শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আট দশক গানের নাইটিঙ্গেল হয়ে ছিলেন লতা ‘দিদি’

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

১৫:৩৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

৭৫৯

আট দশক গানের নাইটিঙ্গেল হয়ে ছিলেন লতা ‘দিদি’

লতা মঙ্গেশকর
লতা মঙ্গেশকর

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মাঝখানে ডাক্তারেরা আশা দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি ভালোর দিকে, তাকে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

কিন্তু তা আর কই হলো, রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গেলেন তিনি। ৯২ বছর বয়সে নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তার কণ্ঠ, তার সঙ্গীত চির অমরই হয়ে থাকলো, তাকেও অবিস্মরণীয় করে রাখলো।

লতা মঙ্গেশকর শুনতেন মোজার্ট, বিথোভেন, শপিন, ন্যাট কিং কোল, দ্য বিটলস, হ্যারি বেলাফন্টে এদেরকে। শুধু গান শোনাতেই নয়, সিনেমা দেখতেও তার ভীষণ ভালো লাগতো। হলিউডের দ্য কিং অ্যান্ড আই সিনেমাটি তিনি ১৫ বার দেখেছিলেন। সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন থেকে জেইমস বন্ড, লতার কাছে দুটো ভিন্ন মেরুর এ সিনেমাগুলোও উপভোগ্য ছিল।

গাড়িবিলাসী ছিলেন তিনি। হিলম্যান, শেভ্রোলেট, চেরিসলার, মার্সিডিজ এসব গাড়ি ছিল তার গ্যারাজে। নিজের বাড়িতে কুকুর পুষতেন, একেবারে নয়টি কুকুর সারা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত।

আরও পড়ুন: কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর আর নেই, নিঃস্তব্ধ উপমহাদেশ

ক্রিকেটেও তার তুমুল আগ্রহ ছিল। টেস্ট ম্যাচ থাকলে গানের রেকর্ড বন্ধ করে খেলার দিকেই মনোযোগ দিতেন। নিজের সংগ্রহে থাকা ডন ব্র্যাডম্যানের অটোগ্রাফওয়ালা একটা ছবি নিয়ে তুমুল খুশি ছিলেন লতা।

শখ হিসেবে রান্না করা আর ছবি তোলা দুটোই ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের লাস ভেগাসে অনেক রাতেই স্লট মেশিনে সময় কাটিয়েছিলেন লতা। অনেকবার জিতেও ছিলেন।

কিংবদন্তি সিতার মায়েস্ত্রো রবি শঙ্করের সাথে বিভিন্ন স্টুডিওতে ঘুরে বেড়াতেন লতা। সেরকমই এক ঘুরে বেড়ানোর সময় তার সাথে শঙ্করের বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের দেখা হয়ে গিয়েছিল।

১৯৭৯ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে রেন অর্কেস্ট্রার সাথে রয়্যাল অ্যালবার্ট হল-এ পারফর্ম করেন লতা।

বলিউডের নাইটিঙ্গেল হিসেবে খ্যাত হয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। লতা 'দিদি' নামেও বহুল পরিচিত তিনি। নয় দশকের জীবনে সঙ্গীতের ভুবনেই আট দশক কাটিয়েছেন লতা।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন লতা। বাবা পণ্ডিত দীননাথ ছিলেন ধ্রুপদী সঙ্গীতজ্ঞ। তার কাছেই সঙ্গীতের হাতখড়ি হয় বড়মেয়ে লতার।

১৯৪২ সাল, লতার বয়স তখন সবে ১৩ বছর। বাবা মারা গিয়েছে, তাই সঙ্গীতকে পুরোপুরি ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করলেন তিনি। তখন গান গাইতেন, আর পাশাপাশি মারাঠি সিনেমাতে টুকটাক অভিনয় করতেন।

১৯৪৯ সালে মহল সিনেমাটি মুক্তি পায়। সেখানে তিনি গেয়েছিলেন আয়েগা আনেওয়ালা। রাতারাতি সুপারহিট হয় গানটি। লতার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। লতা মঙ্গেশকর হয়ে ওঠার পালার প্রথম পর্ব।

এরপর মাদার ইন্ডিয়া, মুগল-ই-আজম ইত্যাদি সিনেমায় গান গেয়ে মাত করেন লতা। পরিচয়, কোরা কাগজ, ও লেকিন সিনেমার জন্য সেরা নারী প্লেব্যাক শিল্পীর পুরস্কার পান লতা।

১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি লতার কণ্ঠে আয় মেরে বাতান কে লোগো শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি জহরলাল নেহেরু।

কণ্ঠের জন্য এর আগে ভারতরত্ন পেয়েছিলেন একজন, এম এস সুব্বুলক্ষী। দ্বিতীয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ভারতরত্ন অর্জন করেছিলেন লতা। কিন্তু তার চেয়ে তার বড় প্রাপ্তি হলো উপমহাদেশের অসংখ্য শ্রোতার ভালোবাসা। তাদের ভুবন গানে ভরিয়ে দিয়ে লতা নিজে যে তৃপ্তি পেয়েছেন সেটাই হয়তো তার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ে থাকবে।

লতা মঙ্গেশকরের চলে যাওয়ার মাধ্যমে উপমহাদেশের সঙ্গীতের একটি অধ্যায়ের মোচন ঘটলো। এ শূন্যতা অনিবার্য ছিল, এ অধ্যায়ের গ্রন্থিমোচন হতো, সেটা হলো আজ। নতুন কোনো অধ্যায় শুরু হওয়ার জন্য আমাদের কে কতকাল অপেক্ষা করতে হবে তা আর কে জানে!

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank