শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৪:১১, ৮ নভেম্বর ২০২৪

১৩৭

মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও শক্তিশালী জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতে জর্জরিত এবং রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল রাখাইন রাজ্য শিগগিরই চরম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বলেছে, একটি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যা পশ্চিম রাখাইনকে ‘অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের কিনারায়’ ঠেলে দিয়েছে।

মিয়ানমার ও প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে পণ্য প্রবাহে সীমাবদ্ধতা, বাসিন্দাদের আয়-রোজগারের অভাব, মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার, খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং প্রয়োজনীয় সেবা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবের মতো একাধিক পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত সমস্যার কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ইউএনডিপি জানিয়েছে, অত্যন্ত বিপন্ন এই জনসংখ্যা আসন্ন মাসগুলোতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার বহুদিন ধরেই রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশ থেকে আসা ‘বাঙালি’ হিসেবে দেখে আসছে। যদিও তাদের পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করছে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় সবাইকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি গোষ্ঠীর হামলার পর সেনাবাহিনী নির্মম অভিযান শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।


২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে গণতন্ত্রপন্থি গেরিলা এবং বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত নভেম্বরে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আরাকান আর্মি রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে এবং রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। রাখাইন জাতিগত সংখ্যালঘু আন্দোলনের শসস্ত্র বাহিনী হিসেবে পরিচিত এই আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনীকে উৎখাতের চেষ্টা চালানো সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর জোটেরও সদস্য।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) তাদের ২০২৩ ও ২০২৪ সালের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জানায়, ‘রাখাইনের অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে গেছে, যেখানে বাণিজ্য, কৃষি ও নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে।’

ইউএনডিপি জানায়, অবরোধের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় মানুষের আয় কমে গেছে এবং একই কারণে কৃষিখাতের চাকরিও হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া, সিমেন্ট আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘ব্যাপক দাম বেড়েছে’ এবং চাকরির প্রধান কর্মস্থল হিসেবে পরিচিত নির্মাণ শিল্পও অচল হয়ে পড়েছে।

'রাখাইন: এক দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত' শিরোনামের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন শিগগরিই চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাখাইনের অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন তার চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে।

জাতিসংঘ বলছে, বীজ ও সার সংকট, বৈরী আবহাওয়া, আর চাষাবাদ করতে পারছে না আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চলমান সংঘাতের কারণে চাল উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণই স্থবির হয়ে পড়া ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলবে।

রাখাইনে পণ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ, ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি খাত পুনরুদ্ধারে জরুরি অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছে ইউএনডিপি।

ইউএনডিপি সতর্ক করে বলেছে, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে ৯৫ শতাংশ জনগণ বেঁচে থাকার সংগ্রামে পিছিয়ে পড়বে। তারা দেশীয় উৎপাদনে ব্যাপক হ্রাস, চরম মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিজেদের মতো করে টিকে থাকতে বাধ্য হবে। সংস্থাটি আরও বলেছে, বাণিজ্য রুট বন্ধ এবং ত্রাণ কার্যক্রমে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাখাইন গভীর মানবিক সংকটাপন্ন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
পৃথিবীজুড়ে বিভাগের সর্বাধিক পঠিত