সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বড় ছিলো তার অভিনয় জীবন, তিনি ছিলেন তার চেয়েও বড়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

২০:১৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

১২০৭

বড় ছিলো তার অভিনয় জীবন, তিনি ছিলেন তার চেয়েও বড়

এটিএম শামসুজ্জামান
এটিএম শামসুজ্জামান

অভিনয় তো অভিনয় নয়। অভিনয়ে মানুষেরই জীবনের ছোট্ট একটা অংশকে, সবার সামনে তুলে ধরা হয়। এই বিষয়টা খুব ভালভাবেই রপ্ত করেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ এই গুণী অভিনেতা যখন অভিনয় করতেন, তখন দর্শক বুঝতেই পারতেননা, তিনি অভিনয় করছেন নাকি নাটক-চলচ্চিত্রের ঘটনাগুলো সত্যিকারভাবে ঘটে চলছে তার মধ্যে। চরিত্রের এতো কাছাকাছি চলে যেতেন এই গুণী অভিনেতা, দর্শক ব্যক্তি এটিএম শামসুজ্জামান আর নাটক বা সিনেমার এটিএম শামসুজ্জামানকে মেলাতে পারতেননা। আর তাইতো তিনি শক্তিমান, প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। নিজের কাজ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি এতটাই শক্ত আসন গড়ে তুলেছিলেন যে, অনেকেই তাকে বলতেন, “অভিনয়ের জীবন্ত ডিকশনারি”। বড় এক অভিনয় জীবন ছিলো তার। তবে তার চেয়েও বড় ছিলেন একজন এটিএম শামসুজ্জামান। 
 
আলী যাকের, আবদুল কাদের, মুজিবুর রহমান দিলুর মতো প্রতিভাবান ও গুণী অভিনেতারা মাত্র কিছুদিন আগে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এরই তালিকায় যোগ হলো আরো একটি নাম। ভাষার মাসে, চলে গেলেন এটিএম শামসুজ্জামান। যিনি হয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় সম্মননা একুশে পদকে ভূষিত। এই দুঃসময়ে ইন্ডাস্ট্রি শূণ্য করে  নক্ষত্রদের একে একে চিরবিদায়ে, দর্শক ও  ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা শোকে স্তম্ভিত। খ্যাতিমান নির্মাতা কাজী হায়াৎ, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, নির্মাতা সালউদ্দিন লাভলু, নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেতা ডিপজল, চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশীর সঙ্গে কথা হয় অপরাজেয় বাংলার।

তারা সকলেই বললেন, একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র হারালো দেশের মানুষ। এটিএম শামসুজ্জামান শুধু অভিনেতা নয়, ছিলেন একজন আপাদমস্তক শিল্পী মানুষ। ইন্ডাস্ট্রির মুরুব্বি। কয়েকযুগ সময় লেগে যায় এটিএম শামসুজ্জামানের মতো শিল্পী তৈরি হতে।  

গাজী মাজহারুল আনোয়ার একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও সংগীত পরিচালক। অপরাজেয় বাংলাকে তিনি বলেন, একজন সজ্জ্বন মানুষের যা থাকা দরকার, তার সবগুলোই ছিল এটিএম শামসুজ্জামানের ভিতরে। তিনি যখন অভিনয় করতে আসতেন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতেন। সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন সেরা। শুধু অভিনয় নয়, উপস্থাপক, লেখক সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন একজন সফল মানুষ। গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ইন্ড্রাস্ট্রিতে হাজার হাজার আর্টিস্ট আছে। কিন্তু সৃজনশীল শিল্পী হাতে গোনা। এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন একজন মনে প্রাণে শিল্পী মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি খুব নিষ্ঠাবান ছিলেন। দুঃসময়-সুসময় থাকবে। তবে , সবসময়ই গুণী, প্রতিভাবান শিল্পীদের মূল্যায়ন করা হলে সবার জন্যই তা মঙ্গলজনক বলে মন্তব্য করেন এই গুণী পরিচালক।
 
