সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৯:৩৭, ২৩ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৯:৩৯, ২৩ মার্চ ২০২২

৫৯৯

ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার নতুন কারণ উদঘাটনের দাবি করেছেন বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী।

বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।

বিজ্ঞানীদের নেতৃত্ব দেয়া মধু এস মালো বলেন, ‘মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামক এক ধরনের এনজাইমের ঘাটতির কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই এনজাইম মূলত দেহ থেকে টক্সিন বা বিষক্রিয়া অপসারণে কাজ করে। যাদের দেহে এই উৎসেচকের পরিমাণ কম, তাদের ডায়াবেটিস হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪জন মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের এই নতুন কারণ সম্পর্কে জানা গেছে। গবেষণার ফলাফল ইতোমধ্যে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ছাপা হয়েছে।’

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিল বারডেম, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগী ৮৬ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ১৯৫৬ সাল থেকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি অধ্যাপক মধু এস মালো (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক) ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ উদঘাটন করেছেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল ও সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গত পাঁচ বছর ধরে ৫৭৪ জন সুস্থ ব্যক্তির ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

কয়েক দশক ধরে অন্য গবেষকরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ কারণ হলো টক্সিন-নিয়ন্ত্রিত নিম্ন গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ। এর ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়।

মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্ন গ্রেডের সিস্টেটিম প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে ডায়াবেটিস হতে পারে।

গবেষকরা জানান, মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম ওই টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয় এবং এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামের এনজাইম বেশি থাকে, তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্প বয়সীদের মধ্যে যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের অন্ত্রে এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে তা বেড়ে গেছে, তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল, তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থূলকায় ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয়।

গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, যাদের দেহে উল্লিখিত এনজাইমের পরিমাণ কম, তাদের এই এনজাইম খাওয়ানো হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এ এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন।

গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ প্রকাশ হয়েছে।

অধ্যাপক মধু এস মালো এর আগে মানবদেহে থাকা ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম পরিমাপের লক্ষ্যে মলভিত্তিক টেস্ট পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

এই টেস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এনজাইম-স্বল্পতার কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না, তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত