তামাক নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ঘোষণা, সরকারের কাছে ১৬ দাবি
তামাক নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ঘোষণা, সরকারের কাছে ১৬ দাবি
ঢাকা কনফারেন্স অন টোব্যাকো অর হেলথ |
দেশীয় ও বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলো কিশোর- যুবাদের তামাক ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করতে বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সস্তা তামাকজাত দ্রব্য মানুষ তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে, যা সরকারের ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে ব্যহত করবে।
কিশোর যুবকদের মাদকের পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ তামাক থেকে বিরত রাখতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ জরুরি।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ঢাকা কনফারেন্স অন টোব্যাকো অর হেলথ (ডিসিটিওএইচ ২০২০) সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা বিভিন্ন গবেষণার আলোকে ঢাকা তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা নেওয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে এই দাবি জানান।
সম্মেলনের সারা দেশের ১২০টির বেশি সংগঠনের ২৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। যাতে ২০টি মৌখিক এবং পোস্টারের মাধ্যমে ২৮টি গবেষণা কর্ম উপস্থাপিত হয়।
সম্মেলনে প্লেনারি সেশনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুুসের সভাপতিত্বে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব এবং Special Envoy of Climate Vulnerable Forum আবুল কালাম আজাদ।
আলোচক ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ইকবাল মাসুদ এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ।
সভায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে
- ই-সিগারেট/ভেপিং/ঐঞচ-র উৎপাদন, বিতরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
- নিষিদ্ধ করা ধূমপানের জন্য স্থান নির্ধারনের বিধান বাতিল,
- পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ,
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তামাকজাত কোম্পানির যেকোন প্রচারণা কার্যক্রম নিষিদ্ধ,
-বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রর্দশন নিষিদ্ধ,
- তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়ে লাইসেন্সিং চালু,
- ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাড়ানো,
- খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করা,
- মোড়কে উৎপাদনের তারিখ নিশ্চিত করা,
- ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যার্ন্ডাড মোড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,
- তামাক কোম্পানি প্রভাব বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন,
- তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনভঙ্গের ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা দায়ের করার বিধানযুক্ত করা এবং
- আইনের সকল বিধানে উল্লেখিত জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
সাবেক রাষ্ট্রদুত ও সম্মেলনে আহবায়ক কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুসারে সরাসরি ও ভার্চুয়াল অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ব্লুমবার্গ ফিলোনথপিক্স-র জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক কেলি হেনিং, দি ইউনিয়নের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক গেন কোয়ান, ভাইটাল স্ট্যাটেজিস-র রেবেকা পল, জন্সহপকিন্স ইউনিভার্সিটি ব্লুমবাগ স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালক জোয়ানা কোহেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী, ডাঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার এমপি, অ্যারোমা দত্ত এমপি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাসের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল। সমাপনী অনুষ্ঠানে নাটাবের প্রেসিডেন্ট মোজাফ্ফর আহমেদ সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশিষ পান্ডে, ডেপুটি পরিচালক, দি ইউনিয়ন ও কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্মেলনের সদস্য সচিব একেএম মাকদুস।
সম্মেলনে আগামী ২০৪০ সালে মধ্যে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে ঢাকা তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণায় সরকারের কাছে ১৬ টি দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে:
- তামাক কোম্পানির দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত নীতি প্রণয়ন বা বিদ্যমান নীতিতে যুক্ত করা,
- খসড়া জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চুড়ান্ত,
- খসড়া জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ,
- খসড়া জাতীয় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুমোদন,
- কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে দেশে একটি জাতীয় কর নীতি প্রণয়ন করা,
- নীতিতে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বন্ধে আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে প্রণীত খসড়া গাইড লাইন অনুমোদন,
- টেকসই বা অব্যাহত অর্থায়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” গঠন
- তামাক কোম্পানির বেআইনী কার্যক্রম বন্ধে বিদ্যমান আইন অনুসারে কঠোর পদক্ষেপ
- জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্গানোগ্রাম চুড়ান্ত,
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের টোব্যাকো ট্যাক্স সেলকে শক্তিশালী করা,
- তামাকজাত দ্রব্যের জটিল কর কাঠামো বিলুপ্ত করে, তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করার সুপারিশ করা হয়।
গবেষণা সেশনগুলোতে উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান (রিসার্চ এন্ড এপিডেমিওলজি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন; প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রকল্প পরিচালক (তামাক নিয়ন্ত্রণ), বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি; ইসরাত চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হামিদুর রহমান খান, যুগ্ম-সচিব ও টেকনিক্যাল কলসানটেন্ট, দ্য ইউনিয়ন; মোহাম্মাদ শাহজাহান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম; ড. রুমানা হক, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়; মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক ও টিম লিডার (তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প), বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম; এসএম আবদুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়; ডা. মাহফুজুর রহমান ভুঁইয়া, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন; ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশার সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে কী হয়?
- বিএসএমএমইউ`র ৩৭০ শয্যার করোনা সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু
- আইসিডিডিআর,বি-র প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ
- ১০ লক্ষণে বুঝুন আপনার করোনা হয়ে সেরে গেছে
- এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন ড. ফিরদৌসী কাদরী
- সাইমুম তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
- কৈশোর মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঠিক নির্দেশনা জরুরি
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও এগিয়ে অধ্যাপক স্বপ্নীল
- সখিপুরে চালু হলো ক্যাম্পস এর স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা
- রাবেয়া খেলছে, রোকেয়া পারছে নিজে খেতে, জানাচ্ছে সিএমএইচ