সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পলিপিল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০% কমায়: গবেষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৫:১৫, ১৯ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৬:৩৯, ১৯ নভেম্বর ২০২০

৮৮২

পলিপিল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০% কমায়: গবেষণা

চারটি ওষুধের সংমিশ্রণে তৈরি পলিপিল মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের হার ৪০% কমিয়ে আনতে পারে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিক্যাপ স্টাডি(টিপস-৩)’র এই গবেষণাপত্রটি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়। 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সায়েন্টিফিক সেশনেও গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। 

বিশ্বব্যাপী গবেষকরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন কিভাবে হৃদরোগ নিরাময়ে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে একটি কার্যকরী পিল তৈরি করা যায় যেটি খুব অল্প দামে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে। এই গবেষণার মাধ্যমে অবশেষে তারা সফলতার মুখ দেখেছেন। গবেষণাটি নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা চলছে।
 
পলিপিল হল চারটি ওষুধের সংমিশ্রণে তৈরী একটি পিল যার মধ্যে তিনটি হচ্ছে পৃথক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের   ওষুধ(অ্যাটেনলল, রামিপ্রিল, এবং "ওয়াটার পিল" হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড) এবং আরেকটি হল চর্বি(কোলেস্টেরল) হ্রাসকারী ওষুধ স্ট্যাটিন (সিমভাস্ট্যাটিন)। 

এই চারটি ওষুধকে একত্রিত করে তৈরি পলিপিল অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের সাথে সেবন করা যায় কিংবা অ্যাসপিরিন ছাড়াও সেবন করা যায়, বলছেন গবেষকরা।
 
কানাডার ম্যাক মাস্টার ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সেলিম ইউসুফের নেতৃত্বে কানাডা,মালয়েশিয়া,ফিলিপাইন,কম্বোডিয়া,তানজানিয়া,তিউনিশিয়া,ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশসহ মোট নয়টি দেশের গবেষকরা এই প্রকল্পটিতে কাজ করেন। ৫৭০০ স্বেচ্ছাসেবীর উপর প্রায় পাঁচ বছরব্যাপী এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
 
বাংলাদেশ থেকে এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটিস ফর সোশ্যাল ডেভলাপমেন্ট নামক একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করে। বাংলাদেশের গবেষণা দলটিকে নেতৃত্ব দেন এমিনেন্সের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা এবং জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. শামিম হায়দার তালুকদার এবং প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন ডা. শাহীন আক্তার।
 
ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপের কারণে হৃদরোগের মাঝারি মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাদের মধ্যে পুরুষদের বয়স ছিল ৫০ বছর এবং নারীদের বয়স ছিল ৫৫ বছর। 

স্বেচ্ছাসেবীদের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে তাদের কাউকে শুধুমাত্র পলিপিল সেবন করতে দেওয়া হয়, আবার কোন গ্রুপকে পলিপিল এবং অ্যাসপিরিন দুই ধরনের ওষুধই সেবন করতে দেওয়া হয়। কোন গ্রুপকে শুধুমাত্র স্বল্প মাত্রার(৭৫ মি.গ্রা.) অ্যাসপিরিন সেবন করতে দেওয়া হয়।
 
গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায়, যারা অ্যাসপিরিন ও পলিপিল উভয় গ্রহণ করেছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা ও এর ফলে মৃত্যুর ঘটনা সংখ্যা ৩১% কমেছে, ১.৫% এর ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে যাওয়া ও ঝিমুনী সহ স্বল্প মাত্রার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ কমিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যারা কোন রকম অনিয়ম বা বাধা ছাড়া ওষুধ সেবন অব্যাহত রেখেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা ৪০% কমে যেতে দেখা গেছে। যারা দু্ইটি ওষুধই সেবন করেছিলেন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ৪% এর ক্ষেত্রে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক এর সমস্যা দেখা গেছে। যারা শুধুমাত্র অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখা যায়নি কিন্তু যারা শুধুমাত্র পলিপিল গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে মাঝারি ফলাফল দেখা গেছে।
 
“গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পলিপিল ও অ্যাসিপিরিনের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হবো।”

-    অধ্যাপক  সেলিম ইউসুফ
     প্রধান গবেষক 

“পলিপিল নিয়ে আমাদের কাছে এখন সবার্ধিক আধুনিক তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ সহ সমপযার্য়ের দরিদ্র দেশগুলোর জনগণের হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বল্পমূল্যের সহজলভ্য ওষুধের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে এই ওষুধটি ভবিষ্যতে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।”

- ডা. শামীম তালুকদার, প্রধান জনস্বাস্থ্য গবেষক, বাংলাদেশের গবেষণা দল

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গবেষণাটি পুরো পাঁচ বছরব্যাপী সাত হাজার মানুষের উপর করার কথা থাকলেও ওষুধ সরবরাহের সমস্যা ও করোনা মহামারীর প্রকোপের কারণে তা সীমিত করতে হয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত