শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ফুটবল যাকে সব দিয়েছে, তিনিও দিয়েছেন সব-ই

স্পোর্টস ডেস্ক

২৩:৩৯, ২৫ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৩:৫৫, ২৯ নভেম্বর ২০২০

১৮৭০

ফুটবল যাকে সব দিয়েছে, তিনিও দিয়েছেন সব-ই

৯০ এর দশকে ফুটবল ভক্তরা কেবল একটি নাম জপেছে, দিয়োগো ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপ এলেই যে বাংলাদেশের কোটি ভক্ত কিনেন লাতিন দেশ আর্জেন্টিনার জার্সি, ছাদে ছাদে লাগানো হয় আকাশী-নীল পতাকা, পুরো ঘর রাঙানো হয় আর্জেন্টাইন পতাকার রঙে তার পুরো কৃতিত্বই ফুটবল রাজপুত্রের।

ডান পা-বাম পা দু’পায়েই সমান দক্ষ এই ফুটবলার অবিস্মরনীয় হয়ে আছেন দলকে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জিতিয়ে। ভক্তরা এতটাই মজে ছিল তার ফুটবলে যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার হাত দিয়ে করা গোলকে পাপ না বলে বলা হয়েছিল সেটা ঈশ্বরের হাত। মাঝমাঠ থেকে ৬ ফুটবলারকে কাটিয়ে তার গোলটিকে বলা হতো শতাব্দির সেরা গোল। এছাড়াও আছে তার হাজারো কীর্তি। তাইতো ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডোপ টেস্ট বা তার পরে মাদক নিয়ে হাজারও ঘটনার পরও ছিলেন কোটি কোটি ভক্তের নয়নমনি।   

এখনও মেসি, দিবালা কিংবা মার্টিনেজরা মাঠে নামলে যে উচ্ছ্বাস শুনতে পান তার সূচনাও মূলত এই কিংবদন্তির হাত ধরে। 

 ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেসের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। ম্যারাডোনা হলেন ‘চিতরো’ দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং ‘দোনা তোতা’ দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর পঞ্চম সন্তান।

** কিংবদন্তির জন্য ফুটবল বিশ্বের শ্রদ্ধা

মাত্র ১০ বছর বয়সে এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলার সময় তাকে খুঁজে বের করেন একজন স্কাউট। পরে দ্য লিটল অনিঅনের (আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দল) একজন মূল খেলোয়াড়ে পরিণত হন ম্যারোডোনা। 

১২ বছর বয়সে বল-বয় হিসেবে, প্রথম বিভাগের খেলার অর্ধ বিরতির সময় বল দিয়ে জাদুকরি কারুকার্য দেখিয়ে তিনি দর্শকদের মন মাতাতেন। কে জানতো এই ছেলেই একদিন মাঠেও দেখাবেন এমন জাদু!

ক্লাব ক্যারিয়ার

নিজের ১৬তম জন্মদিন তথা ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ‍সিনিয়র পর্যায়ে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। সেখানে ১৯৮১ পর্যন্ত ১৬৭ ম্যাচে ১১৫ গোল করেন তিনি। তারপর দলবদলের তৎকালী রেকর্ড ১ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে দলে ভেড়ায় বোকা জুনিয়র্স। প্রথম বছরেই দলকে জেতান লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ।

১৯৮২ বিশ্বকাপের পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন এই ফুটবল কিংবদন্তী। মাত্র দুই বছরে বার্সাকে তিনটি শিরোপা উপহার দেন ম্যারাডোনা। তবে ক্লাব প্রেসিডেন্টের সাথে ঘনঘন বিতর্কের জেরে ১৯৮৪ সালেই ছাড়েন ক্লাব। এখানে ৫৮ ম্যাচ খেলে করেন ৩৮ গোল।

বার্সা থেকে দলবদলের আরেক রেকর্ড ৬.৯ মিলিয়ন ইউরোতে ইতালিয়ান ক্লাব সিরি-আতে নাম লেখান ফুটবলের রাজপুত্র। এখানেই নিজের সেরা সময় কাটিয়েছেন তিনি। 

নাপোলিতে খুব দ্রুত ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ম্যারাডোনা। আর সে সময়টি ছিল নাপোলির ইতিহাসের সফলতম যুগ। তার অধীনে দলটি ১৯৮৬–৮৭ ও ১৯৮৯–৯০ মৌসুমে সিরি-আ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ১৯৮৭–৮৮ ও ১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে রানার-আপ হয়। এছাড়া ম্যারাডোনার সময়ে নাপোলি একবার কোপা ইতালিয়া জিতে (১৯৮৭) এবং একবার রানার-আপ (১৯৮৯) হয় এবং ১৯৯০ সালে ইতালীয় সুপার কাপ জিতে। ১৯৮৭–৮৮ মৌসুমে সিরি-আ সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন এই মহাতারকা। 

তবে ইতালিতে থাকাকালে ম্যারাডোনার মাদক সমস্যা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এর জের ধরে ম্যারাডোনা ক্লাব ছেড়ে গেলেও তার সম্মানে নাপোলি আজীবনের জন্য ১০ নাম্বার জার্সি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য ফিফার নিয়মের কারণে আবার চালু করতে হয়।

ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ১৯৯২ সালে নাপোলি ছাড়েন ম্যারাডোনা। যোগ দেন স্পেনিশ ক্লাব সেভিয়াতে। সেখানে এক বছর থেকে ১৯৯৩ সালে যোগ দেন নিউওয়েলস ও্ল্ড বয়েজে। ১৯৯৫ সালে আবারও ফিরে আসেন বোকা জুনিয়র্সে। এবং এখানেই তার ক্লাব ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বর্ণনা করতে মাত্র একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি ফিফা অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ ও ফিফা বিশ্বকাপ জেতেন এবং উভয় প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন বল অর্থাৎ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন। 

১৯৯৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। ১৯৭৯ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩–১ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৭৯ সালের ২ জুন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ম্যারাডোন।

জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮২,১৯৮৬,১৯৯০, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে অংশ নেন ম্যারাডোনা। তারমাঝে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হন এবং ১৯৯০ বিশ্বকাপে হন রানার-আপ। জাতীয় দলে হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলারের তালিকায় তার স্থান দশম।

এছাড়া ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বও পালন করেন ম্যারাডোনা।

 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank