেসুস্থে গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আপনার কাছে সন্তানবিহীন ঘর ভীষণ ফাঁকাফাঁকা মনে হতে পারে, সময়ও খুব ধীরে কাটছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলোর সাথে এঁটে ওঠার জন্য খুব দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। অনেকে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে নতুন একটি কাজে খুব বেশি করে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আপনি হঠাৎ করে এভবে পরিবর্তন আনতে পারবেন না। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে চলমান পরিবর্তনের কথাও।
আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন
কখন আপনার সন্তান ঘর ছেড়ে দীর্ঘসময়ের জন্য বেরিয়ে পড়বে তা নিয়ে আপনার ধারণা থাকাটাই স্বাভাবিক। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে কয়েক বছর আগে থেকে নিজেকে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা। যত আগে থেকে আপনি এ ধাক্কাটির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন, তত ভালভাবে আপনি পরে নিজেকে সামলাতে পারবেন।
এবার আরেকটু উপভোগ করুন নিজের জীবনকে
সন্তানের সুখদুঃখের জন্য মা-বাবাকে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু সন্তান যখন বেরিয়ে পড়ে তখন হাতে একটু বেশি সময় থাকে, নিজের জন্য বাড়তি কিছু করা যায়। আগে সন্তানের কথা ভেবে নিজে যেসব কাজ করতে পারতেন না, যেসব জিনিস উপভোগ করতে পারতেন না, চাইলে এখন সেসবের স্বাদ চেখে দেখতে পারেন। একটু বেশি করে ঘুরতে যাওয়া, নিজের পছন্দের খাবার খাওয়া এসব হরহামেশাই করা যেতে পারে।
পার্টনারকে সময় দিন
সন্তান চলে যাওয়ার পর তার কষ্ট ভুলে যাওয়ার আরেকটি ভালো উপায় হতে পারে পার্টনারকে সময় দেওয়া। এই মুহূর্তগুলোকে একান্তই নিজেরা উপভোগ করতে পারেন। এতে করে মানসিক কষ্ট অনেকাংশেই লাঘব হবে। দুজন মিলে নতুন কিছু চেষ্টা করতে পারেন। এই সময়টুকুকে জীবনের একটি বিশেষ স্বাধীনতা হিসেবে দেখতে পারেন।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়