সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব ফেলেছে করোনা: সমীক্ষা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৯:২৩, ১১ এপ্রিল ২০২১

৬২৩

অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব ফেলেছে করোনা: সমীক্ষা

গত বছর কোভিড-১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি দ্রুত মূল্যায়নে দেখা গেছে, জনস্বাস্থ্যের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুফল অর্জনের জন্য অধিকতর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। 

সমীক্ষাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভবতী মা, প্রসূতি ও নবজাতক, বিভিন্ন রোগের টিকা প্রত্যাশী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, জরুরি রোগী, জটিল রোগে ভুগতে থাকা ব্যক্তি, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মহামারিকালে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে  অন্যদের চেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন। এই পরিস্থিতির প্রতিকারের জন্য এবং কোভিড পূর্ববর্তী স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত সুফলগুলো ধরে রাখতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
 
রবিবার (১১ই এপ্রিল) ব্র্যাক আয়োজিত অনলাইন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় কোভিড-১৯-এর প্রভাব: দ্রুত মূল্যায়ন” শীর্ষক গবেষণার ফলাফল এবং সুপারিশ প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি (এইচএনপিপি) এবং অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস (বিইউএইচএস) গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। 

অনলাইন অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন করোনাভাইরাসের কারণে যে শুধু করোনা রোগী বা অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন তা নয়, বরং সরকারের অনেক সাফল্যজনক স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে এবং রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়েছে।  
“শুধু করোনা নয়, বরং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সাধারণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে কাজ করতে চাই যেখানে সরকারের নেতৃত্বে তাদের সমান অংশীদারত্ব থাকবে,” তিনি বলেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “যেহেতু এই মহামারির ঢেউ আগামী দুই বা আড়াই বছরের মধ্যে চলে যাচ্ছে না, সেদিকে মাথায় রেখে আমাদের কমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালি করা দরকার। ব্র্যাক প্রতিরোধ, সুরক্ষা এবং ভ্যাকসিন মোবিলাইজেশন নিয়ে কাজ করতে চায়।” 
তিনি আরও বলেন, “আমরা গত বছর গাজীপুরে কমিউনিটি মোবিলাইজেশন করেছি এবং এরপরে এফসিডিও-এর সহায়তায় সেই সেবা ৬টি জেলায় সম্প্রসারণ করেছি। এই এলাকাগুলোতে সুফল পেয়েছি আমরা কারণ এখানে সংক্রমণ কম এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার হারও বেশি। এখন আমরা যে সকল এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেখানে এই সেবা সম্প্রসারন করে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। পাশাপাশি যে সকল জায়গায় ব্র্যাক নেই সেখানে অন্য এনজিও কিভাবে সম্পৃক্ত হতে পারেন সেই সুযোগ গুলোও আমরা বিবেচনা করছি।” 

গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপনা শেষে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন এইচএনপিপির সহযোগী পরিচালক ডা. মোর্শেদা চৌধুরী, বিইউএইচএস-এর উপাচার্য প্রফেসর ফরিদুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর সহযোগী ডিন প্রফেসর ডা. মালাবিকা সরকার, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার তৌহিদুল ইসলাম। সঞ্চালক ছিলেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

২০২০ সালে এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে এই দ্রুত মূল্যায়ন পরিচালিত হয় দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলায়। দৈবচয়নের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৮৩টি খানাকে (যার পরিবারগুলোর গড় সদস্য ৪.৮৯) বেছে নেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গবেষণা চলাকালীন গর্ভবতী নারী ছিলেন ১৬৭টি খানায়, এবং ০-২৮ দিন বয়সী  শিশু ছিল ৪৯টি। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ছিল ৭৯৪টি যা গবেষণাধীন মোট সদস্যের ৩২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০.৮% খানায় কিছুটা অসুস্থতা ছিল (কোভিড -১৯ বাদে) এবং ২৮.৬% জানিয়েছেন যে তাঁদের চিকিৎসা খরচ বেশি হয়েছে। ১০% খানার অভিযোগ ছিল হাসপাতালগুলি থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে তাঁদের অসুবিধা হয়েছে। দুই পঞ্চমাংশ খানা অভিযোগ করেছে সঠিক সেবার অভাবে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। 

বিশেষত মহিলা ও শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। মহামারির আগে গর্ভবতী মায়েদের দেওয়া পরিষেবাগুলি গবেষণাকালীন এসব খানার ৫৪ শতাংশ নারী পাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭-১৮-র উপাত্ত অনুসারে গড়ে ৪৭% গর্ভবতী নারী প্রসবকালীন যত্নের (এএনসি) জন্য ৪+ সেবা পেয়েছিলেন। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমীক্ষার সময়কালে ৩৭.৬% নারী ৪+ এএনসি পরিষেবা পেয়েছেন, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ১০% কম। জরিপের সময়কালে ২০% প্রসব হয়েছে প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীদের দ্বারা। মূলত উচ্চ যাতায়াত খরচ এবং কোভিড -১৯-এর ভয়ে গুরুতর অসুস্থ প্রতি সাতজনের একজন শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল আরও খারাপ।

জটিল রোগে ভুগতে থাকা রোগীদের ভোগান্তিও উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে ৫৬.৩২% জানিয়েছেন যে করোনা ভাইরাসের আশঙ্কায় চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫৪.৫১% আর্থিক অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাসেবা ছিল আরও বেহাল।

জরিপে দেখা গেছে, উচ্চ প্রাথমিক চাহিদা সত্ত্বেও মাত্র ৬% পরিবার টেলিমেডিসিন সেবা পেয়েছেন। এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ - সেবাপ্রার্থীরা তাঁদের লক্ষণগুলি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি।

বিইউএইচএস-এর উপাচার্য প্রফেসর ফরিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে কোন ইমারজেন্সি পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম নয়। চিকিৎসাব্যবস্থাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর সহযোগী ডিন প্রফেসর ডা. মালবিকা সরকার সাস্থ্যসেবার মাঠকর্মীদের প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার দাবি জানান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে এবং এজন্য কোথায় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন তা খুঁজে বের করতে হবে।” 

মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কমাতে এই গবেষণায় কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- এই পরিস্থিতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, স্বাস্থ্যতথ্য ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং সমন্বয় কর্মের কার্যকারিতা বৃদ্ধি। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং তাঁদের  প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোর প্রশিক্ষণ দিয়ে  প্রস্তুত রাখা, আধুনিক ডায়াগনস্টিক এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন করাও গুরুত্বপূর্ণ। রেফারেল প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা উন্নত করার সুপারিশের পাশাপাশি বাংলাদেশে শক্তিশালী সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি ও বজায় রাখতে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের পুনর্বিবেচনা করতেও বলা হয়েছে। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত