মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১০:২৭, ১ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১০:২৭, ১ জুলাই ২০২১

৪৩৯

গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এই প্রতিষ্ঠানের। তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরাধীন দেশে এবং রাজকীয় ক্ষতিপূরণ হিসাবে পশ্চাৎপদ এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে নিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ১৬ মাস ধরে বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে এমন দিনেও আজ জাঁকজমকপূর্ণ কোনো কর্মসূচি আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে শতবর্ষ পূর্তির মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে অগ্রবর্তী অনুষ্ঠান।

আগামী নভেম্বর মাসে শতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতা উদযাপনের সিদ্ধান্ত আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা আছে। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। 

৩ অনুষদ, ১২ বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ শিক্ষার্থী এবং ৩ আবাসিক হল নিয়ে ১৯২১ সালের ১ জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ১৩ অনুষদ, ৮৪ বিভাগ, ১৩ ইনস্টিটিউট, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত মান বজায় রাখার কারণেই প্রতিষ্ঠানটি অভিধা পেয়েছে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে। পাশাপাশি এটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দায়িত্বও পালন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চালুর ২৬ বছরের মধ্যে ব্রিটিশদের কবল থেকে উপমহাদেশ মুক্ত হয়। সৃষ্টি হয় পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্র। সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র জাতিসত্তা সৃষ্টির আন্দোলনে নিবেদিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, দেশ স্বাধীন এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ গঠন ও পরিচালনায় যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের ৫০ বছর ধরে তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে গৃহীত পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ, বাঙালির মুক্তির সনদখ্যাত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি আদায়, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভূমিকা ছিল।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের পর আশির দশকে জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পরে এরশাদবিরোধী আন্দোলন সূচিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সঠিকপথে রাখতে ছোটখাটো আন্দোলন আর একাডেমিক সমালোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বীজ বপন হয়েছিল ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনার মধ্য দিয়ে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে যে আলাদা রাজ্য গঠিত হয়েছিল, তা এ অঞ্চলের মুসলিমপ্রধান জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আশা ও চাওয়া–পাওয়ারই বাস্তব প্রতিফলন। 

এটা এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এবং সর্বোপরি তাদের স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ছিল। কিন্তু নান বিরোধিতার মুখে ইংরেজ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, যা বঙ্গভঙ্গ রদ নামে পরিচিত।

বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয় সর্বপ্রথম ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি।

ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকা পরিদর্শনকালে এই দাবি তোলা হয়। সেই সময়ে পূর্ব বাংলায় ৯টি কলেজ থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। পরে এই অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবিকে সম্মান জানিয়ে লর্ড কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনে সম্মতি দেন এবং তার ফলে একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রাজ্য সরকার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সপক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৪ এপ্রিল বাংলার রাজ্য সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়। এ লক্ষ্যে ২৭ মে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয় স্যার রবার্ট নাথানিয়েলের নেতৃত্বে, যা ‘নাথান কমিটি’ নামে পরিচিত। এ কমিটি দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট প্রদান করে ১৯১২ সালের শেষ দিকে।

১৯১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নিবন্ধনের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি বিল উত্থাপিত হয়। পরে এটি পাস হয় ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯২০’ নামে, যার অধীনে পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬০০ একর জমি দান করেন স্যার সলিমুল্লাহ।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত