৮০ শতাংশ প্রবীণ অসংক্রামক রোগে ভুগছে: আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা
৮০ শতাংশ প্রবীণ অসংক্রামক রোগে ভুগছে: আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা
বাংলাদেশের প্রবীণদের (৬০ বছর বা ততোর্দ্ধ) প্রতি ৫ জনের ৪ জনই উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং বিষণ্যতার মত অসংক্রামক রোগে ভুগছে। এছাড়া প্রবীণ পুরুষদের তুলনায় (৩৭%) প্রবীণ নারীদের (৫৪%) অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশী।
'আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১' উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনলাইন ওয়েবিনারে প্রবীণদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ও ইনিশিয়েটিভ ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস এর প্রধান ড.আলিয়া নাহিদ।
গবেষণায় দেখা যায়, বিগত ৬ মাসে প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রতি ৩ জনের ১ জন (৩৫%) নিকটস্থ ঔষধ বিক্রেতার কাছে গেছেন চিকিৎসা সেবার জন্য, ৩৬ শতাংশ গিয়েছেন বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আর ১৭ শতাংশ সেবা নিয়েছেন সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে।
প্রবীণদের সর্বশেষ ৬ মাসের স্বাস্থ্যসেবার গড় খরচ ছিল ২,৪২৯ টাকা। এই প্রবীণদের ৩০ শতাংশ এখনো নিজেরা আয় করেন যা থেকে তারা চিকিৎসার খরচ চালান। যারা নিজেরা আয় করেন না তাদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের ৪ জন চিকিৎসা খরচের জন্য সন্তানদের আয় কিংবা নিজস্ব সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীল। উল্লেখ্য গবেষণায় অংশগ্রহনকারী প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সরকারী সামাজিক সুরক্ষার ভাতা (বয়স্ক/বিধবা) পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা দলের প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, “আমরা দেশব্যাপী দুই হাজার সাতশো পঁচানব্বই জন প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের একটা চিত্র পাই যা বেশ উদ্বেগজনক। সর্বশেষ আদমশুমারী ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭.৪৮ শতাংশ প্রবীণ ছিল যা ২০৪১ সালে দ্বিগুন হয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সেজন্য প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাকে তাদেও দোরগোড়ায় নেওয়া উচিত এবং সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।” প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাকে জোরদার করার জন্য নতুন উদ্বাবনী ব্যবস্থার মাধ্যমে যুবকদেরকে প্রবীণদের সেবায় সম্পৃক্ত করার উপর ড. নাহিদ জোর দিয়েছেন।
ওয়েবিনারে একটি ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ প্রবীণদেও মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “অসংক্রামক রোগ, এবং যেসব রোগ প্রবীণদের মাঝে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সেসব মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা, এবং সহযোগিতামূলক কাজ করতে হবে।”
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাকে আরো কিভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও যুক্তরাজ্য থেকে গবেষক, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্যানেল আলোচনায় তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর কার্যক্রম এবং এই সেবাকে আরো কিভাবে সাধারন জনগনের কাছে পৌছানো যায় তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ কাজ করছে বলে তিনি জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও রেসপাইরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন কোভিড-১৯ মহামারী সময়ে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীনদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন হতে হয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ করেন। প্যানেল আলোচনায় আরো অংশগ্রহন করেন নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. লোচানা শ্রেষ্ঠা, নেপালের পাটান একাডেমির ইমার্জেন্সী মেডিসিনের প্রভাষক ডা. সুনীল অধিকারী, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গেøাবাল হেলথ্ নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর অধ্যাপক ট্রুডি লাং, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নেপালের পাটান একাডেমির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক রাজেশ নাথ গোঙ্গল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো জাহিদ হোসেন ও নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ডা. মহেশ মাস্কি ।
ওয়েবিনারে অসংক্রামক রোগের গবেষণা ও সমাধানে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত “গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি” নামক একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্মের উদ্ধোধন করেন আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিষ্টেমস এ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ। উল্লেখ্য “গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি” শীর্ষক প্লাটফর্মটি বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন ও পাটান একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ওয়েবিনারটি সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ। ওয়েবিনারটিতে দেশ ও বিদেশের গবেষক, চিকিৎসক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, টেলি-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, যুব সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা অংশগ্রহন করেন। আলোচনায় অংশগ্রহনকারীরা প্রবীণ ব্যক্তিদের মাল্টিমর্বিডিটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরকেও সম্পৃক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন।
“দ্যা গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক এশিয়া”এবং “ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্লাটফর্ম বাংলাদেশ” এই ওয়েবিনারের মূল আয়োজক। ওয়েবিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- “লিঙ্কিং ইউথ টু দ্যা ওয়াইজ ফর ডিজিটাল ইকুইটি এ্যান্ড কেয়ার”।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে কী হয়?
- বিএসএমএমইউ`র ৩৭০ শয্যার করোনা সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু
- আইসিডিডিআর,বি-র প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ
- ১০ লক্ষণে বুঝুন আপনার করোনা হয়ে সেরে গেছে
- এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন ড. ফিরদৌসী কাদরী
- সাইমুম তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
- কৈশোর মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঠিক নির্দেশনা জরুরি
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও এগিয়ে অধ্যাপক স্বপ্নীল
- সখিপুরে চালু হলো ক্যাম্পস এর স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা
- রাবেয়া খেলছে, রোকেয়া পারছে নিজে খেতে, জানাচ্ছে সিএমএইচ