এটিএম শামসুজ্জামান ভাল মানুষ ছিলেন, ভাল অভিনেতা ছিলেন। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো চলচ্চিত্র নাটক ও শিল্পাঙ্গনের। একুশে পদক প্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান সম্পর্কে অপরাজেয় বাংলাকে এভাবেই বললেন, খ্যাতিমান নির্মাতা কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, সংলাপ রচয়িতা ছিলেন। তিনি সব মাধ্যমেই সফল ভাবে বিচরণ করেছেন। তার মৃত্যুতে শিল্পীরা খুব কাছের একজন মানুষ হারালো। এটিএম শামসুজ্জামানের বড় পরিচয় ছিল , তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন ভাল মানুষ ছিলেন।

চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান সবার মাথা ছিলেন। মুরুব্বি ছিলেন।  তিনি চলচ্চিত্র শিল্পীদের খুব স্নেহ করতেন, আদর করতেন। স্নেহের মাধ্যমে তিনি অভিনয়ের অনেক কিছু শেখাতেন। তিনি নিজেও এটিএম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন এমনটা জানিয়ে  ডিপজল বলেন, মানুষকে ভাসবাসতে জানতেন এটিএম শামসুজ্জামান। এই গুণ সব মানুষের থাকেনা। 

চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, দেশের সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের পছন্দের অভিনেতা ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার ভিতরে যতগুণ ছিল, খুব বেশি মানুষের এতগুণ একসঙ্গে থাকেনা। তিনি আসলে বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন। লাভলু বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন চলচ্চিত্রের জীবন্ত ডিকশনারী। ইন্ডাস্ট্রিতে তার মতো মানুষ তৈরি হতে কয়েক যুগ লেগে যায়। এইরকম মহীরূহ একজন মানুষ চলে গেলেন, এই ক্ষতি পূরণ হবার মতো নয়। এটিএম শামসুজ্জামান তার অভিনয়ের যাদু শৈলী দিয়ে, দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে চির জীবন বেঁচে থাকবেন। 

চিত্রনাট্যকার ও নাট্যব্যক্তিত্ত্ব মাসুম রেজা বলেন, মোল্লাবাড়ির বউ সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার সময় এটিএম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে তিনি সিনেমা লেখার কলা-কৌশল শিখেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ, বন্ধু ও অভিভাবক। এটিএম শামসুজ্জামান চলচ্চিত্রে যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন , ব্যক্তি জীবনে ঠিক তার বিপরীত মেরুতে অবস্থান ছিল তার। অভিনেতা হিসেবে তিনি ছিলেন আনপ্যারালাল। তিনি যেসব চরিত্রে অভিনয় করেন,তার আশে পাশে খুব কমজনই আছেন সেসব চরিত্রে অভিনয় করার মতো। একধরণের সরলতা ছিল এটিএম শামসুজ্জামানের ভিতরে। নানান ধরণের চরিত্র করতে চাইতেন এটিএম শামসুজ্জামান।  

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী জানালেন, এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন তাদের কাছে অভিভাবকের মতো। তিনি বলেন, অনেক কাজ তার সঙ্গে করা হয়েছে। অনেক কিছু শেখারও ছিল তারমতো শিল্পীর কাছ থেকে। মানুষ হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামান যেমন ছিলেন বড় মনের, শিল্পী হিসেবেও ছিলেন বড় মাপের। তারমতো শিল্পীর এই সময়ে চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি জানালেন, এটিএম শামসুজ্জামান অমায়িক, অসাধারণ ব্যক্তিত্ত্বের মানুষ ছিলেন। তিনি গল্প শুনতে ও গল্প বলতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন। এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে তার কয়েকটি কাজের প্রসঙ্গ টেনে শাহনাজ খুশি বলেন, তার কাছে সমসয় কাজ শেখা যেত।  সবসময় সাহস যোগাতেন অভিনয়ের জন্য। ব্যক্তি এটিএম শামসুজ্জামান অনেক সজ্জ্বন ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank