হুমায়ুনের ‘ওল্ড ফুলস ক্লাব’
হুমায়ুনের ‘ওল্ড ফুলস ক্লাব’
আজন্ম সলজ্জ সাধ ছিল তাঁর ফানুস ওড়ানোর। উদযাপনের খেরোখাতায় বিচিত্র ছিল হুমায়ুন আহমেদের জীবন। তাতে বেদনার মতোই খেলা করেছে হাসি আনন্দ। তেমনই নির্মল আনন্দ আর অফুরান প্রেরণার উৎস, তার প্রিয় মানুষ আর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা ‘ওল্ড ফুলস ক্লাব’।
বৃদ্ধ বোকা সঙ্ঘ। হুমায়ূনের ভাষায় কুলোকের মিলনস্থান। লিখেছেন, ‘আমার দখিন হাওয়ার বাসায় প্রায়ই আড্ডা বসে। অর্থাৎ কিছু কুলোক একত্রিত হন। আড্ডার প্রধান ব্যক্তিকে বলে আড্ডাধারী। আমি সেই জন। বাকীদের পরিচয় দিচ্ছি। শাওন (তার বাড়িতেই আড্ডা বসছে, সে যাবে কোথায়?), আলমগীর রহমান (অবসর এবং প্রতীক প্রকাশনীর মালিক। আমার নীচতলায় থাকেন।) আর্কিটেক্ট করিম (তিনি আগে দখিন হাওয়াতেই থাকতেন, এখন বিতারিত।)’।
সেই কুলোকের প্রধান নিজে হলেও কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধু আর্কিটেক্ট করিম তার এই সঙ্ঘের অন্যতম আড্ডাধারী। কলেজ জীবনে হুমায়ুনের বন্ধু এই আর্কিটেক্ট ফজলুল করিম, যাকে ‘মাইকেল’ বলেই ডাকতেন হুমায়ুন তার কাছে জানতে চাওয়া, ‘ওল্ড ফুলস ক্লাবে’র জন্ম হলো কিভাবে?
বললেন, ‘একদিন হুট করেই হুমায়ুন বললো, আমাদের তো বয়স হয়ে যাচ্ছে, আমরা তো এখন ওল্ড ফুলস ক্লাবের মেম্বার। ধর, আমরা যে ক’জন আছি- আমি, তুমি, আলমগীর তো এখন ওল্ড। এবং ফুলস। তাই আমরা ওল্ড ফুলস ক্লাবের মেম্বার’।
সে আড্ডায় রাজনীতি থেকে আরম্ভ করে, খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য, নাটক তো ছিলই। আরেকটা অবশ্যই থাকতো, তা হলো পচানো। এটা ছাড়া আড্ডা জমতোই না।
আড্ডায় যোগ দেবারও বিচিত্র নিয়ম কানুন। তুলনামূলকভাবে বয়সে কম যারা, তাদের ছিল না ফুল মেম্বারশিপ। অবসর প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী আলমগীর রহমান জানালেন, ‘অনেকটা মজা করেই হুমায়ুন বলতেন, আমরা তো ওল্ড ফুলস ক্লাবের পার্মানেন্ট মেম্বার। কিন্তু জুনিয়ররা পার্মানেন্ট মেম্বার হবে না। তারা হবে এসোসিয়েট মেম্বার’।
যাদের পছন্দ করতেন, যাদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন, তারাই এই ক্লাবে যোগ দেবার অনুমতি পেতেন- জানালেন ক্লাবের অন্যতম সদস্য অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। বললেন, ‘গণ্ডির বাইরে তিনি সাধারণত যেতেন না। তিনি যাদের পছন্দ করেন, যাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে স্বাচ্ছান্দ্য বোধ করতেন, তাদেরই এখানে অবাধ যাতায়াত ছিল’।
এমন আড্ডাই নাকি অনন্ত প্রেরণার উৎসের সন্ধান দিত হুমায়ূনকে। তাঁর সহধর্মিনী মেহের আফরোজ শাওন সেই উৎসকে বলছেন প্রাণশক্তি। তার ভাষায়, ‘এখান থেকে হুমায়ুন আহমেদ তার যে প্রাণশক্তি, সেই প্রাণশক্তিটা নিতেন। নিজের মতো থাকতে পছন্দ করতেন তো, সাধারণ মানুষের রিঅ্যাকশন জানার তো তার আর কোন উপায় ছিল না। এই যে ওনার বন্ধুরা, বিভিন্ন সেক্টরের মানুষগুলোর কাছ থেকে তার নিজের লেখা নাটক, লেখা গান কিংবা বানানো সিনেমার প্রতিক্রিয়া নিতেন’।
হুমায়ূনের ওল্ড ফুলস ক্লাবের স্থায়ী পাখি ছিল। ছিল অতিথি পাখি, নিমন্ত্রণের পাখি ও প্রয়োজনের পাখি। নিমন্ত্রিত পাখি হয়েই আড্ডার অংশ হতেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এই কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ বলছেন, ‘উদযাপনের মুহুর্ত তার অসংখ্য ছিল না। তার পরিধি সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি বাইরে খুব বেশী যেতেন না। তাই তার ঘরে যখন আসতেন বন্ধুরা, তখন খুব আনন্দ পেতেন’।
সীমিত পরিধির জীবনে সেই আড্ডার শেষ আয়োজন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ মে। তাঁর আমেরিকায় শেষ যাবার আগে...
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন - ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৩] - শোকস্রোতের নীলমণি: নাট্যদিশারী আফসার আহমদ
- ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস
১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন, [পর্ব-২] - ভ্রমণকাহিনী: ইরানি গোলেস্তান আর ঝর্ণার গল্প
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৩
- রশীদ হায়দার আর নেই
- ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ২৪
- সিলভিয়া প্লাথের শেষ বই