সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশল চালু করল ব্র্যাক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

২২:০৪, ২৫ আগস্ট ২০২১

৫৯১

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশল চালু করল ব্র্যাক

মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে প্রাণহানির সংখ্যা কোভিড-১৯ রোগে প্রাণহানির চেয়ে বেশি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা ও চিকিৎসায় সম্পদ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। দেশে মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি রয়েছে যার ফলে মানুষ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ অধিকার ভোগ করতে পারছে না।

যেহেতু বাংলাদেশে কোভিড -১৯ মহামারীর প্রভাব চলমান, তাই ব্র্যাক মনে করে এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো সমন্বিত পদ্ধতি এবং সরকারের সঙ্গে জোরদার অংশীদারত্বর মাধ্যমে মোকাবেলা করা প্রয়োজন।

বুধবার (২৫ আগস্ট ) সন্ধ্যায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ব্র্যাক তার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশল (BRAC Mental Health Strategy) উদ্বোধন  করে। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা । বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।

এই কৌশলের মাধ্যমে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ এবং কার্যকর ও নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের প্রতি ব্র্যাক তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করল। কৌশলটি বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের উদ্দেশ্যে চারটি কৌশলগত লক্ষ্য ও এদের আনুষঙ্গিক লক্ষ্যগুলোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকার ও অন্যান্য অংশীদারের পাশাপাশি কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ব্র্যাক।

ব্র্যাকের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশলের প্রধান প্রেক্ষিতটি সাংস্কৃতিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, শ্রদ্ধাশীল এবং সহানুভূতিশীল মনোভাবকে আত্মীকরণ ও সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। নীতকৌশলটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও লোকশিক্ষা, কুসংস্কার দূরিকরণ এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ও চাহিদাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করে যাবে। 

অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশলটির বিবরণ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (ব্র্যাক আইইডি)-এর পরামর্শক  এবং অক্সফোর্ডের কনসাল্টিং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. নার্গিস ইসলাম। এই কৌশলটির মূল উপাদান এসেছে একটি প্যারা-কাউন্সেলর মডেল থেকে। এই মডেলটি তৈরি করেছে ব্র্যাক আইইডি এবং ইতিমধ্যেই তার সফল বাস্তবায়নও করেছে। 

প্যারা-কাউন্সেলিং মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ব্র্যাক আইইডি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম বলেন, আমরা এটাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলিনি, কিন্তু গত ৪৯ বছর ধরে আমরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকেছি, সমর্থন ও আশা যুগিয়েছি এবং তাঁদের মর্যাদা নিশ্চিত করেছি। আমাদের আজকের এই উদযাপনের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে, যখন আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের উপর ভিত্তি করে ব্র্যাকের জন্য প্রথম মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশলটি প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে পেরেছি।

কৌশলটির ভিত্তিতে প্রণীত ব্র্যাকের মানসিক স্বাস্থ্য মডেলটির পাইলট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ মোর্শেদা চৌধুরী। তিনি বলেন, ব্র্যাকের এই কৌশল স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ তখনই প্রত্যাশিত ফলাফল আনবে যখন সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে টেকসই অংশীদারত্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রকৃতপক্ষে এই কৌশলের সফল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অগ্রসর হবে ব্র্যাক।

অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এজেন্ডার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি সাধন বর্তমানে অন্যতম একটি। দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে মাল্টিসেক্টোরাল পন্থায় কাজ করতে পারে। মানসিকভাবে সুস্থ জাতি, মানসিকভাবে সুস্থ বাংলাদেশ গড়তে একই লক্ষ্য সাধনে আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

মিয়া সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে মানসিক সেবার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মানসিক স্বাস্থ্যকে জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিশ্বাস করতেন এবং মনে করতেন বর্তমানে এ সংক্রান্ত সেবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখন, বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর পটভূমি আমাদের ওপর যে গভীর মানসিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে , তাতে করে সবার জন্য এই সেবা উন্নত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর কাছে পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য ব্র্যাক এই সমন্বিত কৌশলটি প্রণয়ন করেছে। এখন এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সহযোগী সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত