সাধারন বেলের অসাধারন গুণ
সাধারন বেলের অসাধারন গুণ
বাংলাদেশ ফলের ভান্ডার। এদেশে ঋতুভেদে পাওয়া যায় নানাবিধ ফল-ফলাদি। গরমের মৌসুমে বাজারে প্রচুর তরমুজ, আনারস, পেঁপে, কলার পাশাপাশি পাওয়া যায় বেল বা শরবতী বেল। যার বোটানিক্যাল নাম হল -Aegle marmelos. বেশ শক্ত খোসা দ্বারা আবৃত গোলাকৃতির ফল এটি, ভেতরে রয়েছে ঘন পাল্প। বেল নানাভাবে খাওয়া যায়। এর চমৎকার স্বাদ। পুষ্টি উপাদানেও ভরপুর। বেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে মোট শর্করার পরিমাণ ১৮ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে ৫ গ্রাম। তাছাড়া প্রোটিন আছে ৭ গ্রামের মতো, যা একটা ডিমের কাছাকাছি। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১,বি২,সি এবং বিটা ক্যারোটিনের খুব ভালো উৎস। কিছু পরিমাণে আয়রনও পাওয়া যাবে বেল থেকে।
বেল আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি, যেমন-
• পাকা বেলের ভেতরের পাল্প বীচি ফেলে খালি খাওয়া যায় আবার কেউ কেউ পাল্পের সাথে খেজুরের গুঁড় মিশিয়ে খেয়ে থাকেন।
• এর পাল্প গুলিয়ে শরবত করে খাওয়া যায়। শরবতে দুধ, চিনি, বাদাম যোগ করলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বেড়ে যায়।
• কাঁচা বেল টুকরো করে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে চা করেও খাওয়া যায়।
• বেলে যেহেতু পাল্প বেশি তাই এই ফলের জেলী, জ্যাম, মারমালেড করলে ভালো হয়।
বেলের অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।যেমন-
ডায়রিয়া: কাঁচা বেল খেলে পাতলা পায়খানা কমে এবং তার ঘনত্বও কঠিন হয়। কাঁচা বেলের টুকরা চিবিয়ে অথবা চা করে ডায়রিয়ার রোগীদের খেতে বলা হয়।
ইউরিন ইনফেকশন: বেল খুব ভাল মূত্রকারক, যারা ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত তারা বেলের শরবত খেলে মূত্র উৎপাদন বাড়বে, ফলে মূত্রনালী পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: বেলের রয়েছে উচ্চমাত্রায় এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা অনেক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কমাতে সক্ষম।
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস: বেলে প্রচুর ফাইটোক্যামিকেল রয়েছে যেমন- Lupeol, Citral, Rutin এরা ক্যান্সার রোগে দেয়া কেমোথেরাপির নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
প্রাকৃতিক জন্মনিরোধক: গবেষণায় দেখা গেছে বেল পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদনে বাঁধা দেয় তাই এটি প্রাকৃতিক জন্মনিরোধক হিসেবে কাজ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: পাকা বেলের শরবত বা পাল্পে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকে তাই এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খালি পেটে সকালে বেল খেলে পেট পরিষ্কার হয়।
পেপটিক আলসার: যারা পেপটিক আলসারে ভুগছেন তারা বেল খেলে অনেক উপকৃত হবেন। কেননা বেলে আছে tannin থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে একটা mucosal layer তৈরী করে ক্ষত স্হান নিরাময় করে। সপ্তাহে তিনদিন টানা একমাস বেল খেলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
লিভারের রোগে: বেলে প্রচুর বিটাক্যারোটিন থাকে যা লিভারের ইনজুরি ভালো করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ভিটামিন বি ১ ও বি ২ পর্যাপ্ত থাকে যা লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
যক্ষ্মা: গবেষণায় দেখা গেছে যক্ষ্মা রোগীকে টানা ৪০ দিন বেল খাওয়ানোর পর তার রোগের তীব্রতা অনেকাংশেই কমে যায়। তাই গবেষকরা বেলকে যক্ষা রোগের চিকিৎসায় উপকারী বলে মতামত দিয়েছেন।
মাথা ব্যথা: মাইগ্রেনসহ যে কোন তীব্র মাথা কমাতে বেলের চা চমৎকার কাজ করে।
কৃমিনাশক: কাচা বেলের চূর্ণ দিনে ২ বার ১ চা চামচ করে খেলে তা প্রাকৃতিক উপায়ে কৃমিনাশ করে তাই বাচ্চাদের কৃমির হাত থেকে বাঁচাতে বেল চূর্ণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।
একটি ফলের এত এত উপকারিতা রয়েছে তাই এই গরমে রোজা রেখে ইফতারে বেলের শরবত হতে পারে হাইড্রেটিং ও পুষ্টিকর পানীয়।
তবে এ তথ্য অবশ্যই কোনো বিশেষ শারীরিক অবস্থায় প্রযোজ্য হবে না, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
মাহফুজা আফরোজ সাথী: চিফ ডায়েটিশিয়ান, ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়