বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ || ৪ আশ্বিন ১৪৩১ || ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

শেখ হাসিনার সঙ্গীদের সম্পদ তদন্তে লন্ডনের সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

২১:৪৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৮৩

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

শেখ হাসিনার সঙ্গীদের সম্পদ তদন্তে লন্ডনের সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিদেশে সম্পদের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে দুই ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে কিনা, এ নিয়ে নতুন প্রশাসন তদন্ত করছে।

গভর্নর ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানান, ডাইভার্ট করা সম্পদ যে কয়েকটি দেশের মধ্যে রাখা হতে পারে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে- যুক্তরাজ্য তার মধ্যে একটি। এ কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন।

আহসান মনসুর মনে করেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও থাকতে পারে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার খুবই সহযোগিতা করেছে। হাইকমিশনার আমার অফিসে এসেছিলেন এবং তারা ব্যাপক প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা বলেছেন।

এইচ মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যের সম্পত্তির (১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের) সম্পত্তির অর্থের তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায়। আমরা এই সম্পদগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চাইব।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে। দেশটিতে কঠোর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে। এর ফলে নাগরিকেরা প্রতি বছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে এ ধরনের চুরি সম্ভব ছিল না। এ বিষয়ে তদন্ত 'প্রাথমিক পর্যায়ে' রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা গত মাসে ভারতে পালিয়ে যান। তবে সেখানে তার অবস্থান অজানা। মন্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যুক্তরাজ্যে স্যার কেয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য এই বিষয়টি 'ঝামেলাদায়ক' হয়ে উঠতে পারে, কেননা এই সরকারের নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপ এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত- এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নেতা মুহাম্মদ ইউনূসও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এটা এই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।

১৭ কোটি মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। ভোট কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার শাসন কলঙ্কিত হয়েছিল। শেষে ছাত্র বিক্ষোভ তার সরকারের পতন ঘটায়।

হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চলতি বছরের শুরুর দিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে 'ব্যাখ্যাহীন সম্পদের' উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। 

এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি এবং ইউকে কোম্পানিজ হাউসের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামানের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যে অন্তত ২৮০টি সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছে।

তবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসেন বলেন, তার মক্কেলের 'লুকানোর কিছু নেই'। তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী ছিলেন, রাজনীতিতে আসার আগে নব্বইয়ের দশকে সম্পদ অর্জন শুরু করেছিলেন।

সাবেক এই মন্ত্রী চলতি বছরের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তার বৈদেশিক সম্পদ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে এসেছে।

এসব বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা দীর্ঘদিনের নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ করেছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
পৃথিবীজুড়ে বিভাগের সর্বাধিক পঠিত