৪৮৩টি জর্দা ও গুল কারখানার মধ্যে কর দেয় মাত্র ২১৮টি, স্বাস্থ্য ও রাজস্ব উভয়েই ক্ষতি
৪৮৩টি জর্দা ও গুল কারখানার মধ্যে কর দেয় মাত্র ২১৮টি, স্বাস্থ্য ও রাজস্ব উভয়েই ক্ষতি
বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের করজালের বাইরে রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের কর জালের বাইরে থাকার কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে জানতে চালানো একটি গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে দেশে ৪৮৩টি জর্দা ও গুল তৈরির কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে করের আওতায় রয়েছে মাত্র ২১৮টি।
“Factors Inhibiting Smokeless Tobacco Tax Payments by Smokeless Tobacco Manufacturers Operating Outside the Tax Net in Bangladesh” শীর্ষক উক্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে ৫ এপ্রিল (সোমবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। এতে ছিলো ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞা।
গবেষণার সার্বিক ফলাফলে দেখা গেছে:
- দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮টি গুল কারখানা রয়েছে।
- এদের মধ্যে মাত্র ২১৮টি জর্দা ও গুল কারখানা কর দেয়।
- ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে রয়েছে ৮৮ জন উৎপাদনকারী
- এদের মধ্যে ৮১ জন জর্দা এবং ৭ জন গুল উৎপাদনকারী
- এই উৎপাদনকারীদের ৩৩ শতাংশের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই।
- ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রে নয় হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করে।
এসব কারখানায় মোট মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
গবেষক দলের প্রধান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। ওয়েবিনারে স্বাগত দেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনা পর্বে অংশ নেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর রিসার্চ ডিরেক্টর মারিয়া জি. কারমোনা এবং সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস ডিরেক্টর বন্দনা শাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতারা।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, "শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমে যাবে।"
গবেষণায় অনানুষ্ঠানিক (informal) উপায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকেই ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও এনবিআর এর দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি অভাবে এখাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।
গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসাথে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা হ্রাস করার সুপারিশও করা হয়েছে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে:
- স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতি প্রচলন,
- আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এনবিআর জনবলকে প্রশিক্ষণ
- ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি হিসেবে এসব পণ্যে ব্যান্ডরোল ব্যবহার
- অনিবন্ধিত কারখানাগুলোকে করজালের আওতায় আনতে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে ক্ষমতায়ন
- তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের পুরস্কার প্রদান না করা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞা জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে ২০.৬ শতাংশ মানুষ (২ কোটি ২০ লক্ষ) এবং ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সি বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৪.৫ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩০.৬ কোটি টাকা যা মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.১২ শতাংশ।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং মুখ গহ্বরসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ি, উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন চলে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত এবং আইন বহির্ভূত উপায়ে। ফলে এটি অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য রয়ে গেছে। সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের করজালের মধ্যে আনা হলে এখাতে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়বে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে কী হয়?
- বিএসএমএমইউ`র ৩৭০ শয্যার করোনা সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু
- আইসিডিডিআর,বি-র প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ
- ১০ লক্ষণে বুঝুন আপনার করোনা হয়ে সেরে গেছে
- এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন ড. ফিরদৌসী কাদরী
- সাইমুম তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
- কৈশোর মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঠিক নির্দেশনা জরুরি
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও এগিয়ে অধ্যাপক স্বপ্নীল
- সখিপুরে চালু হলো ক্যাম্পস এর স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা
- রাবেয়া খেলছে, রোকেয়া পারছে নিজে খেতে, জানাচ্ছে সিএমএইচ