গর্ভবতী নারীদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ও টিকা সম্পর্কে যা জানা উচিত
গর্ভবতী নারীদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ও টিকা সম্পর্কে যা জানা উচিত
কোভিড -১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করছে এবং কিছু দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গর্ভবতী নারীদের উপর এর প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুক্রবার (৩০ জুলাই) একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে গর্ভবতী নারীদের করোনা টিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা এক নতুন তথ্য তুলে ধরে জানান যে, মে মাস থেকে দেশটিকে করোনা চিকিৎসা নিতে আসা ৯৮ শতাংশ গর্ভবতীই টিকা না নেয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও এর আগে জানানো হয়, টিকা নেয়া একই বয়সী সাধারণ নারীর তুলনায় টিকা না নেয়া গর্ভবতীর করোনায় ঝুঁকি বেশি।
ডেল্ট ভ্যারিয়েন্ট সে শঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ধরনটি অন্য সব ভ্যারিয়েন্ট থেকে কয়েকগুণ বেশি সংক্রামক ও মরণঘাতি।
গর্ভবতীর জন্য কি ডেল্টা আরও বিপজ্জনক?
ডেল্টা অন্য সব ভ্যারিয়েন্ট থেকে কয়েকগুণ বেশি সংক্রামক ও মরণঘাতি। তাই শুধু গর্ভবতী নারীর জন্যই না এই ভ্যারিয়েন্টটিতে সবাই গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন।
ইউকে অবস্টেট্রিক সার্ভিলেন্স সিস্টেম (ইউকেওএসএস) দ্বারা সংগৃহীত সর্বশেষ তথ্য দেখায় যে ডেল্টা স্ট্রেনের কারণে যুক্তরাজ্যে কোভিড -১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান মিডিয়া সেন্টারে এক বিবৃতিতে প্রসূতিবিদ্যার অধ্যাপক অ্যান্ড্রু শেনান বলেন, "মূল কোভিড ভাইরাসের তুলনায় নতুন রূপ (আলফা এবং তারপরে ডেল্টা) গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে আরও মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করছে। তাদের নিউমোনিয়া হওয়া ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়ার প্রবণতা ৫০ শতাংশ বেড়েছে
ইউকেওএসএস দ্বারা সংগৃহীত তথ্য দেখায় যে কোভিড -১৯ হাসপাতালে ৩৩ শতাংশ নারীদের শ্বাসযন্ত্রের সহায়তা প্রয়োজন হচ্ছে এবং ১৫ শতাংশকে আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে।
শিশুর ঝুঁকি কতটা?
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে কোভিড -১৯ সংক্রমণ মা এবং শিশু উভয়ের জন্য নেতিবাচক ফলাফলের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, সংক্রমণ, হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি হওয়া এমনকি মৃত্যুও।
১৮ দেশের ৪৩ হাসপাতালের ২ হাজার গর্ভবতী নারীর উপর গবেষণা করে জামা পেডিয়াট্রিক্স -এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে করে করোনাক্রান্ত মায়েদের অকাশ প্রসব বা শিশু প্রয়োজের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মেছে।
ইউকেওএসএস দ্বারা সংগৃহীত নতুন তথ্য দেখিয়েছে, গুরুতর কোভিড -১ ৯ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজনের অকাল প্রসব হয়েছে এবং সি-সেকশন দ্বারা প্রসবের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়েছে।
গর্ভবতী নারীর জন্য টিকা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ. গবেষণায় দেখো গেছে কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারী বা তাদের বাচ্চাদের জন্য কোন নির্দিষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ নেই।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ মিডওয়াইফের প্রধান নির্বাহী গিল ওয়ালটন বলেন, বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ গর্ভবতী নারীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তারা নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে কোভিডের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করছে এবং তাদের মারাত্মক অসুস্থতা বা শিশুর ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে হ্রাস করেছে।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন সম্পর্কিত যৌথ কমিটি এবং টিকা সংক্রান্ত অস্ট্রেলিয়ার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ সবই গর্ভবতী নারীদের কোভিড -১৯ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
যারা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের কি হবে?
ডাব্লুএইচও সুপারিশ করেছে যে বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের টিকা দেওয়া উচিত এবং বলেছে যে টিকা দেওয়ার কারণে নারীদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ টিকাগুলি শিশুর জন্য কোনও ঝুঁকি তৈরি করার সম্ভাবনা কম।
কোভিড ভ্যাকসিন প্লাসেন্টার ক্ষতি করে না বা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে না
কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনগুলি বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে বা প্লাসেন্টাকে আঘাত করার বিষয়ে যে তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে তার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিকশিয়ানস এবং গাইনোকোলজিস্টদের পাবলিক হেলথ প্রিপারেশন এক্সপার্ট ওয়ার্ক গ্রুপে ডা. রিচার্ড বেইগি বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
নতুন ভ্যাকসিন প্রজনন সমস্যার কারণ হবে বলে মনে করার কোন স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ তো নেই সাথে ভ্যাকসিন থেকে কারও করোনা হওয়া অসম্ভব। কেনন সেখানে কোন জীবিত ভাইরাসই থাকে না।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক পরামর্শ অনুসারে, " ভ্যাকসিন থেকে কোভিড -১৯ হবে না। এবং বুকের দুধের মাধ্যমে এটি শিশুর শরীরে প্রবেশ করবে না। বরং তা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ায়।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে কী হয়?
- বিএসএমএমইউ`র ৩৭০ শয্যার করোনা সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু
- আইসিডিডিআর,বি-র প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ
- ১০ লক্ষণে বুঝুন আপনার করোনা হয়ে সেরে গেছে
- এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন ড. ফিরদৌসী কাদরী
- সাইমুম তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
- কৈশোর মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঠিক নির্দেশনা জরুরি
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও এগিয়ে অধ্যাপক স্বপ্নীল
- সখিপুরে চালু হলো ক্যাম্পস এর স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা
- রাবেয়া খেলছে, রোকেয়া পারছে নিজে খেতে, জানাচ্ছে সিএমএইচ