বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আইইউবি’র ওয়েবিনারে মত

দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট কী করতে পারবে- সেটা প্রশ্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৯:২৯, ৭ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১০:২০, ৮ নভেম্বর ২০২০

৭০৩

আইইউবি’র ওয়েবিনারে মত

দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট কী করতে পারবে- সেটা প্রশ্ন

গণতন্ত্রের জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্ব এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উপলব্ধি করা গেছে। তবে যেভাবে আমেরিকানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, বিজয়ী হলেও এই পরিস্থিতি কাটিয়ে বাইডেন কতটা সফল হবেন সেটাই এখন প্রশ্ন। এদিকে দেশটির দক্ষিণ এশিয়া নীতি এখন অনেকটাই জটিল। তবে ক্ষমতায় যেই থাকুক, রোহিঙ্গা সংকট মোকবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেই সমর্থন করবে। 

বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্লেষণমূলক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।  ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ও আইইউবি’র গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রামের উদ্যোগে ওয়েবিনারটি আয়োজিত হয়। এর মিডিয়া পার্টনার ছিলো অপরাজেয় বাংলা। অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজেয় বাংলার ফেসবুক পেজ ও অপর নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪ এর ফেসবুক পেজে কর্মসূচিটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
 
ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস.এস.এম আলী আশরাফ বলেন, নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সমর্থন দিবে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারকে জবাবদিহি করার জন্য চাপ দিয়ে যাবে তারা।

তবে বাইডেন জিতলে পরিবর্তন হতে পারে তাদের অধিবাসন এবং আান্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সম্পর্কের নীতিতে। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে সংস্থাগুলোকে মূল্য না দিয়ে এগোতে চেয়েছেন তেমনটা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া সেনা মোতায়েন, আফ্রিকায় বিনিয়োগের নীতি একই থাকবে বলেও জানান তিনি। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর ওমেন লিডারশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাসিম ফেরদাউস আলোচনা করেন নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র  সম্পর্ক নিয়ে। তিনি বলেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেছে তবে ২০০৫ সাল থেকেই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের জন্য হুমকি স্বরুপ হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।
 
হলি আর্টিজেন ঘটনার পর এসেছে আরও বিধি-নিষেধ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্মীর বাংলাদেশে পরিবার নিয়ে বসবাসের অনুমতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশিদের ভ্রমণে কিছু বিধি-নিষেধ আছে। 

যেখানে সংশয় আছে সেখানে বন্ধুত্ব হতে পারেনা। তাই নিকট ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেন নাসিম ফেরদৌস। 

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশিষ্ট কর্মী ড. রওনাক জাহান। তিনি বলেন, এই নির্বাচন দেখিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য , পরিবর্তনের জন্য অবাধ ও  সুষ্ঠ নির্বাচন কতটা প্রয়োজন তা।  তবে নির্বাচনে বাইডেন জিতলেও দেশ পরিচালনায় বেগ পেতে হবে তাকে। কেননা ভারতের ন্যায় যুক্তরাষ্ট্রেও ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ চলছে। বর্ণ, অভিবাসন নিয়ে মানুষজনকে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। তাই ট্রাম্প না থাকলেও তার মতবাদ ঠিকই থেকে যাবে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান আলোচনা করেন ঢাকার সাথে সম্পর্ক গড়তে ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার কি হতে পারে তা নিয়ে। তিনি বলেন, এতদিন দক্ষিণ এশিয়ায় মূল বিষয় কাবুল বা কাশ্মির থাকলেও এখন সেগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে গালওয়ান, কালাপানি ও রোহিঙ্গা ইস্যু। এই বিষয়গুলো ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।  

তবে ঢাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে একই সাথে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সু-সম্পর্ক রক্ষা করে যাওয়া। কেননা চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে আর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টসে আইটেম রপ্তানি করে। 

নির্বাচনের পূর্ব ও পরবর্তী প্রত্যাশা, ভীতি, হতাশা নিয়ে আলোচনা করেন অনলাইন নিউজপোর্টাল অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক মাহমুদ মেনন। তিনি বলেন, ইলেকশন ডে’তে কোনো সংঘর্ষ না হওয়া ছিল আশাবাদী হওয়ার মতো ঘটনা। তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ের গোলযোগ নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা সত্যি হয়েছে। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় আবারও ভয় দেখা দিচ্ছে। কেননা, কয়েকটি জায়গায় ট্রাম্প সমর্থকরা ভোট গণনা বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিক্ষোভ-সমাবেশও শুরু করেছে। 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউমিন্যাটি ও সোস্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন, অধ্যাপক ড. আব্দুর রব খান কথা বলেন ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার হুমকি নিয়ে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের নীতি বিশেষ করে ইলোক্টোরাল ভোটের পদ্ধতি আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হতো। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে এই পদ্ধতিকে হুমকি স্বরূপ মনে হচ্ছে। 

ইন্টার ন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের বাংলাদেশ আবাসিক কর্মসূচি পরিচালক ড. জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড আলোকপাত করেন পরবর্তী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে। তিনি বলেন,  ট্রাম্পের পররাষ্টনীতি খুব একটা স্পষ্ট ছিলোনা। তবে বাইডেন ভিন্ন পথে হাঁটবেন। সবকিছুতে শত্রুতা মনোভাব না নিয়ে কিছু বিষয়ে যে সবার সমান সুবিধা থাকতে পারে তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে পুনরায় কিছু চুক্তি হতে পারে। তবে ট্রাম্পের চীন নীতি সম্ভবত বাইডেনের ক্ষেত্রেও একই থাকবে। 

ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যুক্তরাষ্ট্রে ইলেনয় ইউনিভার্সিটির পলিটিকস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাইডেন নির্বাচিত হলে যে খুব বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে তেমনটা নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্র তার যে সাধারণ নীতি থেকে সরে গিয়েছিলো, বাইডেন হয়তো তা আবারও প্রতিষ্ঠিত করবেন। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী রিপাবলিকানদের নীতি কেমন হবে। তারা কি আবার পুরনো রীতি-নীতি গ্রহণ করবে নাকি “ট্রাম্পিজম”-  এ থাকবে?

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত