সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে প্রাথমিকের ২২, মাধ্যমিকের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৫:২২, ১৮ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৫:২৩, ১৮ অক্টোবর ২০২১

৪৯১

শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে প্রাথমিকের ২২, মাধ্যমিকের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী

করোনা মহামারীর কারণে দেশব্যাপী দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এর প্রভাবে গত ছয় মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও অবনতি হয়েছে। সম্প্রতি দেশের গ্রামে এবং শহরের বস্তি এলাকায় করা একটি জরিপে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২২ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল বন্ধ থাকায় লার্নিং লস বা, শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। 

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)’র বিস্তৃত ও বিভিন্ন স্তরবেষ্টিত গবেষণা হলো কোভিড -১৯ লিভলিহুড অ্যান্ড রিকভারি প্যানেল সার্ভে। তারই অংশ হিসেবে এই জরিপ চালানো হয়। এর উদ্দেশ্য ছিলো ২০২১ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কি কি পরিবর্তন এসেছে তা জানা। এরপর একটি শিক্ষণ মডিউল তৈরি করা হয়। প্রথমটি করা হয় ২০২১ এর মার্চে, পরেরটি একই বছরের আগস্টে। গবেষণার এই সময়কালটুকু পুনরায় স্কুল খোলার যে বাস্তবতা, সে ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। 

জরিপে উঠে এসেছে, অনেক শিক্ষার্থী নিজে নিজেই পড়াশোনা করে, কেউ কেউ অনিয়মিতভাবে পড়াশোনা করে, অথবা একেবারেই পড়াশোনা করে না। গবেষকদের মতে, এমন শিক্ষার্থীরাই আছে শিক্ষণ ঘাটতি বা, লার্নিং লসের ঝুঁকিতে। 

গ্রাম এবং শহুরে বস্তি এলাকায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষণ ঘাটতি বা, লার্নিং লসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। লার্নিং লস বা, শিক্ষণ ঘাটতির এই প্রবণতা আবার মাধ্যমিকে পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। মার্চে তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি ২৬ শতাংশে থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়। 

দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন ও সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীরা মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ এবং ৪৩ শতাংশ।

 আগের মতো সবকিছু চালু হওয়ায় ও জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দেয়ার কারণে মার্চের তুলনায় পরবর্তীতে শিক্ষাখাতে পরিবার থেকে সহায়তার হারও কমেছে। বিশেষত, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। অবশ্য আগস্টে সরাসরি যোগাযোগ করে বা, সরাসরি যোগাযোগ না করে- এই দুই পদ্ধতির মিশ্রণে অ্যাসাইনমেন্ট করার ব্যাপারটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। আগস্টে ১৮ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৩৮ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ তেমন না থাকলেও  অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় যোগাযোগ হতো। 

পিপিআরসি- বিআইজিডি’র গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষণ ঘাটতি বা, লার্নিং লসের এই সমস্যার পেছনে আর্থ-সামাজিক অসমতার একটি ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় প্রথমে একজন শিক্ষার্থীর লার্নিং লসের সঙ্গে তার মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক দেখা হয়। যেমন, যে মায়েরা কখনও স্কুলে যাননি, তাদের সন্তানরা শিক্ষিত মায়েদের সন্তানদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, গৃহশিক্ষক কিংবা কোচিং সুবিধা করোনা মহামারীর আগেও পেয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মহামারী চলাকালীনও সেই সুযোগ পেয়েছে। তৃতীয়ত, গ্রামে ৪৪ শতাংশ পরিবারে এবং শহরের বস্তিতে ৩৬ শতাংশ পরিবারে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে উপকরণ দরকার, তার ব্যবস্থা নেই। চতুর্থত, ৮ শতাংশের বেশি স্কুলগামী শিক্ষার্থী উভয় সময়েই উপার্জনের জন্য কাজ করেছে। দেখা যাচ্ছে, মহামারী দেশের শিক্ষায় যে বৈষম্য তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যদিও এদেশে ব্যাপারটি আগে থেকেই একটি বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল।

মহামারী এবং এর ফলে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ১৫ শতাংশেরও বেশি পরিবার জানিয়েছে, মহামারীর শুরু থেকেই স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগছে। বাবা-মায়েরা জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধ থাকাকালীন সন্তানদের আচরণ তুলনামূলক বেশি অসহনশীল, খিটমিটে এবং রাগান্বিত ছিলো। এই হার মার্চে ৩৬ শতাংশ থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। 

সোমবার (১৮ অক্টোবর) পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইমরান মতিন এক ওয়েবিনারে গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করেন। ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, করোনায় আর্থিক ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মত মানব সম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র স্কুল খুললে লার্নিং লস এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করা যাবে না।

অন্যদিকে ডক্টর ইমরান মতিন মনে করেন, শিক্ষাখাতে জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা দরকার। একইসাথে এই খাতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানও প্রয়োজন। লার্নিং লস বা, শিক্ষণ ঘাটতি এবং মানসিক চাপ প্রতিরোধ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখনকার অবস্থাকে জরুরী হিসেবে না দেখলে দীর্ঘমেয়াদে আগামি বছরগুলোর উন্নয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।” 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত